ঢাকা ১২:৩২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জিলবাংলা সুগার মিল : বেড়েছে আখের উৎপাদন, বাড়বে চিনি উৎপাদনও

জিল বাংলা সুগার মিলের আওতাধীন এলাকায় আখের উৎপাদন ভালো হয়েছে। ছবি : বাংলারচিঠিডটকম

আখের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় এ বছর জিল বাংলা সুগার মিলের আওতাধীন এলাকায় আখের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। বিগত কয়েক বছরের তুলনায় এ বছর বিপুল পরিমাণ আখ মাড়াই করা যাবে বলে মিল কর্তৃপক্ষ আশা প্রকাশ করেছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালে সারা দেশের ছয়টি সুগার মিল বন্ধ করে দেয় তৎকালীন আওয়ামী লীগ দলীয় শেখ হাসিনার সরকার। বাকি নয়টি মিল চালু রাখলেও সমস্ত উপকরণ সার, বীজ, কীটনাশকসহ সব উপকরণ বন্ধ করে দেয় সরকার। এতে আখচাষীদের মনোবল ভেঙে যায়। সে সময় আখচাষীরা মিল থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন।

ফলশ্রুতিতে পরবর্তীতে কয়েক বছর আখের উৎপাদন একেবারেই কমে যায়। মিল কর্তৃপক্ষের অক্লান্ত পরিশ্রম ও নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে বর্তমানে আখের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। এ বছর ৬০ হাজার মেট্রিক টন আখ মাড়াই করে চার হাজার ২০০ মেট্রিক টন চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

গত বছর ৪৫ হাজার মেট্রিক টন আখ মাড়াই করে ২ হাজার ৭১৭ মেট্রিক টন চিনি উৎপাদন করা হয়। ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে ৩৫ হাজার মেট্রিক টন আঁখ মাড়াই হয়। গত দু’বছরে আখের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় দ্বিগুণ। আখের মূল্যও আগের চেয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে প্রতি মণ আখ ২৪০ টাকা। গত বছর মূল্য ছিল ২২০ টাকা। এ বছর আখের মূল্য মণপ্রতি ২০ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে ১৬ কুইন্টাল আখের মূল্য নয় হাজার ৬০০ টাকা। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে গত বছরের তুলনায় এই মাড়াই মৌসুমে ১৫ মেট্রিক টন বেশি চিনি উৎপাদন হবে। এবার ৫২ কোটি ৫০ লাখ টাকার চিনি বিক্রি হতে পারে বলে প্রত্যাশা করছেন মিল কর্তৃপক্ষ।

আখচাষীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, আখের মূল্য বৃদ্ধি সার, বীজ, কীটনাশকসহ অন্যান্য উপকরণ সামগ্রী যথাসময়ে সরবরাহ করায় তারা আখের উৎপাদনে আগ্রহী হয়ে উঠছেন।

বাহাদুরাবাদ ইউনিয়নের আখ চাষী আনারুল ইসলাম জানান, আমি জীবনে কোনদিন আখের চাষ করিনি। আখের মূল্য বৃদ্ধি করায় এবার আখ রোপণ করেছি। আশা করছি ভালো টাকা হাতে পাব। তার দাবি অন্যান্য ফসল বছরে দু-তিনটি করা সম্ভব হয়। কিন্তু আখের চাষ একবার করা যায়। সে তুলনায় আখের মূল্য আরও বৃদ্ধি করা দরকার না হলে মানুষ অন্য ফসলের দিকে ধাবিত হবে।

একই গ্রামের আখচাষী ওয়াজকুরুনী জানান, আখের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে শুনে এবার প্রথম আখের চাষ করেছি। আমার তিন বিঘা মাটির আখ রয়েছে। আশা করি ভালো টাকা পাব।

কান্দীর গ্রামের মৃত আব্দুল কাদেরের স্ত্রী মুর্শেদা বেগম জানান, তিনি প্রতি বছর ১০-১৫ বিঘা জমিতে আখ রোপণ করেন। অন্যান্য ফসলের অনেক ঝামেলা। আখের চাষ করলে একসাথে টাকা হাতে আসে। সেই মোটা অংকের টাকা দিয়ে সংসারের অন্য কাজে লাগানো যায়। ঐতিহ্যগতভাবেই আখ চাষকে ধরে রেখেছেন তিনি।

জিল বাংলা সুগার মিলের সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) মো. আলাউদ্দিন বাংলারচিঠিডটকমকে বলেন, লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হলে যে অর্জন হয় সেটা অর্জিত হবে আখ রোপণে। কৃষকদের আগ্রহ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। কৃষকদের বিভিন্ন উপকরণ সামগ্রী এবং ভর্তুকি আগের চেয়ে বৃদ্ধি করা হয়েছে। আশা করছি এই মাড়াই মৌসুমে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে।

জিল বাংলা সুগার মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. মোশাররফ হোসেন বাংলারচিঠিডটকমকে বলেন, আসছে ৬ ডিসেম্বর মিল চালু হবে। ৭০ দিনের মত মিল চলবে। আগামী দিনে উৎপাদন আরও বাড়িয়ে এই মিলকে লাভজনক করা সম্ভব হবে। মিল যদি ১০০ থেকে ১২০ দিন চালানো যায় তবে মিলকে লাভজনক করা সম্ভব হবে।

