সরিষাবাড়ী প্রতিনিধি, বাংলারচিঠিডটকম
চলতি মৌসুমে জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে মিষ্টি আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে। চাহিদা ভালো থাকায় আলু ক্ষেত থেকে উত্তোলন করে সেখানেই বিক্রি করতে পারছেন। ফলন ও বাজার দর ভালো হওয়ায় কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ভাটারা, কামরাবাদ, পোগলদিঘা ও সাতপোয়া ইউনিয়নে সবচেয়ে বেশি মিষ্টি আলুর চাষ হয়েছে। চলতি মৌসুমে এ উপজেলার কামরাবাদ, ভাটারা, পোগলদিঘা ও সাতপোয়া ও একটি পৌরসভাসহ মোট ৫৮০ হেক্টর জমিতে মিষ্টি আলু চাষ করা হয়েছে। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি চাষ হয়। কৃষকের প্রতি শতক জমিতে তিন মণ আলু উৎপাদিত হয়েছে। প্রতি মণ আলু ১১০০ -১১৫০ টাকায় ক্ষেত থেকে বিক্রি হচ্ছে। অন্যান্য ফসলের চেয়ে অল্প খরচে বেশি লাভবান হওয়া যায় বলে কৃষকরা এখন আলু চাষের দিকে বেশি ঝুঁকছেন।
সরেজমিনে উপজেলার কামরাবাদ ইউনিয়নের ধারাবর্ষা এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, পুরো এলাকায় ক্ষেত জুড়ে চলছে মিষ্টি আলু তোলার উৎসব। পুরুষেরা কোদাল মিয়ে মাটি কুপিয়ে তা আগলা করছে আর নারী ও শিশুরা আলু কুড়িয়ে নিরাপদ এক জায়গায় স্তূপ করছে। দিন শেষে মিষ্টি আলু নিতে আসা ব্যবসায়ীরা ক্ষেত থেকে বসে আলু মেপে বস্তায় ভরে রাস্তার পাশে রেখে দিচ্ছে। সন্ধ্যা বা রাতে ট্রাকে ভরে এসব মিষ্টি আলু ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় নিয়ে যায়।
আলু চাষিরা জানান, মিষ্টি আলু চাষে সময় ও বিনিয়োগ কম লাগে। প্রতি বিঘায় আলু চাষ করতে খরচ হয় ২০-২৫ হাজার টাকা। এক বিঘা জমিতে ১শ মণ মিষ্টি আলু উৎপাদন হয়। যার মূল্য এক থেকে দেড় লাখ টাকা। প্রতি মণ মিষ্টি আলুর দাম ১১শ টাকা থেকে ১১৫০ টাকা। মিষ্টি আলু চাষে অল্প খরচে বেশি লাভবান কৃষক। তাই মিষ্টি আলু চাষে ঝুঁকছেন কৃষকরা।
উপজেলার কামরাবাদ ইউনিয়নের ধারাবর্ষা গ্রামের কৃষক নূরুল ইসলাম। কোদাল দিয়ে তার মিষ্টি আলুর ক্ষেত থেকে আলু তুলছিলেন। এ সময় কথা হলে তিনি বলেন, বিঘা প্রতি ১শ মণ মিষ্টি আলু উৎপাদন হয়। প্রতি বিঘায় ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকার খরচ হয়। ঢাকা শহরে মিষ্টি আলুর চাহিদা অনেক। ১ বিঘা জমির আলু ৯০ হাজার থেকে লাখ টাকায় বিক্রি করা যায়।
একই এলাকার কৃষক হেলাল মিয়া বলেন, ধান, গম, ভুট্টা, পাট এসব আবাদের চেয়ে মিষ্টি আলু আবাদ করলে তিন গুণ লাভ বেশি আমাদের।
তিনি আরও বলেন, ৩০ শতক জমিতে আলু চাষ করেছি। ১০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। ক্ষেত থেকে বিক্রি করলাম ৫৯ হাজার টাকা।
এছাড়াও কৃষক আয়নাল হক, কালু মন্ডল, গফুর মন্ডলসহ আরও অনেকেই বলেন, বাজারে মিষ্টি আলুর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। ঢাকা থেকে ব্যবসায়ীরা এসে ক্ষেত থেকেই কিনে নিয়ে যায়।
এর ফলে আমাদের বাড়তি কোন ঝামেলায় পড়তে হয়না। বাজারেও আলুর বেশ টান থাকায় বেশ ভালো মূল্যেই বিক্রি করতে পারছি মিষ্টি আলু।
আলুর ব্যবসায়ী লিটন, দেলু মুন্সিসহ অনেকেই বলেন, ঢাকায় মিষ্টি আলুর ভালো চাহিদা। এখান থেকে ক্রয় করে ঢাকা শহরে বিক্রি করলে ভালো টাকা লাভ হয়। ট্রাক বা বিভিন্ন গাড়ি নিয়ে কৃষকের ক্ষেত থেকেই এসব আলু ক্রয় করে থাকেন বলে তারা জানান।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ অনুপ সিংহ বলেন, বিগত সময়ের মতোই চলতি মৌসুমে মিষ্টি আলুর বেশ ভালো ফলন হয়েছে। সরিষাবাড়ীতে মিষ্টি আলু চাষে বেশ উপযোগী। কম খরচে বেশি লাভবান হওয়ায় কৃষকেরা মিষ্টি আলু চাষের দিকে ঝুকছে। আগামী মৌসুমে কৃষকদের আলু চাষে ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।