বাংলারচিঠিডটকম ডেস্ক :
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে চলমান উন্নয়ন প্রকল্পগুলো যত দ্রুত সম্ভব শেষ করতে এবং যথাযথ যাচাইবাছাই করে নতুন পরিকল্পনা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। ২৪ জানুয়ারি সকালে পরিকল্পনা কমিশনের এনইসি সম্মেলন কক্ষে পরিকল্পনা কমিশনের সভায় সভাপতিত্বকালে তিনি এ নির্দেশ দেন। খবর বাসসের।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, চলমান প্রকল্পগুলোর মধ্যে যেগুলোর খরচ কম হবে সেগুলো আমাদের দ্রুত শেষ করতে হবে। কারণ আমি মনে করি, যত তাড়াতাড়ি আমরা সেগুলো শেষ করতে পারব তত বেশি সুবিধা পাব। তিনি বলেন, আমরা একটা প্রকল্প সম্পন্ন হওয়ার পর এর ফলাফল পাই। তারপর আরেকটি নতুন প্রকল্প গ্রহণ করি। সরকারপ্রধান বলেন, এখন সব থেকে বেশি যেটা দরকার, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সেটা আমাদের বেছে নিতে হবে। এগুলো চিহ্নিত করতে হবে, কোন প্রকল্পগুলো সামান্য কিছু টাকা দিলেই আমরা শেষ করে ফেলতে পারব। প্রকল্পগুলো যত দ্রুত শেষ করে ফেলা যায় ততই ভালো। কারণ একটি প্রকল্প শেষ হলে তার ফলাফল আসে। আমরা লাভবান হই এবং নতুন প্রকল্প নিতে পারি। কাজেই এখানে দীর্ঘসূত্রতা যেন না হয়, বারবার যেন প্রকল্প সম্পন্ন করতে দেরি না হয়-সেদিকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, প্রকল্পের পিডি (প্রকল্প পরিচালক) নিয়োগের ক্ষেত্রে দেখা যায় অনেক প্রকল্পের দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে, কিন্তু সেটা করার কোনো সুযোগ নেই। সেটা কিন্তু হতে দেওয়া যাবে না। প্রত্যেকটি মন্ত্রণালয়কে সেভাবে নির্দেশ দেওয়া হবে। তিনি প্রকল্প পরিচালকদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। কারণ অনেক সময় দেখা যায়- অনেককে প্রকল্পের দায়িত্ব দেওয়া হয়, যারা কাজটা ঠিকমতো বুঝে উঠতে পারেন না বা মনোযোগী হন না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা যখন কোনো উন্নয়নমূলক পরিকল্পনা হাতে নিই সে সময় খেয়াল রাখতে হবে কোনটা আমার দেশের জন্য প্রযোজ্য এবং প্রয়োজন। অনেক সময় প্রকল্প পরিচালনার জন্য আমরা এডিবি বা বিশ্বব্যাংক বা অন্যান্য সংস্থা বা দেশ থেকে ঋণ নিয়ে কাজ করি। অনেক সময় দেখা যায় অনেক বড় অঙ্কের টাকার প্রকল্প নিয়ে আসা হয়। নতুন প্রকল্প নেওয়ার ক্ষেত্রে আমি আবারও বলব, অহেতুক একটা প্রস্তাব এলো বড় আকারের, সেটা তাৎক্ষণিকভাবে গ্রহণ না করে প্রতিটি প্রস্তাবের ক্ষেত্রে এটাই মাথায় রাখতে হবে- সেখানে আমাদের কী পরিমাণ টাকা ব্যয় হবে, আমরা কী পরিমান ঋণ নিচ্ছি এবং সুদসহ কী পরিমাণ ঋণ পরিশোধ করতে হবে এবং সেটা করার মতো আমাদের সক্ষমতা আছে কি না এসব যাচাই-বাছাই করা একান্তভাবে দরকার।
শেখ হাসিনা বলেন, আমি যখন-তখন যে কোনো প্রকল্প গ্রহণ করি না। আগে চিন্তা করে দেখি কোনটা দেশের কাজে লাগবে আর কোনটা লাগবে না। এর থেকে মানুষ কতটুকু পাবে। তিনি আরও বলেন, অযথা টাকা ধার করা নয়, কারণ যা সুদসহ আমাকেই পরিশোধ করতে হয়। তাই এই বোঝা যাতে আমাদের কাঁধে না পড়ে সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে।
বিশ্বে চলমান যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক মন্দার প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, আমি জানি, যেহেতু অর্থনৈতিকভাবে একটা চাপ আছে, যার জন্য যথাসময়ে অর্থ হয়তো আমরা ছাড় করতে পারিনি। আর এই নির্বাচনের ডামাডোলে সবকিছু একটু ধীরগতিতে চলেছে। নির্বাচন তো সম্পন্ন হয়ে গেছে, কাজেই এটা আর ধীরগতিতে চললে হবে না। এখন আরও দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। এ নির্বাচনকালীন যে সময় আমাদের নষ্ট হলো সেটা আমাদের এখন পূরণ করতে হবে। তিনি বলেন, আমাদের সামনে সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ যেটা আসবে ২০২৬ সালে আমাদের গ্র্যাজুয়েশন কার্যকর শুরু হবে। সেখানে আমরা কী কী সুবিধা পাব আর কোনটা আমাদের জন্য সব থেকে বেশি কার্যকর সেটা আমাদের বাছাই করতে হবে। আমরা সেভাবে কাজ শুরু করব। এর সঙ্গে এলডিসি হিসেবে যে সুবিধাগুলো আমরা পেতাম সেগুলোর অনেক কিন্তু আমরা পাব না, যদিও এগুলো প্রস্তাব করেছি ২০৩২ সাল পর্যন্ত বৃদ্ধি করতে। এ বিষয়গুলো আমাদের মাথায় রাখতে হবে। সেক্ষেত্রে আমাদের যে চ্যালেঞ্জগুলো আসবে সেগুলো আমরা কীভাবে মোকাবিলা করব।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রত্যেকটি দেশের জন্য যুদ্ধের ফলাফল খারাপ। কারণ মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে যায়। অনেক কিছুই আমরা উৎপাদন করি। কিন্তু যেসব পণ্য আমাদের দেশে উৎপাদন কম হয় বা আমদানি করতে হয় সেসব পণ্যের মূল্য এবং পরিবহন ব্যয় অত্যাধিক বেড়ে গেছে। তারপর ঋণের সুদ বেড়ে যাওয়া এর একটা বিরাট চাপ আমাদের অর্থনীতির ওপর পড়েছে। এ সময় কভিড-১৯ চলাকালীন বিনামূল্যে ভ্যাকসিন দেওয়া থেকে সরকারের কভিড মোকাবিলার সাফল্যের বিভিন্ন পদক্ষেপের উল্লেখ করেন তিনি।
শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন ইসির প্রেসিডেন্টের : বাসস জানায়, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পুনরায় নির্বাচিত হওয়ায় শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন ইউরোপীয় কাউন্সিলের (ইসি) প্রেসিডেন্ট চার্লস মিশেল। শেখ হাসিনার কাছে পাঠানো এক অভিনন্দন বার্তায় তিনি লিখেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সম্প্রতি আপনি পুনর্নিয়োগ পাওয়ায় আমি আপনাকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশের একটি নির্ভরযোগ্য এবং দীর্ঘমেয়াদি অংশীদার উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে টেকসই উন্নয়ন, জলবায়ু পরিবর্তন, অভিবাসন এবং অন্যান্য সব অভিন্ন স্বার্থের বিষয়ে একসঙ্গে কাজ চালিয়ে যেতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।