জামালপুর রেলওয়ে ওভারপাস নির্মাণ প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণের চেক বিতরণে অনিয়মের অভিযোগকারী রুনা আলমের বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন তার ভাসুর খন্দকার ফারুক আহমেদ। রুনা আলমের প্রয়াত স্বামী খোন্দকার ইলিয়াস মোর্তজা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী যুবদল জামালপুর জেলা শাখার সাবেক সভাপতি ছিলেন। ১৭ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার দুপুরে জামালপুর প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন খন্দকার ফারুক আহমেদ।
খন্দকার ফারুক আহমেদ লিখিত বক্তব্যে বলেন, আমার মা মৃত বেগম সালেহা আক্তারের রেখে যাওয়া জামালপুর শহরের স্টেশন রোডে মোট জমির পরিমাণ ৩৩ দশমিক ৮১ শতাংশ। আমরা ছয় ভাই ও দুই বোন পৈতৃক সূত্রে এই জমির মালিক। ভূমি আইন অনুযায়ী প্রত্যেক ভাই ৪ দশমিক ৮৩ শতাংশ জমির মালিক। ভাই বোনেরা যার যার হিস্যার জমি বণ্টন করার আগেই আমার ছোট ভাই খোন্দকার ইলিয়াস মোর্তুজা মৃত্যুর আগে রাস্তা সংলগ্ন জমিটির সামনের অংশ থেকে তার প্রাপ্য থেকে কিছু বেশি অর্থাৎ ২ শতাংশ জমি স্থানীয় হাজি আবু সাঈদের কাছে রেজিস্ট্রি দলিল মূলে বিক্রি করে দেন। ক্রেতা হাজি আবু সাঈদ ওই জমি তার নামে নাম খারিজ করে সেখানে স্থাপনা নির্মাণ করে দীর্ঘদিন ব্যবসা বাণিজ্য করেন। পরবর্তীতে রেলওয়ে ওভারপাস প্রকল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণ শুরু হলে তিনি ওই জমি ও স্থাপনার ক্ষতিপূরণের টাকা জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ শাখা থেকে নিজেই উত্তোলন করেন।
তিনি আরও বলেন, আমার ছোট ভাই খন্দকার ইলিয়াস মোর্তুজার স্ত্রী রুনা আলম বর্তমানে যে ভবনে বাস করছেন সেই জমিটি উল্লিখিত জমির পেছনের অংশ। ওই বাসায় জমির পরিমাণ সাড়ে ৩ শতাংশ। আমার ছোট ভাই রুনা আলমের স্বামী খন্দকার ইলিয়াস মোর্তুজার বিক্রয়কৃত জমির পরিমাণসহ বর্তমানে যেটুকু বাসার দখলে রয়েছে তাতে তার জমির পরিমাণ দাঁড়ায় সাড়ে ৫ শতাংশ। অথচ প্রকৃত পক্ষে ছোট ভাই জমির মালিক হলেন অন্যান্য ভাইয়ের সমান ৪ দশমিক ৮৩ শতাংশ। সে ক্ষেত্রে ছোট ভাই খোন্দকার ইলিয়াস মোর্তজাকে ঠকালাম কিভাবে।
তিনি বলেন, আমার ছোট ভাই ও তার স্ত্রী তাদের প্রাপ্য অংশ থেকে জমির পরিমাণ বেশি নেয়া সত্ত্বেও সব ভাই-বোনেরা খোন্দকার ইলিয়াস মোর্তজার অবস্থার কথা বিবেচনা করে মানবিক কারণে কোন প্রতিবাদ না করে ছাড় দিয়ে সবই মেনে নিয়েছি। কিন্তু এখন খোন্দকার ইলিয়াস মোর্তজার স্ত্রী রুনা আলম স্থানীয় একটি কুচক্রিমহলের প্ররোচণায় আমাদেরকে পারিবারিক, সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করতে ওঠেপড়ে লেগেছে। তিনি আরও জমির দাবি করে আদালতে মিথ্যা তথ্য উপস্থাপন করে মামলা করার অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছেন। যদিও মামলাটি এখনও আমলে নেয়নি আদালত। এখানেই শেষ নয় রুনা আলম আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অভিযোগ সাজিয়ে সংবাদপত্রসহ বিভিন্ন সংস্থার কাছে মিথা বানোয়াট ভিত্তিহীন অপপ্রচার ছড়িয়ে যাচ্ছেন। এতে সমাজে আমাদের পারিবারের সম্মান নষ্ট হচ্ছে।
