লিয়াকত হোসাইন লায়ন
নিজস্ব প্রতিবেদক, ইসলামপুর, বাংলারচিঠিডটকম
জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলায় যমুনা-ব্রহ্মপুত্র নদ-নদী বিধৌত অঞ্চলে ১২টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত উপজেলা। প্রায় ৫ লাখ মানুষের বসবাস। এ উপজেলায় ৫০ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সই একমাত্র ভরসা। সকল বাসিন্দা এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নির্ভরশীল হলেও চিকিৎসক সংকট, সরকারি চিকিৎসার পরিবর্তে অতিরিক্ত লাভের আশায় প্রাইভেট ক্লিনিকে পাঠানো, দালালদের খপ্পর ও দায়িত্বরতদের গাফলতি এবং অফিস সময়ের আগেই কর্মকর্তারা অফিস ত্যাগ করার কারণে প্রতিনিয়তই ভোগান্তিতে পরতে হচ্ছে সেবা নিতে আসা রোগীদের। অন্যদিকে অনুপস্থিত থেকেও প্রতি মাসে এসে বেতন উত্তোলন করছে। এ যেন এক রহস্যময় অধ্যায় যেন দেখার কেউ নেই।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালসহ তিনটি স্বাস্থ্য উপকেন্দ্রের কনসালটেন্ট, জুনিয়র কনসালটেন্টসহ মোট ৩৩টি পদ থাকলেও আটজন মেডিক্যাল অফিসার ও ছয়জন কনসালটেন্ট কর্মরত রয়েছেন। এতে নয়জন পদায়ন, মাতৃত্বকালীন ছুটিতে দুজন, বনিয়াদি প্রশিক্ষণে একজন, অর্জিত ছুটিতে একজন, ডেপুটেশনে দুজন ও প্রেশনে দুজন ও উচ্চতর প্রশিক্ষণে দুজন আবেদিত থাকায় দুজন দিয়ে চলছে পাশের উপজেলাসহ প্রায় ৬ লাখ মানুষের চিকিৎসা সেবা।
এছাড়াও মেডিক্যাল অফিসার সংকটের কারণে আন্তঃবিভাগে ভর্তি রোগীদের ছাড়পত্র, রেফার্ডসহ লেবার ওয়ার্ডে রাউন্ড মাতৃত্ব সেবায় অনেক বিড়াম্বনা হচ্ছে। কর্মরত ছয়জন জুনিয়র কনসালটেন্ট থাকলেও কর্মফাঁকিসহ অফিস চলাকালিন সময়ে নিয়মিত না থাকায় উপসহকারী মেডিক্যাল অফিসার দিয়ে চলছে চিকিৎসা সেবা।
এছাড়াও সার্জারি, মেডিসিন, কার্ডিওলজিস্ট,ডেন্টাল সাজর্ন, এমটি ফিজিওথেরাপি, চিকিৎসক না থাকায় স্বাস্থ্য সেবা চরমভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। চিকিৎসক সংকটের পাশাপাশি স্টাফ নার্স, ওয়ার্ডবয়, পরিচ্ছন্নতাকর্মী সংকটসহ নানান সমস্যা জর্জরিত হয়ে অনিয়ম নিয়মে পরিণত হয়েছে হাসপাতালটিতে।
জানা গেছে, উপজেলার পশ্চিমঞ্চলের দুর্গম যমুনার ওপারে প্রায় ৪০টি গ্রাম কুলকান্দি ইউপির জিগাতলা, বেড়কুশা, হরিনধরা, চর হরিনধরা, চর কুলকান্দি, বেলগাছার মন্নিয়া, বরুল, সিন্দুরতলী, প্রজাপতি, চর মন্নিয়া, শিলদহ, সাপধরী সম্পূর্ণ ইউনিয়ন, চিনাডুলী ইউনিয়নের চর নন্দনের পাড়া, বীর নন্দনের পাড়া ও নোয়ারপাড়া ইউনিয়নের কিছু অংশ বিভিন্ন দিক থেকেই বঞ্চিত মানুষের বসবাস। এসব এলাকার মানুষগুলো স্কুল ও কমিউনিটি ক্লিনিক থাকলেও শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা থেকে তারা খুব বেশি বঞ্চিত।
দুর্গম যমুনার চরাঞ্চলে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো বেশির ভাগ বন্ধ থাকায় সময়ের প্রয়োজনে উন্নত চিকিৎসার জন্য স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসলে দালালদের খপ্পরে অতিষ্ঠ হয়ে পড়ে। প্রতিনিয়তই চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রোগীদের হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। কাঙ্ক্ষিত সেবা না পেয়ে দুর্ভোগের শিকার রোগীদের যেতে হয় বাইরের কোন ক্লিনিক বা জামালপুর সদর হাসাপাতালে। এতে চিকিৎসা খরচ বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়তে হচ্ছে চরাঞ্চলের নিম্নআয়ের মানুষদের।
অভিযোগ উঠেছে, সরকারি চিকিৎসার পরিবর্তে অতিরিক্ত লাভের আশায় প্রাইভেট ক্লিনিকে পাঠানো হচ্ছে। এতে অসহায় রোগীরা চিকিৎসার নামে হয়রানির শিকার হয়ে বাড়ি ফিরছে। উৎ পেতে থাকা দালালরা সাধারণ রোগীদের হাসপাতাল ফটকে প্রবেশ করা মাত্রই সেবার নামে ডেকে নিয়ে মাত্রাতিরিক্ত টেস্টসহ অন্যান্য সুবিধার প্রতিশ্রুতি দিয়ে নিজেদের পকেট ভারী করাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। এতে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা ঠিকমত চিকিৎসা না পেয়ে চোখের জলে বুক ভাসিয়ে বাড়ি ফিরে। সিডিউল টাইম মাফিক ডাক্তার না থাকারও অভিযোগ রয়েছে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বাথরুমগুলো অস্বাস্থ্যকর থাকলেও ভর্তি বিভাগের অবস্থা আরও নাজেহাল। নোংরা পরিবেশে থেকে আরও অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বলে রোগীদের ও স্বজনদের অভিযোগ রয়েছে। তীব্র তাপদাহে যখন অতিষ্ঠ জন জীবনে তখন সেবা নিতে আসা রোগীদের ভোগান্তির শেষ নেই । এছাড়াও আধুনিক স্বয়ংক্রিয় একটি অপারেশন থিয়েটারে দেশি-বিদেশি কোটি-কোটি টাকার যন্ত্রপাতি রয়েছে। দীর্ঘদিন যাবত সার্জিকেল ডাক্তার ও এনেসথেসিয়া ডাক্তারের অভাবে অপারেশন থিয়েটার বন্ধ রয়েছে। ফলে অপারেশন থিয়েটারের কোটি কোটি টাকার সরকারি সম্পদ নষ্ট হচ্ছে। বন্যা ও নদী ভাঙ্গন কবলিত মানুষের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করবে উর্ধতন কর্তৃপক্ষ এমনটাই প্রত্যাশা এ অঞ্চলের মানুষের।
এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. এ এ এম আবু তাহের জানান, চিকিৎসক সংকটসহ নার্স অনুপস্থিতের বিষয়টি উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। আশা রাখছি দ্রুত সময়ের মধ্যে ব্যবস্থা হবে।