
জাহিদুর রহমান উজ্জ্বল
নিজস্ব প্রতিবেদক, মাদারগঞ্জ, বাংলারচিঠিডটকম
জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলা সাব রেজিস্ট্রার অফিসের নৈশপ্রহরী জাহাঙ্গীর আলমের অর্জিত বিপুল অর্থবিত্ত নিয়ে চলছে নানান আলোচনা-সমালোচনা। মাত্র এক হাজার ৭০০ টাকা বেতনে মাস্টার রোলে চাকরি করলেও সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার বিপুল অর্থবিত্তের মালিকানা নিয়ে আলোচনার ঝড় ওঠে।
জানা গেছে, জাহাঙ্গীর আলম মাদাগরঞ্জ উপজেলা কমপ্লেক্সের কাছে কোটি টাকার জমিতে কয়েক কোটি টাকায় তৈরি করেছেন রাজপ্রাসাদসম দালানকোঠা, গরুর খামার, আবাদি জমি, নিজের থাকার রাজকীয় বাড়ি, একাধিক বাসাবাড়ি, পুকুর কোন কিছুরই যেন তার অভাব নেই। সরকারি খাস জমি দখল করে গরুর খামারসহ একাধিক পাকাবাড়ি করেছেন। কয়েক বছর আগেও তিনি দিনমজুরির কামলা খেটেছেন। বছরবান্দা কামলার কাজও করেছেন তিনি বহুদিন। এখন তিনি বিপুল অর্থবিত্তের মালিক।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, জাহাঙ্গীর আলম ১২ বছর আগে সাব রেজিস্ট্রারের খাবার রান্নার কাজ করতে গিয়ে তিনি মাস্টার রোলে চাকরি পেয়ে যান। এখানেই তার ভাগ্য খুলে যায়। রাতারাতি তিনি অফিসের গোপন কাজের সাথে নিজেকে জড়িয়ে ফেলেন। রাতে অফিসের গোপন কাজগুলো তার হুকুমে চলে। অফিসে যতরকমের অবৈধভাবে টাকা আসে তার সবটার ভাগই যায় জাহাঙ্গীর আলমের হাতে। জমি ও দলিল রেজিস্ট্রির কমিশন, দলিলের নকল উত্তোলনসহ কোন কাজই তার হাত ছাড়া হয় না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন দলিল লেখক ও ওই অফিসের কর্মচারী জানান, এ অফিসে জাহাঙ্গীরের একটি সিন্ডিকেট আছে। তার সুপারিশে আরও কয়েকজন ছেলেদের নকল নবিশের চাকরি দিয়ে তার হাতকে শক্তিশালী করেছেন। কেউ প্রতিবাদ করলে ওই ছেলেরা হুমকি দিয়ে, এমনকি মারপিটের ভয় দেখিয়ে মুখ বন্ধ করে রাখে। তার সিন্ডিকেটের কয়েকজনের কাছে পুরো সাব রেজিস্ট্রি কার্যালয় জিম্মি হয়ে আছে।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, জাহাঙ্গীর আলমের বাড়ি উপজেলার সুখনগরী গ্রামে। যমুনা নদী ভাঙনের পর তিনি উপজেলা সদরে পালপাড়ায় আশ্রয় নেন। এক সময় তিনি উপজেলার বিভিন্ন অফিসে ছোটখাট হাত ফরমায়েসির কাজ করতেন। পরে তার থিতু হয় উপজেলা সাব রেজিস্ট্রি অফিসে। সেখানে বেচেলর অফিসারদের রান্নাবান্না ও ঘর মোছার কাজ করে। কাজ শুরু করার পর তৎকালীন এক সাব রেজিস্ট্রার তাকে দিয়ে অফিসের ছোটখাট কাজ কারানো শুরু করেন। এক সময় তিনি মাস্টার রোলে অফিসের নৈশপ্রহরীর কাজ পান ৩০০ টাকার বেতনে। বর্তমানে তার বেতন এক হাজার ৭০০ টাকা।

কথিত রয়েছে, জাহাঙ্গীর আলম পদবিকে তোয়াক্কা না করে নেমে পড়েন অবৈধ অর্থ উপার্জনের কাজে। এক এক করে সব কাজ তিনি হাতিয়ে নেন। দিন কে রাত রাত কে দিন বানিয়ে ফেলেন। এক এক করে সম্পদের পরিমাণ বাড়তে থাকে তার। গরুর খামার, জমি, বাসাবাড়ি, কৃষি জমি, পুকুর, প্রজেক্ট এবং নিজ ও আত্মীয়স্বজন ছাড়াও বিভিন্নজনের নামে সম্পদ গড়েছেন তিনি। সুখনগরীতে সরকারি খাস জমি দখল করে এখানে খামার গড়ে তুলেছেন। কয়েক বছর আগে স্থানীয় ব্যবসায়ী আতাউর রহমান আবু তালুকদারের কাছ থেকে উপজেলা কমপ্লেক্সের কাছে কোটি টাকা দিয়ে জমি ক্রয় করেন। এখানেও তার জমির দাম কম ও ভুয়া শ্রেণি বসিয়ে কমমূল্যে জমি রেজিস্ট্রি করে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। এই দলিলে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়। এই জমিতে পাঁচতলা ফাউন্ডেশন দিয়ে একটি প্রাসাদ তৈরি করছেন তিনি। তার কাজ এখনো শেষ হয়নি। দুতলা পর্যন্ত করেছেন। এছাড়া পালপাড়ায় দুতলা সুরম্য একটি বাড়ি রয়েছে তার। গ্রামের বাড়িতে রয়েছে একাধিক ঘর, বাগান, গরুর খামার, পুকুর, একরের পর একর আবাদি জমি।
উপজেলা কমপ্লেক্স এলাকায় তার প্রাসাদের খোঁজ নিতে গেলে ভয়ে কেও মুখ খুলে না, নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ব্যক্তি জানান, এই জাহাঙ্গীর আলমের কাছে কি আলাদিনের চেরাগ আছে? যা তাকে রাতারাতি কোটিপতি বানিয়েছে। সাব রেজিস্ট্রার অফিস তার কথায় চলে। সুখনগরী গ্রামে খোঁজ নিলে একাধিক গ্রামবাসী জানান, সে অল্প দিনে এতো টাকার মালিক হয়েছে। তার অবৈধ টাকায় এসব কেনা।
এ বিষেয়ে অভিযুক্ত জাহাঙ্গীর আলমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি কথা বলতে রাজি হননি। তাকে নিয়ে কোন সংবাদ না লেখার জন্য বারবার অনুরোধ করেন তিনি।
মাদারগঞ্জ উপজেলায় স্থায়ী সাব রেজিষ্টার না থাকায় বর্তমান সাব রেজিষ্টার কথা বলতে রাজি হয়নি।
এদিকে জামালপুর জেলা রেজিস্ট্রার মো. শাহাজাহান এ প্রতিবেদককে জানান, এটা মাদাগঞ্জ সাব রেজিস্ট্রার অফিসের আওতায় তাদের সাথে কথা বলুন। নৈশপ্রহরী জাহাঙ্গীর যদি কোন অন্যায়, অনৈতক কাজ করে থাকেন তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।