জামালপুরের জনস্বাস্থ্য ও স্যানিটেশনের দুরাবস্থা থেকে আধুনিক ও মানসম্মত পয়ঃনিষ্কাশন ও পানীয়জলের সুব্যবস্থা সৃষ্টির ক্ষেত্রে অনন্য সাধারণ ভূমিকা রেখেছে জেলা জনস্বাস্থ্য ও প্রকৌশল অধিদপ্তর। জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ১২টি প্রকল্পে ৩৫০ কোটি টাকা বরাদ্দের কাজ দৃশ্যমান হওয়ায় অনেকটাই বদলে গিয়েছে জামালপুরের গোটা স্যানিটেশন চিত্র। এতে প্রান্তিক পর্যায়ে মানুষের দুর্ভোগ কমে স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশন অভ্যাসের পাশাপাশি খোলা পায়খানামুক্ত জামালপুর গড়ে তোলার কাজে জনসচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে। একই সাথে আর্সেনিকমুক্ত জামালপুর গড়তে এ দপ্তরের নিরন্তর কাজের পাশাপাশি জনসচেতনতা সৃষ্টিতেও অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে বলে সূত্র জানায়। এ জেলায় স্বাস্থ্য, স্যানিটেশন ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের জন্য অসংখ্য প্রকল্প চলমান আছে। অনেক প্রকল্প পাইপলাইনে আছে বলে জানা যায়। জামালপুর জেলা জনস্বাস্থ্য ও প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সুলতান মাহমুদ জানান গত অর্ধদশক সময়ের মধ্যে অতীতের সকল রেকর্ড ভেঙ্গে জামালপুরে ডিপিএইচসি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে।
তিনি বলেন, করোনা মহামারীর সময় ২০২০ সালের ২০ অক্টোবর জামালপুর জেলায় জেলা জনস্বাস্থ্য ও প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী যোগদান করার পর থেকে আমি নিজ জেলা মনে করে দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছি।
একাধিক সূত্র জানায়, তার যোগদানের পর থেকেই উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় জামালপুর জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তর উদাহরণ তৈরি করেছে। ২০২০-২১ অর্থ বছর থেকে চলমান অর্থ বছর পর্যন্ত সমগ্র দেশে নিরাপদ পানি সরবরাহ প্রকল্পে জামালপুর জেলায় সাবমারসিবল পাম্পযুক্ত গভীর নলকূপ এক হাজার ৫৬০টি ও অগভীর নলকূপ ৯৬২টি এবং কমিউনিটি বেজড ওয়াটার সাপ্লাই স্কিম ৩২৯টিতে ৮৩ কোটি ৪৪ লাখ ৭৮ হাজার, ভূমিহীন, গৃহহীনদের জন্য নির্মিতব্য আশ্রয়ণ প্রকল্পের পানি সরবরাহ প্রকল্পের উপজেলাগুলোতে ৬৩৯টি অগভীর নলকূপে ৩ কোটি ৩৫ লাখ ২৪ হাজার, জিপিএস উন্নয়ন প্রকল্পের ১০৭টি ওয়াশ ব্লক নির্মাণে ১৭ কোটি ৩৮ লাখ ৭৫ হাজার ও ১৬১টি পানির উৎস স্থাপনে ২ কোটি ৯৭ লাখ ৯৫ হাজার টাকা, এনএনসিপিএস উন্নয়ন প্রকল্পের ৯২টি ওয়াশ ব্লক নির্মাণ ১২ কোটি ৬৩ লাখ ৫৪ হাজার ও ১৬১টি পানির উৎস স্থাপন এ ২ কোটি ৯৭ লাখ ৯৫ হাজার, পিইডিপি ৪ উন্নয়ন প্রকল্পের ৪৮৪টি ওয়াশ ব্লকে ৮৪ কোটি ৭০ লাখ ও ৮০০টি পানির উৎস স্থাপনে ১৫ কোটি ৬৮ লাখ, রাজস্ব বাজেটের আওতায় পাম্পযুক্ত অগভীর নলকূপে ৪৭ হাজার, পানির গুণগত মান পরীক্ষা ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণ প্রকল্পের একটি ল্যাবরেটরি ভবন নির্মাণ কাজে ৫৩ লাখ ৭৮ হাজার, মানবসম্পদ উন্নয়নে গ্রামীণ পানি সরবরাহ, স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্যবিধি শীর্ষক প্রকল্পের ১৬টি হ্যান্ড ওয়াশিং স্টেশন ও ৩৬টি স্যানিটেশন হাইজিন ফেসিলিটিস এবং ২৮টি সাবমার্স ১০ কোটি ৩৬ লাখ ৮৪ হাজার, ৯৬টি কমিউনিটি বেইজ ওয়াটার সাপ্লাই স্কিম ১৬ কোটি ৭১ লাখ ৫৯ হাজার, ৩১টি স্মল পাইপড ওয়াটার সাপ্লাই স্কিমে ৫ কোটি ৫১ লাখ, সদর, সরিষাবাড়ী , মাদারগঞ্জ ও মেলান্দহ উপজেলায় ৪টি লার্জ পাইপড ওয়াটার সাপ্লাই স্কিমে ২৪ কোটি ৮৩ লাখ ৬৮ হাজার টাকা ব্যয়ে নির্মাণ কাজ শেষ সফল ভাবে শেষ করা হয়।
