বাংলাদেশের পেসার হাসান মাহমুদের দারুণ বোলিংয়ে চেন্নাই টেস্টে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ১৪৪ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়েছিলো স্বাগতিক ভারত। কিন্তু সপ্তম উইকেটে ২২৭ বলে অবিচ্ছিন্ন ১৯৫ রান যোগ করে দিন শেষে ভারতকে ভালো অবস্থায় নিয়ে গেলেন দুই স্পিন অলরাউন্ডার রবীচন্দ্রন অশ্বিন ও রবীন্দ্র জাদেজা। প্রথম দিন শেষে ৮০ ওভারে ৬ উইকেটে ৩৩৯ রান করেছে ভারত। অশ্বিন ১০২ ও জাদেজা ৮৬ রানে অপরাজিত আছেন। বাংলাদেশের হাসান ৫৮ রানে ৪ উইকেট নিয়েছেন।
টস জিতে প্রথমে বোলিং করার সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। চেন্নাইয়ের এই ভেন্যুতে সর্বশেষ ১৯৮২ সালে টস জিতে প্রথমে বোলিং করেছিলো কোন দল। ঐ ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে টস জিতে প্রথমে বোলিং করার সিদ্বান্ত নেন সফরকারী ইংল্যান্ডের অধিনায়ক কিথ ফ্লেচার। ৪২ বছর পর রেকর্ডে নতুনত্ব আনলো বাংলাদেশ।
প্রথম ৫ ওভারে বিনা উইকেটে ১৪ রান তুলেছিলেন ভারতের দুই ওপেনার যশ্বসী জয়সওয়াল ও ভারত অধিনায়ক রোহিত শর্মা। ষষ্ঠ ওভারের প্রথম বলে হাসানের অফ-স্টাম্পের বলে ডিফেন্স করতে গিয়ে প্রথম স্লিপে শান্তকে ক্যাচ দেন ১টি চারে ১৯ বলে ৬ রান করা রোহিত।
তিন নম্বরে ব্যাট হাতে নেমে রানের খাতা খোলার আগেই সাজঘরে ফিরেন ৮ বল খেলা শুভমান গিল। হাসানের লেগ স্টাম্পের বাইরের বলে খেলতে গিয়ে উইকেটরক্ষক লিটন দাসকে ক্যাচ দেন গিল।
গিলের বিদায়ে ক্রিজে এসে সুবিধা করতে পারেননি বিরাট কোহলি। হাসানের অফ-স্টাম্পের বাইরের বলে ড্রাইভ করতে গিয়ে ৬ বলে ৬ রান করে উইকেটরক্ষক লিটনকে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন কাহলি। হাসানের পেস তোপে দশম ওভারে ৩৪ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়ে ভারত।
দলকে চাপমুক্ত করতে শক্ত হাতে হাল ধরেন ওপেনার জয়সওয়াল ও ২১ মাস পর টেস্ট খেলতে নামা ঋসভ পান্ত। বাংলাদেশের উপর আধিপত্য বিস্তার করে খেলেন তারা। তবে প্রথম সেশন শেষ হবার এক ওভার আগেই বিচ্ছিন্ন হতে পারতেন জয়সওয়াল ও পান্ত। পেসার তাসকিন আহমেদের বলে প্রথম স্লিপে পান্তের ক্যাচ নিতে পারেননি সাদমান ইসলাম। প্রথম সেশনে ২৩ ওভারে ৩ উইকেটে ৮৮ রান সংগ্রহ করে স্বাগতিক ভারত। এই সেশনে ৭ ওভারে ১৪ রানে ৩ উইকেট নেন হাসান।
বিরতি থেকে ফিরে চতুর্থ উইকেট তুলে নেন হাসান। ইনিংসের ২৬তম ওভারে নবমবারের মত আক্রমনে এসে পান্তকে বিদায় করেন হাসান। অফ স্টাম্পের বাইরের বলে কাট করতে গিয়ে উইকেটের পেছনে লিটনকে ক্যাচ দেন ৬ চারে ৩৯ রান করা পান্ত। জয়সওয়ালের সাথে ৬২ রানের জুটি গড়েন পান্ত। নতুন ব্যাটার লোকেশ রাহুলকে নিয়ে জুটি গড়ার চেষ্টা করেন জয়সওয়াল। এই জুটিতেই টেস্ট ক্যারিয়ারের দশম ম্যাচে পঞ্চম হাফ-সেঞ্চুরি তুলে নেন জয়সওয়াল। অভিষেকের পর ঘরের মাঠে টানা ছয় টেস্টে অন্তত ৫০ রানের ইনিংস খেলার তালিকায় শীর্ষে আছেন জয়সওয়াল।
হাফ-সেঞ্চুরির পর ইনিংস বড় করতে পারেননি জয়সওয়াল। বাংলাদেশ পেসার নাহিদ রানার ১৪৮ কিমি প্রতি ঘণ্টার শর্ট ডেলিভারি ব্যাকফুটে খেলতে গিয়ে প্রথম স্লিপে সাদমানকে ক্যাচ দেন জয়সওয়াল। ৯টি চারে ১১৮ বলে ৫৬ রান করেন জয়সওয়াল। রাহুল-জয়সওয়াল জুটি ৪৮ রান যোগ করেন।
জয়সওয়াল ফেরার পরের ওভারেই বিদায় নেন রাহুল। ৪৩তম ওভারে স্পিনার মেহেদি হাসান মিরাজের বলে শর্ট লেগে ব্যক্তিগত ১৬ রানে জাকির হাসানকে ক্যাচ দেন রাহুল। ৫ বলের ব্যবধানে ২ উইকেট হারায় ভারত। ১৪৪ রানে ষষ্ঠ উইকেট পতনে আবারও চাপে পড়ে টিম ইন্ডিয়া।
এ অবস্থায় জুটি বাঁধেন অশ্বিন ও জাদেজা। বাংলাদেশ বোলার চাপে ফেলতে দ্রুত রান তুলেন তারা। দু’জনের সেঞ্চুরির জুটিতে ধাক্কা সামলে ৩শর পেয়ে যায় ভারত। ৭৮তম ওভারে ১০১তম টেস্ট ক্যারিয়ারে ষষ্ঠ সেঞ্চুরি তুলে নেন অশি^ন। ৮০তম ওভারেই প্রথম দিনের খেলা শেষ হয়।
আট নম্বরে ব্যাটিংয়ে নেমে ১০টি চার ও ২টি ছক্কায় ১১২ বলে ১০২ রানে অপরাজিত থাকেন অশ্বিন। টেস্ট ক্যারিয়ারের ২১তম হাফ-সেঞ্চুরির ইনিংসে ১০টি চার ও ২টি ছক্কায় অনবদ্য ৮৬ রান করেন জাদেজা। সপ্তম উইকেটে ২২৭ বলে ১৯৫ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়েছেন অশি^ন ও জাদেজা। বাংলাদেশের বিপক্ষে সপ্তম উইকেট জুটিতে এটিই সর্বোচ্চ রান।
বাংলাদেশের হাসান ৪টি এবং রানা-মিরাজ ১টি করে উইকেট নেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর কার্ড : (প্রথম দিন শেষে)
ভারত : ৩৩৯/৬, ৮০ ওভার (অশ্বিন ১০২*, জাদেজা ৮৬*, হাসান ৪/৫৮)।