ব্যাটিং ব্যর্থতায় ভারতের কাছে দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হলো সফরকারী বাংলাদেশ। সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টের খেলা টানা দুইদিন বৃষ্টির কারণে ভেস্তে যাবার পরও ভারতের কাছে ৭ উইকেটে হেরেছে টাইগাররা।
দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম দিন ৩৫ ওভার খেলার হবার পর দ্বিতীয় ও তৃতীয় দিন বৃষ্টি ও মাঠ সমস্যায় একটি বলও মাঠে গড়ায়নি। এরপর চতুর্থ ও পঞ্চম দিন ব্যাট-বল হাতে লড়াই করতে পুরোপুরিভাবেই ব্যর্থ হয়েছে বাংলাদেশ। এতে পঞ্চম দিনের দ্বিতীয় সেশনে এসে হার মানতে বাধ্য হলো গত মাসে পাকিস্তানের মাটিতে ২-০ ব্যবধানে টেস্ট সিরিজ জয় করা নাজমুল হোসেন শান্তর দল। প্রথম টেস্টে ভারতের কাছে ২৮০ রানের বড় ব্যবধানে হেরেছিলো বাংলাদেশ। দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ ২-০ ব্যবধানে হারলো টাইগাররা।
কানপুরের গ্রিন পার্ক স্টেডিয়ামে প্রথম ইনিংসে ৫২ রানে পিছিয়ে থেকে নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে খেলতে নেমে চতুর্থ দিন শেষে ২ উইকেটে ২৬ রান করেছিলো বাংলাদেশ। দিন শেষে ৮ উইকেট হাতে নিয়ে ২৬ রানে পিছিয়ে ছিলো টাইগাররা।
পঞ্চম দিনের তৃতীয় ওভারের ভারতের স্পিনার রবিচন্দ্রন অশ্বিনের বল সুইপ করতে গিয়ে ২ রানে সাজঘওে ফেরেন প্রথম ইনিংসের সেঞ্চুরিয়ান মোমিনুল হক। ৩৬ রানে তৃতীয় উইকেট পতনের পর ভারতের বোলারদের সামনে প্রতিরোধ গড়ে তুলেন ওপেনার সাদমান ইসলাম ও অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। দু’জনের ৫৫ রানের জুটিতে লিড নেয় বাংলাদেশ।
দিনের প্রথম ঘণ্টায় মোমিনুলকে হারিয়ে ৬৩ রান যোগ করে ভালো অবস্থায় থাকে বাংলাদেশ। তবে ইনিংসের ২৮তম ওভারে ভারতের আরেক স্পিনার রবীন্দ্র জাদেজার বল রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে বোল্ড হন ২টি চারে ১৯ রান করা শান্ত।
অধিনায়কের ফেরার ওভারে টেস্ট ক্যারিয়ারের চতুর্থ হাফ-সেঞ্চুরি তুলে নেন ৭ রান নিয়ে দিন শুরু করা সাদমান। ভারতের মাটিতে টেস্টে এই প্রথম বাংলাদেশের কোন ওপেনার হাফ-সেঞ্চুরি করলেন। হাফ-সেঞ্চুরি ছুঁয়েই থেমে যান সাদমান। পেসার আকাশ দীপের বলে গালিতে যশ্বসী জয়সওয়ালকে ক্যাচ দেন এই বাঁ-হাতি ওপেনার। ১০টি বাউন্ডারিতে ১০১ বলে ৫০ রান করেন সাদমান।
সাদমানের বিদায়ে ক্রিজে এসে ব্যর্থতা অব্যাহত রেখেছেন উইকেটরক্ষক লিটন দাস। জাদেজার অফ স্টাম্পের বাইরের বলে খোঁচা মারতে গিয়ে উইকেটরক্ষক ঋসভ পান্তকে ক্যাচ দিয়ে ১ রানে থামেন লিটন। এরপর আট নম্বরে নামা সাকিব ফিরেছেন শূন্য হাতে। জাদেজাকে ফিরতি ক্যাচ দেন তিনি। মাত্র ৩ রানের মধ্যে ৪ উইকেট হারিয়ে লড়াই থেকে ছিটকে পড়ে বাংলাদেশ।