জামালপুর শহরের পালপাড়া এলাকার কার্তিক সাহা বলেন, জেলা জনস্বাস্থ্য ও প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সুলতান মাহমুদের নির্দেশনায় আমি সাবমার্স পেয়েছি। যা আমার পরিবারের পানির চাহিদা মিটিয়ে এলাকার মানুষদের বিশুদ্ধ পানি সরবরারহ করে থাকি।
শুধু কার্তিক সাহা নয় তার মত মুকন্দবাড়ির শাপলা, ডাকপাড়ার সেকান্দর, শরিফপুরের আলি আহমেদ, নরুন্দির মো. রফিকসহ সকলেই বিশুদ্ধ পানির সরবরাহের সুবিধা পেয়েছে।
এদিকে রাঘুনাথপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলী হায়দার জানান, তার বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ওয়াশ ব্লক স্থাপন করার মাধ্যমে বিদ্যালয়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান ও ল্যাট্রিন ও টয়লেট ব্যবহারে সচেষ্ট হয়ে উঠেছে শিশু শিক্ষার্থীরা যা জেলা জনস্বাস্থ্য ও প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী সুলতান মাহমুদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ও তদারকিতেই হয়েছে বলে জানান তিনি। জেলা জনস্বাস্থ্য ও প্রকৌশল অধিদপ্তরের ডায়নামিক নির্বাহী প্রকৌশলী সুলতান মাহমুদ জামালপুর জেলার আরও উন্নয়ন কার্যাবলী বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ করে যাবেন বলে আশা তাদের।
এছাড়াও ৩২টি পৌরসভায় পানি সরবরাহ ও মানববর্জ্য ব্যবস্থাপনাসহ এনভায়রনমেন্টাল স্যানিটেশন প্রকল্পে ২ টি উৎপাদক নলকুপ ,৪টি এক্সপ্লেরেটরী ড্রিলিং পরীক্ষামুলক নলকুপ ,২টি পাম্প হাউজ ও ২ টি সাবমারসিবল পাম্প খননে ৮৫ লাখ , ৩২ কি মি পাইপ লাইন স্থাপন কাজে ৩ কোটি ৭৭ লাখ ৯২ হাজার , ১.৫ কি মি আর সিসি ড্রেইন নির্মাণে ১ কোটি ৪ লাখ ৪৮ হাজার , ১টি ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট এবং ট্রান্সমিশন পাইপ লাইন স্থাপন কাজে ৫ কোটি ৯১ লাখ ১৪ হাজার , ১ টি ফিক্যাল স্লাজ এবং সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট নির্মাণ কাজে ৭ কোটি চার লাখ ৮৫ হাজার , ৪ টি পাবলিক টয়লেট ও ১২ টি কমিউনিটি টয়লেট এবং ২৫ টি কমিউনিটি বিন স্থাপনে ৬৮ লাখ ৯৩ হাজার টাকা ব্যায়ে উন্নয়ন করা হয়েছে যা এখন দৃষ্যমান হয়েছে।
উন্নয়ন চিত্রের অংশ হিসেবে জামালপুর অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রকল্পে ৪ টি পরীক্ষা মুলক নলকুপ স্থাপনে ৩ লাখ ৮৩ হাজার, ২ টি উৎপাদক নলকুপ ও ৪ টি পরীক্ষামূলক নলকুপ এবং ইলেক্ট্রোমেকানিক্যালসহ পাম্প হাউজ নির্মাণে ১ কোটি ৩৪ লাখ, ৩০০০ ঘনমিটার ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন ভূ-গর্ভস্থ জলাধার নির্মাণে ৫ কোটি ৬৫ লাখ ৫ হাজার, ৮ টি পরীক্ষামুলক নলকুপ, ৪ টি উৎপাদক নলকুপ, ৪ টি পাম্প হাউজ, ৪ টি বাউন্ডারী ওয়াল, ৪ টি সাবমারসিবল পাম্প সহ অন্যান্য যন্ত্রপাতি কাজে ২ কোটি ৫৫ লাখ ৪৮ হাজার, ২.