ঢাকা ০৯:১০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মাদকের বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ জরুরি

‘মাদকাসক্তি’ নামক এই ছোট অথচ ভয়ংকর শব্দটি বর্তমান বিশ্বে বিশেষ করে যুবসমাজের জন্য আরও ভয়ংকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। আদিকাল থেকেই মানুষ এই নেশার জালে আচ্ছন্ন হয়ে আছে। মাদকদ্রব্য এমন একটি দ্রব্য, যা সেবন করলে সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ অল্প সময়ের মধ্যে বিকৃত মস্তিষ্কের মানুষে পরিণত হয়ে যেতে পারেন এবং তার স্থায়িত্ব যতক্ষণ পর্যন্ত ওই দ্রব্যের নেশা দেহের মধ্যে থাকে, ততক্ষণ পর্যন্ত থাকে। বিষ সেবন আর মাদক সেবন একই কথা। এ ধরনের দ্রব্য ব্যবহারের ফলে শারীরিক ও মানসিকভাবে প্রভাব ফেলে। তার জীবনে নেমে আসে দুর্দিন এবং নেমে আসে অন্ধকার।

মাদকাসক্তি হচ্ছে মূলত বিভিন্ন নেশার দ্রব্যের প্রতি আসক্তি। নেশা ক্ষণিকের জন্য মনের যন্ত্রণা লাঘব করে, সকল বেদনা থেকে রেহাই পেতে সাহায্য করে। এক বিশেষ আনন্দলোকে মনকে আবদ্ধ রাখে-মানুষের বাস্তব চেতনাকে অবলুপ্ত করে তাকে নিয়ে যায় স্বতন্ত্র জগতে- এসব বিশ্বাস থেকেই মাদকাসক্তির বিকাশ।

মাদকাসক্তির ক্ষতিকর অনেক দিক রয়েছে। সাম্প্রতিক কালে মাদকাসক্তির প্রভাবে বহুলোকের বিশেষত যুবসমাজের ধ্বংস নেমে এসেছে, শুরু হয়েছে এক ভয়াবহ অবক্ষয়ের। মাদকাসক্তি দেহের নানারকম ক্ষতি সাধন করে। ক্ষতির কাজটি সূক্ষ্মভাবে চলে বলে এর প্রতিরোধ গড়ে তোলা মাদকাসক্ত ব্যক্তির পক্ষে কঠিন। মানুষের কেন্দ্রীয় স্নায়ুতে প্রতিক্রিয়া শুরু হয়ে সারা দেহে অক্ষমতা বৃদ্ধি করে। মানসিক ভারসাম্যহীনতা তৈরি হয়। বিভিন্ন চেতনা বিনষ্ট হয়, দেহের মাংসপেশির কম্পন ও মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। মাদকাসক্তির ফলে মেধা বিনষ্ট হয়, নেশায় রোগাক্রান্ত হয়, নেশাগ্রস্ত ব্যক্তির ব্যক্তিত্বের অবলুপ্তি ঘটে এবং স্বাভাবিক বেঁচে থাকার সামর্থ্য হারিয়ে যায়। কোন কাজ বা দায়িত্ব পালন মাদকাসক্তের পক্ষে সম্ভব নয়। ফলে মাদকাসক্তির পরিণাম হিসাবে ব্যক্তি জীবনে আসে ব্যর্থতা এবং জাতীয় জীবনে আসে সর্বনাশ।

মাদকাসক্তির প্রভাব ব্যাপকভাবে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। যা জাতির জন্য আতংকের কারণ হয়ে উঠেছে। যা জাতিকে সীমাহীন অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। বিশেষ করে যুবসমাজ ক্রমেই নেশার দিকে ধাবিত হচ্ছে। তার মূল কারণ শিক্ষা জীবনের অনিশ্চয়তা, বেকারত্ব, দরিদ্রতা। এসব কারণে তারা নেশায় অভ্যস্ত হয়ে শুধু নিজেরই ক্ষতি করছে না জাতীয় জীবনে ভয়াবহ সর্বনাশ ডেকে আনছে। বিভিন্ন অন্যায় ও অসামাজিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হচ্ছে। অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। মাদক দ্রব্যের দাম বেশি হওয়ায় অবৈধ উপার্জনে তৎপর হচ্ছে। এতে করে সমাজ জীবনে সবসময় অঘটন ঘটেই চলছে। বাংলাদেশেও আশঙ্কাজনক হারে মাদক দ্রব্য ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমাদের যুবসমাজ ব্যাপকভাবে মাদকাসক্তির শিকার। বাংলাদেশে কি পরিমাণ মাদক দ্রব্য ব্যবহার করা হয় এবং কত লোক মাদকাসক্ত তার সঠিক কোন পরিসংখ্যান এখনও নেই। তবে ২০২১ সালের এক প্রতিবেদনে দেখা যায় ১৬-৪০ বছর বয়সীদের প্রায় ৮৪.২৭ শতাংশ মানুষ মাদকাসক্ত।