উইকেট পতন ঠেকিয়ে অষ্টম উইকেটে মেহেদি হাসান মিরাজের সাথে ২৪ এবং নবম উইকেটে তাইজুল ইসলামকে নিয়ে ১২ রান যোগ করেন মুশফিকুর রহিম। জসপ্রিত বুমরাহর শিকার হয়ে মিরাজ ৯ ও তাইজুল ইসলাম শূন্যতে ফিরলে শেষ ব্যাটার খালেদ আহমেদকে নিয়ে লড়াই চালিয়ে যান মুশফিক। এই জুটি ভাঙতে চিন্তায় পড়ে যায় ভারত। তবে প্রথম সেশনের শেষ বলে বুমরাহ অফ কাটারে বোল্ড হন মুশফিক। বাংলাদেশের ইনিংস শেষ হয় ১৪৬ রানে। জয়ের জন্য ৯৫ রানের টার্গেট পায় ভারত।
৭টি চারে ৬৩ বলে ৩৭ রান করেন মুশফিক। ৫ রানে অপরাজিত থাকেন খালেদ। বুমরাহ, অশ্বিন ও জাদেজা ৩টি করে উইকেট নেন।
৯৫ রান তাড়া করতে নেমে তৃতীয় ওভারের প্রথম বলে অধিনায়ক রোহিত শর্মাকে হারায় ভারত। মিরাজের বলে হাসানকে ক্যাচ দেন ৮ রান করা রোহিত। শুভমান গিলকে ৬ রানে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলে ভারতকে চাপে ফেলেন মিরাজ। ৩৪ রানে ২ উইকেট হারায় ভারত। তৃতীয় উইকেটে ৬৭ বলে ৫৮ রানের জুটি গড়ে ভারতের জয়ের পথ সহজ করেন আরেক ওপেনার যশ্বসী জয়সওয়াল ও বিরাট কোহলি। জয় থেকে ৩ রান দূরে থাকতে স্পিনার তাইজুলের শিকার হন সপ্তম অর্ধশতক করা জয়সওয়াল। ৮টি চার ও ১টি ছক্কায় ৪৫ বলে ৫১ রান করেন জয়সওয়াল।
এরপর ভারতের জয় নিশ্চিত করেন কোহলি ও পান্ত। ৪টি চারে কোহলি ২৯ ও পান্ত ৪ রানে অপরাজিত থাকেন। মিরাজ ২টি ও তাইজুল ১টি উইকেট নেন। ম্যাচ সেরা হন জয়সওয়াল। সিরিজ সেরার পুরস্কার জিতেছেন অশ্বিন।
এই ম্যাচ হেরে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের পয়েন্ট টেবিলে পঞ্চম স্থান থেকে সপ্তম স্থানে নেমে গেল বাংলাদেশ। ৮ ম্যাচে ৩৪.৩৮ শতাংশ পয়েন্ট আছে টাইগারদের। ১১ ম্যাচে ৭৪.২৪ শতাংশ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষস্থান আরও সুসংহত করলো ভারত।
আগামী ৬ অক্টোবর থেকে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ শুরু করবে বাংলাদেশ ও ভারত। পরের দু’টি ম্যাচ হবে যথাক্রমে- ৯ ও ১২ অক্টোবর।
স্কোর কার্ড :
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস : ২৩৩/১০, ৭৪.২ ওভার (মোমিনুল ১০৭, শান্ত ৩১, বুমরাহ ৩/৫০)।
ভারত প্রথম ইনিংস : ২৮৫/৯ ডি, ৩৪.৪ ওভার (জয়সওয়াল ৭২, রাহুল ৬৮, মিরাজ ৪/৪১, সাকিব ৪/৭৮)।
বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংস : ১৪৬/১০, ৪৭ ওভার (জাকির ৫০, মুশফিক ৩৭, বুমরাহ ৩/১৭)।
ভারত দ্বিতীয় ইনিংস : ৯৮/৩, ১৭.২ ওভার (জয়সওয়াল ৫১, কোহলি ২৯*, মিরাজ ২/৪৪)।
ফল : ভারত ৭ উইকেটে জয়ী।
সিরিজ : দুই ম্যাচের সিরিজ ২-০ ব্যবধানে জিতলো ভারত।
ম্যাচ সেরা : যশ্বসী জয়সওয়াল (ভারত)।
সিরিজ সেরা : রবীচন্দ্রন অশ্বিন (ভারত)।