৪ কিমি ট্রান্সমিশন পাইপ লাইন স্থাপনে ১ কোটি ৩২ লাখ ৫ হাজার, ৬.২ কিমি সারফেস ড্রেন নির্মাণ কাজে ১০ কোটি ৯০ লাখ ১৮ হাজার, ১ টি সারফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট নির্মাণ কাজে ২১ কোটি ২৮ লাখ ৫২ হাজার, ৪০০ মি সারফেয ড্রেণ ওয়ালকওয়ে নির্মাণে ১ কোটি ১১ লাখ টাকার কাজও চলমান রয়েছে । অন্যদিকে ৩০ টি পৌরসভায় পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন প্রকল্পে ইসলামপুরে ড্রেন ও নলকুপ স্থাপনে ৯ কোটি ৭৫ লাখ ২৮ হাজার, ৩ টি পরীক্ষামূলক নলকুপ, উৎপাদক নলকুপ এবং ৩ টি পাম্প হাউজ নির্মাণে ৩ কোটি ৪৩ লাখ ৭ হাজার, ইঞ্জিনিয়ার অফিসে ২১ লাখ ৪১ হাজার, ৩ টি পাবলিক টয়লেট, ১ টি ফিক্যাল স্ল্যাজ ট্রিটম্যান্ট প্ল্যান্ট ২ কোটি ২৭ লাখ ২২ হাজার, ৯৮২ টি পাবলিক টয়লেট নির্মাণে ৬ কোটি ৯০ লাখ ৩৪ হাজার, ইসলামপুর পৌরসভা প্ল্যান্টে ২ কোটি ১০ লাখ ৩১ হাজার টাকার কাজ ইতি মধ্যেই সমাপ্ত করা হয়েছে। এ ছাড়াও বাংলাদেশের ১০ টি অগ্রাধিকার ভিত্তিক শহরে সমন্বিত স্যানিটেশন ও হাইজিন প্রকল্পে ৬ টি পানির উৎস ও ১৫০ টি হাউজ হোল্ড কানেকশন এবং ২৪ টি স্ট্রিট হাইড্রেন্ট এ ২৩ লাখ ৭৯ হাজার, ৫ টি কমিউনিটি ল্যাট্রিনের ১ কোটি ৪০ লাখ টাকার কাজ চলমান রয়েছে ৷
এদিকে জামালপুর জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এডমিন মো: জাহাঙ্গীর কবীর জানান, সুলতান স্যারের যোগদানের পর ১২ টি ৩৫০ কোটি টাকার উন্নয়ন অধিকাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে ৷ কয়েকটি প্যাকেজের কাজ ৫০% হয়ে আছে সেগুলো সম্পূর্ণ করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে৷ তবে এ সকল প্রকল্প বাস্তবায়নে জামালপুর জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সুযোগ্য নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সুলতান মাহমুদ স্যারের আন্তরিক প্রচেষ্টায় জামালপুরে সকল উন্নয়ন মূলক কাজ যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হয়েছে।
তবে এ বিষয়ে জামালপুর জেলা জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সুলতান মাহমুদ বলেন, পিছিয়ে পড়া জামালপুরকে এগিয়ে নিতে একজন প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা হিসেবে সকল কাজ নিজে সরেজমিনে গিয়ে তদারকির মাধ্যমে নিষ্ঠার সাথে কাজ করেছি। উন্নয়ন প্রকল্পের যে কাজ গুলো এখনো শেষ হয়নি সেগুলো বিধি মোতাবেক প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী ঠিকাদারদের তদারকি ও কাজের বিল প্রদানে সচেষ্ট রয়েছে। মানসম্মত কাজে বুঝে দেওয়ার পরই ঠিকাদারদের কাজ শেষ হওয়ার পর বিল প্রদান করা হবে বলেও জানান তিনি।
জেলার জন্য সামনে আরও কিছু প্রকল্পের কাজ আসবে। সরকারি বিধি মোতাবেক সেই কাজগুলোকে যোগ্যতা সম্পন্ন ঠিকাদারদের প্রদান করে যাতে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ও বৈষম্যহীন নতুন সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনে পিছিয়ে পড়া জামালপুর যাতে স্বাস্থ্য ও স্যানিটেশনে এগিয়ে থাকে সেই আলোকেই কাজ করে যাচ্ছেন বলে জানান তিনি।