জামালপুরে জাহাঙ্গীর আলম নামে এক ডিলারের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের প্রভাব খাটিয়ে প্রতিপক্ষকে নির্যাতন করে বাড়িঘর ও জমি বেদখল এবং রাস্তা-ড্রেন নির্মাণের নামে চাঁদাবাজির অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা।
জামালপুর সদর উপজেলার শরিফপুর ইউনিয়নের বেপারী পাড়ায় ওই ডিলারে বাড়ি। তিনি পৌরসভার কম্পপুর বেপারী পাড়া গ্রামের মন্টু মিয়ার বড় ছেলে।
ভুক্তভোগী শরিফপুরের ১ নম্বর ওয়ার্ডের বেপারী পাড়া গ্রামের মো. আব্দুর রহিমের ছেলে মো, আব্দুর রশিদ উজ্জ্বল ও মৃত সিতু মাহমুদের মেয়ে ভুক্তভোগী রাশেদা খাতুনের অভিযোগের প্রেক্ষিতে জানা যায়, জাহাঙ্গীরের বাবার অভাব অনটনের সংসার ছিল। অভাবী সংসার ছেড়ে একসময় জাহাঙ্গীর চলে আসেন সদর উপজেলার শরিফপুর ইউনিয়নের বেপাড়ীপাড়া গ্রামে মামা সিরাজুল হকের বাড়িতে। মামা সিরাজুল হক সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাওয়ায় সম্পত্তির লোভে মামীকে নিজের কব্জায় নিয়ে বিয়ে করে যেন আলাদিনের চেরাগ পেয়ে যান। এরপর তাকে আর পিছু তাকাতে হয়নি। তিনি মরহুম মামার বাড়িতেই স্থায়ীভাবে বসবাস করা শুরু করেন। আওয়ামী লীগে তার কোন পদ-পদবি না থাকলেও এলাকাসহ শহরের শীর্ষস্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাদের সাথে ওঠাবসা করে উপজেলার ডিলার হন। দলের নাম ভাঙিয়ে স্থানীয় নিরীহ মানুষকে নির্যাতন, জমি বেদখল ও রাস্তা-ড্রেন নির্মাণের নামে গণহারে চাঁদাবাজি শুরু করেন।
ভুক্তভোগীরা আরও জানান, আব্দুর রশিদ উজ্জ্বলের নানা সিতু মাহমুদ বাড়িটি আব্দুর রশিদ উজ্জ্বলকে দলিলমূলে লিখে দেন। উজ্জ্বলের বাবার চাকরির সুবাদে তারা পারিবারিকভাবে কুমিল্লায় থাকতেন। বাড়িটি দেখাশুনার জন্য আব্দুর রশিদ উজ্জ্বল তার খালাম্মা রাশেদা খাতুনকে বাড়িতে রেখে যান। ভূমিদস্যু জাহাঙ্গীর আওয়ামী লীগের ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে হঠাৎ একদিন মধ্যরাতে উজ্জ্বলের বসতবাড়িতে থাকা খালা রাশেদাকে অমানবিক ভাবে নির্যাতন করে এবং তার বাড়িঘরে হামলা চালিয়ে ওই বাড়িটি দখল করেন জাহাঙ্গীর। পরবর্তীতে বিষয়টি নিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ভুক্তভোগী উজ্জ্বল থানায় অভিযোগ দিলেও কোনো প্রতিকার পাননি। এ ঘটনা নিয়ে বেশ কয়েকবার এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে সালিশবৈঠক হয়। সালিশে জাহাঙ্গীরকে বাড়ির দলিল দেখাতে বললে তখন জাহাঙ্গীর দলিল দেখাতে পারেন নি এবং প্রতিবারই জাহাঙ্গীর সালিশ অমান্য করেছেন।
সালিশ অমান্যের পর পুনরায় থানায় অভিযোগ করে ভুক্তভাগীরা। এ নিয়ে থানায় উভয়পক্ষকে তলব করা হয়। থানার ওই বৈঠকে উজ্জ্বল দলিলসহ যাবতীয় কাগজপত্র দেখালেও বাড়ির জমির বিষয়ে কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেননি জাহাঙ্গীর। তারপরও উজ্জ্বলকে কোন সহযোগিতা করেনি পুলিশ প্রশাসন। শুধু তাই নয়, বাড়ি বেদখলের প্রতিবাদ করলে উজ্জ্বলকে ও তার বাবাকে বেশ কয়েকবার প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়। উজ্জ্বলের বাবা চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করলেও জাহাঙ্গীরের ভয়ে পরিবার নিয়ে স্বাভাবিকভাবে গ্রামে আসতে পারছেন না। জাহাঙ্গীরের আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতাদের সাথে যোগসাজশ ও সখ্য থাকার কারণে তার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ সরকার আমলে কোনো ব্যবস্থা নেয়া যায়নি। বরং তিনি দাপটের সাথে অন্যায় কাজ, ভূমি দখল, চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্ম করতেন নির্দ্বিধায়।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত জাহাঙ্গীর আলমের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, ‘আমি আমার ওয়ারিশসূত্রে সম্পদ এবংকি আমার কবওলাকৃত সম্পদের মধ্যে আমি অবস্থান করতেছি। আমি কাহারো কোন জমি জবরদখল করে থাকি নাই। বরংচ যারা অভিযোগ করেছে তারাই অবৈধ। কারণ সিতু মাহমুদ তার ছেলে আব্দুল মজিদ এবং রাশেদা খাতুনকে যৌথ দলিলে ৫ শতাংশ জমি লিখে দেয়। সিতু মাহমুদের ছেলে আব্দুল মজিদ দখলে আছে এবং বসবাস করতাছে। আমার জমির ভিতরে সিতু মাহমুদের কোনো জমি নাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘মামীকে বিয়ে করার প্রসঙ্গ সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমাকে তিনি সন্তানের মতো দেখাশোনা করছে। এটা তো প্রশ্নই আসে না। আমি তো মামাতো বোনকে বিয়ে করছি।’
তিনি বলেন, ‘আমার নানার নাম ইস্রাফিল হোসেন। ৮৮ নম্বর দাগে ৫২ শতাংশ জমির কারা ওয়ারিশ তা বিআরএস রেকর্ড দেখলেই বোঝা যাবে। আমি ৮৮ নম্বর দাগে ৫২ শতাংশের কাতে ৪ শতাংশের মধ্যেই আছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলম ড্রেন বরাদ্দ দিছে। এলাকার লোকজন সহযোগিতা করেছে। চেয়ারম্যান যা বরাদ্দ দিছে তা দিয়ে তো সম্পূর্ণ ড্রেন করা যায় নাই। এলাকার লোকেরাই বাকিটা করছে।’
প্রকাশ থাকে যে, বিগত দিনেও জমি বেদখল করা এবং রাস্তা-ড্রেন নির্মাণের নামে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে চাঁদা তোলার অভিযোগে জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় নিউজও হয়েছে। তারপরও কোনো পদক্ষেপ নেয়নি প্রশাসন। তার বিভিন্ন অপকর্মে এলাকাবাসী অতিষ্ঠ হলেও তার ভয়ে কেউ মুখ খোলার সাহস পায় না। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে ওই ঘটনা প্রমাণাদি ভিত্তিতে তদন্ত করে সঠিক বিচারের মাধ্যমে প্রকৃত মালিককে সম্পত্তি বুঝিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীসহ এলাকাবাসী।