খন্দকার ফারুক আহামেদ বলেন, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণ শাখায় আমাদের জমির সকল কাগজপত্র, বন্টননামা, ওয়ারিশগণের নাম ও ছবিসহ প্রত্যেকের হিস্যার পরিমাণসহ যাবতীয় কাগজপত্র জমা আছে। যেকোন সময় ইচ্ছে করলেই সেগুলো পরখ করে দেখা যাবে। ওইসব কাগজপত্র দীর্ঘদিন যাচাই বাছাই করে ও রুনা আলমের দায়ের করা আপত্তিনামা একাধিকবার শুনানি করেই জেলা প্রশাসক সবাইকে যার যার ক্ষতিপূরণের ন্যায্য পাওনা টাকার চেক হস্তান্তর করেছেন। এ ক্ষেত্রে কোন ধরনের আইনি জটিলতা বা বাধা নিষেধ নেই। রুনা আলম জমির মালিক না হয়েও মিথ্যা ও ভিত্তিহীন তথ্য দিয়ে জেলা প্রশাসক কার্যালয়সহ বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থার কাছে আমাদের বিরুদ্ধে একের পর এক মিথ্যা ও মানহানিকর অভিযোগ করেই যাচ্ছেন। ফলে আমাদের পরিবারের সদস্যদের বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হচ্ছে। সাংবাদিকদের মাধ্যমে আলোচিত জমির বিষয়ে সঠিক তথ্যনির্ভর সংবাদ তুলে ধরার জন্য সাংবাদিকদের প্রতি সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন খন্দকার ফারুক আহমেদ।
এদিকে এর আগে ১৪ সেপ্টেম্বর শনিবার দুপুরে জামালপুর শহরের মৃধাপাড়ায় নিজ বাসভবনে ভুক্তভোগী রুনা আলম সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে তাকে ঠকানোর জন্য তার স্বামী খোন্দকার ইলিয়াস মোর্তজার বড় ভাই খন্দকার ফারুক আহমেদসহ পরিবারের অন্যান্য স্বজনদের বিরুদ্ধে বক্তব্য তুলে ধরেন।
ওই সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ভুক্তভোগী রুনা আলম বলেন, আমি ২০২২ সালের ২১ জুন তারিখে (এলএ কেস নং ১৫/২০২১-২২) শহরে জামালপুর রেলওয়ে ওভারপাস নির্মাণ প্রকল্পের অধিগ্রহণকৃত ভূমির ক্ষতিপূরণ পাবার জন্য আপত্তি দাখিল করি। অধিগ্রহণকৃত ভূমির ৮৩৭৮ নং দাগে ২০২৪ সালের ১ সেপ্টেম্বর তারিখে ১৩৯১ নং দলিলমূলে আমি ৩ শতাংশ ভূমির মালিক হওয়ায় জামালপুরে দায়িত্বরত ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা জোবায়ের হোসেন আমার আপত্তিটি রেজিস্টারে লিপিবদ্ধ করেন।
এরপরেও আমি জামালপুরের যুগ্ম জেলা জজ ১ম আদালতে (মোকদ্দমা নং ৫৬/২০২৪) বাটোয়ারা ও বিজ্ঞ সিনিয়র সহকারী জজ ১ম আদালতে (২৭৫/২০২৪ নং) অন্যপ্রকার মোক্কদমা দায়ের করি। অধিগ্রহণকৃত ৮৩৭৮ নং দাগটি একটি ইজমালি সম্পত্তি, যার কোনোপ্রকার রেজিস্ট্রি বন্টননামা নেই এবং এ বিষয়ে দুটি মামলা আদালতে চলমান রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, জামালপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণ শাখা থেকে আমাকে না জানিয়ে এবং আমার নাদাবি ছাড়া, আমার সকল প্রকার বৈধ কাগজপত্র থাকা সত্তে¡ও সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে ২৯ আগস্ট আমার বিবাদীপক্ষ খন্দকার কে এম সুলায়মান, খন্দকার ফারুক আহমেদ, খন্দকার রেজাউল করিম, খন্দকার এনায়েতুল কিবরিয়া ও খন্দকার খালিদ খুররমদের সমস্ত ভূমি অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণের চেক প্রদান করেন। বেআইনিভাবে চেক বিতরণের কাজে জড়িত দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তিনি। একই সঙ্গে অধিগ্রহণকৃত ভূমি হতে প্রাপ্য ক্ষতিপূরণের দাবিও জানান তিনি।
আরও পড়তে পারেন :