জনপ্রিয় সংবাদ

জিলবাংলা সুগার মিল : বেড়েছে আখের উৎপাদন, বাড়বে চিনি উৎপাদনও

আপডেট সময় ১০:২৭:০৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩ ডিসেম্বর ২০২৪

আখের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় এ বছর জিল বাংলা সুগার মিলের আওতাধীন এলাকায় আখের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। বিগত কয়েক বছরের তুলনায় এ বছর বিপুল পরিমাণ আখ মাড়াই করা যাবে বলে মিল কর্তৃপক্ষ আশা প্রকাশ করেছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালে সারা দেশের ছয়টি সুগার মিল বন্ধ করে দেয় তৎকালীন আওয়ামী লীগ দলীয় শেখ হাসিনার সরকার। বাকি নয়টি মিল চালু রাখলেও সমস্ত উপকরণ সার, বীজ, কীটনাশকসহ সব উপকরণ বন্ধ করে দেয় সরকার। এতে আখচাষীদের মনোবল ভেঙে যায়। সে সময় আখচাষীরা মিল থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন।

ফলশ্রুতিতে পরবর্তীতে কয়েক বছর আখের উৎপাদন একেবারেই কমে যায়। মিল কর্তৃপক্ষের অক্লান্ত পরিশ্রম ও নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে বর্তমানে আখের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। এ বছর ৬০ হাজার মেট্রিক টন আখ মাড়াই করে চার হাজার ২০০ মেট্রিক টন চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

গত বছর ৪৫ হাজার মেট্রিক টন আখ মাড়াই করে ২ হাজার ৭১৭ মেট্রিক টন চিনি উৎপাদন করা হয়। ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে ৩৫ হাজার মেট্রিক টন আঁখ মাড়াই হয়। গত দু’বছরে আখের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় দ্বিগুণ। আখের মূল্যও আগের চেয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে প্রতি মণ আখ ২৪০ টাকা। গত বছর মূল্য ছিল ২২০ টাকা। এ বছর আখের মূল্য মণপ্রতি ২০ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে ১৬ কুইন্টাল আখের মূল্য নয় হাজার ৬০০ টাকা। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে গত বছরের তুলনায় এই মাড়াই মৌসুমে ১৫ মেট্রিক টন বেশি চিনি উৎপাদন হবে। এবার ৫২ কোটি ৫০ লাখ টাকার চিনি বিক্রি হতে পারে বলে প্রত্যাশা করছেন মিল কর্তৃপক্ষ।

আখচাষীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, আখের মূল্য বৃদ্ধি সার, বীজ, কীটনাশকসহ অন্যান্য উপকরণ সামগ্রী যথাসময়ে সরবরাহ করায় তারা আখের উৎপাদনে আগ্রহী হয়ে উঠছেন।

বাহাদুরাবাদ ইউনিয়নের আখ চাষী আনারুল ইসলাম জানান, আমি জীবনে কোনদিন আখের চাষ করিনি। আখের মূল্য বৃদ্ধি করায় এবার আখ রোপণ করেছি। আশা করছি ভালো টাকা হাতে পাব। তার দাবি অন্যান্য ফসল বছরে দু-তিনটি করা সম্ভব হয়। কিন্তু আখের চাষ একবার করা যায়। সে তুলনায় আখের মূল্য আরও বৃদ্ধি করা দরকার না হলে মানুষ অন্য ফসলের দিকে ধাবিত হবে।

একই গ্রামের আখচাষী ওয়াজকুরুনী জানান, আখের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে শুনে এবার প্রথম আখের চাষ করেছি। আমার তিন বিঘা মাটির আখ রয়েছে। আশা করি ভালো টাকা পাব।

কান্দীর গ্রামের মৃত আব্দুল কাদেরের স্ত্রী মুর্শেদা বেগম জানান, তিনি প্রতি বছর ১০-১৫ বিঘা জমিতে আখ রোপণ করেন। অন্যান্য ফসলের অনেক ঝামেলা। আখের চাষ করলে একসাথে টাকা হাতে আসে। সেই মোটা অংকের টাকা দিয়ে সংসারের অন্য কাজে লাগানো যায়। ঐতিহ্যগতভাবেই আখ চাষকে ধরে রেখেছেন তিনি।

জিল বাংলা সুগার মিলের সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) মো. আলাউদ্দিন বাংলারচিঠিডটকমকে বলেন, লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হলে যে অর্জন হয় সেটা অর্জিত হবে আখ রোপণে। কৃষকদের আগ্রহ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। কৃষকদের বিভিন্ন উপকরণ সামগ্রী এবং ভর্তুকি আগের চেয়ে বৃদ্ধি করা হয়েছে। আশা করছি এই মাড়াই মৌসুমে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে।

জিল বাংলা সুগার মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. মোশাররফ হোসেন বাংলারচিঠিডটকমকে বলেন, আসছে ৬ ডিসেম্বর মিল চালু হবে। ৭০ দিনের মত মিল চলবে। আগামী দিনে উৎপাদন আরও বাড়িয়ে এই মিলকে লাভজনক করা সম্ভব হবে। মিল যদি ১০০ থেকে ১২০ দিন চালানো যায় তবে মিলকে লাভজনক করা সম্ভব হবে।