বর্তমান বিশ্বে বিভিন্ন ধরনের মাদক দ্রব্য চালু রয়েছে। মদ, গাঁজা, ভাং, আফিম ইত্যাদি অনেক প্রাচীনকালের। বর্তমানে হেরোইন, মারিজুয়ানা, এলএসডি, হাসিস, কোকেন, প্যাথিড্রিন, ফেনসিডিল ইত্যাদি। এসব মাদক দ্রব্য বিভিন্নভাবে গ্রহণ করা হয়।

মাদকাসক্তির ভয়াবহ পরিণাম থেকে বর্তমান সময়ে মানুষকে বাঁচাতে হলে এই ভয়াল ব্যাধির বিরুদ্ধে সমন্বিত প্রচেষ্টা চালাতে হবে। যেহেতু তরুণরাই এ পথে সহজে পা বাড়ায়, সেজন্য তারুণ্যের সমস্যাগুলো অনুধাবন করে তার সমাধানে উদ্যোগী হতে হবে। বেকারত্বের অভিশাপ মানুষকে মাদকাসক্ত করে, তরুণদের কর্মসংস্থান করলে তারা কর্মময় জীবনযাপন করবে। শিক্ষার যথার্থ প্রসার ঘটাতে হবে যাতে নৈতিক জ্ঞান অর্জিত হবে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে সমস্যাটি গুরুতর। কারণ দেশে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর থাকলেও জনগণ তার অস্তিত্ব টের পায় না। সবচেয়ে বড় কথা, মাদকাসক্তদের যেমন নিরাময়ে চিকিৎসা জরুরি, তার থেকে বেশি জরুরি হওয়া উচিত মাদক ব্যবসায়ীদের আইনানুগভাবে শাস্তি দেওয়া। যুবসমাজকে ভয়ংকর মাদকাসক্তি থেকে ফিরাতে সরকারের যথাযথ পদক্ষেপ জরুরি।

লেখক : মো. রবিন ইসলাম
শিক্ষার্থী, বাংলা বিভাগ, ঢাকা কলেজ

জনপ্রিয় সংবাদ

মাদকের বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ জরুরি

আপডেট সময় ১২:২৪:২৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪

‘মাদকাসক্তি’ নামক এই ছোট অথচ ভয়ংকর শব্দটি বর্তমান বিশ্বে বিশেষ করে যুবসমাজের জন্য আরও ভয়ংকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। আদিকাল থেকেই মানুষ এই নেশার জালে আচ্ছন্ন হয়ে আছে। মাদকদ্রব্য এমন একটি দ্রব্য, যা সেবন করলে সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ অল্প সময়ের মধ্যে বিকৃত মস্তিষ্কের মানুষে পরিণত হয়ে যেতে পারেন এবং তার স্থায়িত্ব যতক্ষণ পর্যন্ত ওই দ্রব্যের নেশা দেহের মধ্যে থাকে, ততক্ষণ পর্যন্ত থাকে। বিষ সেবন আর মাদক সেবন একই কথা। এ ধরনের দ্রব্য ব্যবহারের ফলে শারীরিক ও মানসিকভাবে প্রভাব ফেলে। তার জীবনে নেমে আসে দুর্দিন এবং নেমে আসে অন্ধকার।

মাদকাসক্তি হচ্ছে মূলত বিভিন্ন নেশার দ্রব্যের প্রতি আসক্তি। নেশা ক্ষণিকের জন্য মনের যন্ত্রণা লাঘব করে, সকল বেদনা থেকে রেহাই পেতে সাহায্য করে। এক বিশেষ আনন্দলোকে মনকে আবদ্ধ রাখে-মানুষের বাস্তব চেতনাকে অবলুপ্ত করে তাকে নিয়ে যায় স্বতন্ত্র জগতে- এসব বিশ্বাস থেকেই মাদকাসক্তির বিকাশ।

