বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ দলীয় সরকার পতনের দিন ৫ আগস্ট বিকেলে জামালপুর রিক্রিয়েশন ক্লাবে দুষ্কৃতিকারীদের হামলায় ভাংচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে ১৪ সেপ্টেম্বর রাতে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় সভা করেছেন এই ক্লাব কর্তৃপক্ষ।
মতবিনিময় সভায় জামালপুর রিক্রিয়েশন ক্লাবের অন্তর্বর্তীকালীন কমিটির আহ্বায়ক প্রকৌশলী মো. নূরুল ইসলাম জানান, জামালপুর শহরের পলাশগড় এলাকায় জামালপুর রিক্রিয়েশন ক্লাব লিমিটেড প্রতিষ্ঠিত হয় ২০২০ সালে। ক্লাবটি প্রতিষ্ঠার শুরুর দিকে এই ক্লাবের নামে স্থানীয় চারজন জমির মালিকের কাছ থেকে দলিলমূলে ১ একর ৩১ শতাংশ জমি কেনা হয়। এই জমির খাজনা-খারিজসহ যাবতীয় দলিলপত্র ক্লাব কর্তৃপক্ষের কাছে সংরক্ষিত আছে। একই সাথে সেই জমির পাশে জামালপুর পৌরসভার ময়লা-আবর্জনা ফেলার পরিত্যক্ত ডাম্পিং স্টেশনের ৩ একর ১৬ শতাংশ জমি জামালপুর পৌরসভা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ২০ বছরের জন্য লিজ নেয়া হয়।
ইতিমধ্যে ২০২১ সালের ২২ সেপ্টেম্বর থেকে প্রতি বছর এক লাখ টাকা হিসেবে ২০৪১ সাল পর্যন্ত ২০ বছরের সমুদয় লিজের মূল্য জামালপুর পৌরসভা কর্তৃপক্ষের কাছে অগ্রিম পরিশোধ করা হয়েছে। এই লিজি জমির চুক্তির যাবতীয় দলিল-কাগজপত্রও ক্লাব কর্তৃপক্ষের কাছে সংরক্ষিত আছে। জামালপুর রিক্রিয়েশন ক্লাবের জমি সংক্রান্ত বিষয়ে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। দেশের প্রচলিত আইন মেনেই এই ক্লাবটি প্রতিষ্ঠা ও এর অবকাঠামোগত উন্নয়ন কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, জামালপুর রিক্রিয়েশন ক্লাবের রাস্তা নিয়েও কোনো সংবাদ মাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। প্রকৃত পক্ষে, পলাশগড় একটি গ্রাম। এই গ্রাম থেকে পৌরসভার ডাম্পিং স্টেশন পর্যন্ত একটি রাস্তা ছিল। জামালপুর-দেওয়ানগঞ্জ বাইপাস রাস্তা হওয়ার পর ডাম্পিং স্টেশন পর্যন্ত জমি অধিগ্রহণ করে পৌর কর্তৃপক্ষ। পলাশগড় থেকে সরাসরি কোন রাস্তা আগে ছিল না।
জামালপুর রিক্রিয়েশন ক্লাবটি রাজধানী ঢাকায় অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী ঢাকা ক্লাবের অ্যাফিলেয়েশনভুক্ত একটি সামাজিক ক্লাব। এখানে বার পরিচালনার জন্য সরকার প্রদত্ত লাইসেন্স রয়েছে। কিন্তু বারটি এখনও চালুই করা হয় নাই। রিক্রিয়েশন ক্লাবটির একটি স্থায়ী অত্যাধুনিক ১০তলা ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে ভবনটির অবকাঠামোগত কাজ শেষ হয়েছে। এই ভবনটিতে থাকবে গেস্ট হাউজ, সম্মেলন কক্ষ, রেস্টুরেন্ট, লাইব্রেরি, বার, সুইমিং পুল, জিমনেসিয়াম, নামাজের স্থান, বিলিয়ার্ড, টেনিস কোর্ট ও ব্যাডমিন্টন কোর্ট। জামালপুর রিক্রিয়েশন ক্লাবের সকল সদস্য ও তাদের পরিবারের সদস্যদের জন্য অবকাশ যাপনের এক মনোরম পরিবেশ থাকবে এই ক্লাবকে ঘিরে। বিভিন্ন পেশাজীবীদের জন্য ইউজক্লাব মেম্বারশিপের ব্যবস্থাও রয়েছে। এই ক্লাবের ভেতরে যেমন বিভিন্ন খেলাধুলার ব্যবস্থা থাকছে। একই সাথে জামালপুর জেলায় খেলাধুলার মান উন্নয়ন ও কৃতী খেলোয়াড় তৈরির জন্য পৃষ্ঠপোষকতাসহ নানাভাবে সুস্থ ধারার ক্রীড়া কার্যক্রমের সাথে ইতিমধ্যে যুক্ত রয়েছে জামালপুর রিক্রিয়েশন ক্লাব। ভবিষ্যতেও যুক্ত থাকবে।
প্রকৌশলী মো. নূরুল ইসলাম বলেন, জামালপুর রিক্রিয়েশন ক্লাবের সকল সদস্যদের মতামতের ভিত্তিতে ৫ আগস্টের পর অন্তর্বর্তীকালীন একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠন করে আমরা ইতিমধ্যে ক্লাবের স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করে যাচ্ছি। বর্তমানে আমাদের এই ক্লাবের সদস্য রয়েছেন ৪৭০ জন। জামালপুর রিক্রিয়েশন ক্লাবটিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে জামালপুর জেলার সর্বস্তরের সাংবাদিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও সাংবাদিক ভাইদের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করছি। আপনাদের সাথে আমরা সব সময় সহযোগিতামূলকভাবে কাজ করতে চাই। মতবিনিময় সভায় উপস্থিত সাংবাদিকদের সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি।
মতবিনিময় সভায় জামালপুর রিক্রিয়েশন ক্লাবের সদস্য ও শেয়ার হোল্ডার মো. জাকির হোসেন খান, আইনজীবী মো. নওয়াব আলী, জহুরুল ইসলাম, মোশারফ হোসেন, আশরাফ আহমেদ, আইনজীবী সুদীপ দে মিঠু, একরামুল হক খান সজিব, আরিফুল আলম আপন, সৌরভসহ অন্যান্য সদস্যবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। সভায় জামালপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি হাফিজ রায়হান সাদা ও সাধারণ সম্পাদক লুৎফর রহমান, জামালপুর জেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি মো. ইউসুফ আলী ও সাধারণ সম্পাদক শুভ্র মাহাদী, প্রেসক্লাব জামালপুরের সাধারণ সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর আলমসহ সাংবাদিকদের অন্যান্য সংগঠন ও ক্লাবের শতাধিক সাংবাদিক অংশ নেন।