মাদকাসক্তির ক্ষতিকর অনেক দিক রয়েছে। সাম্প্রতিক কালে মাদকাসক্তির প্রভাবে বহুলোকের বিশেষত যুবসমাজের ধ্বংস নেমে এসেছে, শুরু হয়েছে এক ভয়াবহ অবক্ষয়ের। মাদকাসক্তি দেহের নানারকম ক্ষতি সাধন করে। ক্ষতির কাজটি সূক্ষ্মভাবে চলে বলে এর প্রতিরোধ গড়ে তোলা মাদকাসক্ত ব্যক্তির পক্ষে কঠিন। মানুষের কেন্দ্রীয় স্নায়ুতে প্রতিক্রিয়া শুরু হয়ে সারা দেহে অক্ষমতা বৃদ্ধি করে। মানসিক ভারসাম্যহীনতা তৈরি হয়। বিভিন্ন চেতনা বিনষ্ট হয়, দেহের মাংসপেশির কম্পন ও মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। মাদকাসক্তির ফলে মেধা বিনষ্ট হয়, নেশায় রোগাক্রান্ত হয়, নেশাগ্রস্ত ব্যক্তির ব্যক্তিত্বের অবলুপ্তি ঘটে এবং স্বাভাবিক বেঁচে থাকার সামর্থ্য হারিয়ে যায়। কোন কাজ বা দায়িত্ব পালন মাদকাসক্তের পক্ষে সম্ভব নয়। ফলে মাদকাসক্তির পরিণাম হিসাবে ব্যক্তি জীবনে আসে ব্যর্থতা এবং জাতীয় জীবনে আসে সর্বনাশ।

মাদকাসক্তির প্রভাব ব্যাপকভাবে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। যা জাতির জন্য আতংকের কারণ হয়ে উঠেছে। যা জাতিকে সীমাহীন অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। বিশেষ করে যুবসমাজ ক্রমেই নেশার দিকে ধাবিত হচ্ছে। তার মূল কারণ শিক্ষা জীবনের অনিশ্চয়তা, বেকারত্ব, দরিদ্রতা। এসব কারণে তারা নেশায় অভ্যস্ত হয়ে শুধু নিজেরই ক্ষতি করছে না জাতীয় জীবনে ভয়াবহ সর্বনাশ ডেকে আনছে। বিভিন্ন অন্যায় ও অসামাজিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হচ্ছে। অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। মাদক দ্রব্যের দাম বেশি হওয়ায় অবৈধ উপার্জনে তৎপর হচ্ছে। এতে করে সমাজ জীবনে সবসময় অঘটন ঘটেই চলছে। বাংলাদেশেও আশঙ্কাজনক হারে মাদক দ্রব্য ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমাদের যুবসমাজ ব্যাপকভাবে মাদকাসক্তির শিকার। বাংলাদেশে কি পরিমাণ মাদক দ্রব্য ব্যবহার করা হয় এবং কত লোক মাদকাসক্ত তার সঠিক কোন পরিসংখ্যান এখনও নেই। তবে ২০২১ সালের এক প্রতিবেদনে দেখা যায় ১৬-৪০ বছর বয়সীদের প্রায় ৮৪.২৭ শতাংশ মানুষ মাদকাসক্ত।

বর্তমান বিশ্বে বিভিন্ন ধরনের মাদক দ্রব্য চালু রয়েছে। মদ, গাঁজা, ভাং, আফিম ইত্যাদি অনেক প্রাচীনকালের। বর্তমানে হেরোইন, মারিজুয়ানা, এলএসডি, হাসিস, কোকেন, প্যাথিড্রিন, ফেনসিডিল ইত্যাদি। এসব মাদক দ্রব্য বিভিন্নভাবে গ্রহণ করা হয়।

মাদকাসক্তির ভয়াবহ পরিণাম থেকে বর্তমান সময়ে মানুষকে বাঁচাতে হলে এই ভয়াল ব্যাধির বিরুদ্ধে সমন্বিত প্রচেষ্টা চালাতে হবে। যেহেতু তরুণরাই এ পথে সহজে পা বাড়ায়, সেজন্য তারুণ্যের সমস্যাগুলো অনুধাবন করে তার সমাধানে উদ্যোগী হতে হবে। বেকারত্বের অভিশাপ মানুষকে মাদকাসক্ত করে, তরুণদের কর্মসংস্থান করলে তারা কর্মময় জীবনযাপন করবে। শিক্ষার যথার্থ প্রসার ঘটাতে হবে যাতে নৈতিক জ্ঞান অর্জিত হবে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে সমস্যাটি গুরুতর। কারণ দেশে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর থাকলেও জনগণ তার অস্তিত্ব টের পায় না। সবচেয়ে বড় কথা, মাদকাসক্তদের যেমন নিরাময়ে চিকিৎসা জরুরি, তার থেকে বেশি জরুরি হওয়া উচিত মাদক ব্যবসায়ীদের আইনানুগভাবে শাস্তি দেওয়া। যুবসমাজকে ভয়ংকর মাদকাসক্তি থেকে ফিরাতে সরকারের যথাযথ পদক্ষেপ জরুরি।

লেখক : মো. রবিন ইসলাম
শিক্ষার্থী, বাংলা বিভাগ, ঢাকা কলেজ