এম এম মাসুদ, কক্সবাজার থেকে:
বাংলাদেশের ব্লু ইকোনমি বা সুনীল অর্থনীতির অপার সম্ভাবনা রয়েছে। ২০৩০ সাল নাগাদ ২ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের বেশি আয় করা সম্ভব। এ বিষয়ে ইতিমধ্যে প্রণীত নীতিগত সিদ্ধান্ত ও মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে প্রতিবন্ধকতা দূর করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজর দেয়া প্রয়োজন।
মঙ্গলবার কক্সবাজারের একটি হোটেলে এক কর্মশালায় বিশেষজ্ঞরা এসব কথা বলেন। ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) সরকারের সংশ্লিষ্ট কয়েকটি সংস্থার সহযোগিতায় এই কর্মশালার আয়োজন করে। কর্মশালায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাইকা’র বিশেষজ্ঞ মো. শফিকুল ইসলাম।
উদ্বোধনী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন ইআরএফ সভাপতি রেফায়েতুল্লাহ মৃধা এবং সঞ্চালনা করেন ইআরএফের সহ-সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান।
পরিবেশগত সমস্যা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বিশেষজ্ঞরা সমুদ্র তীরবর্তী এলাকা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে এবং পর্যটকদের প্লাস্টিক উপাদান ও অন্যান্য বর্জ্য নিক্ষেপ থেকে বিরত রাখার জন্য কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন এবং আইন প্রণয়নের মাধ্যমে তা নিশ্চিত করতে হবে।
সমুদ্র সম্পদের সম্ভাবনার বর্ণনা দিয়ে প্রধান বক্তা বলেন, ব্লু ইকোনমি সম্ভাবনাকে বাস্তবে কাজে লাগানোর জন্য একটি ব্যাপক পরিকল্পনা এবং এর কঠোর বাস্তবায়ন আবশ্যক। সামুদ্রিক মাছ সংরক্ষণ, তাজা ও বিষমুক্ত রাখতে জাইকাকে প্রযুক্তিগত সহায়তা দেয়ার আহ্বান জানান তিনি।
বর্তমান ফিশারিজ এনহ্যান্সমেন্ট অ্যান্ড লাইভলিহুড প্রজেক্ট (এফইএলপি) শুঁটকি মাছ বা শুঁটকির উন্নত উৎপাদনের জন্য কাজ করছে।
জানা গেছে, সমুদ্র অর্থনীতি বিষয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি করতে প্রস্তাব দিয়েছে চীন। অবশ্য এরই মধ্যে ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় চুক্তিও হয়েছে। আগ্রহ রয়েছে জাপানেরও। এ ছাড়া, হাতে নেয়া হয়েছে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের কাজ। এর বাইরে সমুদ্র উপকূলীয় এলাকায় তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি হচ্ছে।
সব মিলিয়ে আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দেবে ব্লু ওসান ইকোনমি বা নীল সমুদ্র অর্থনীতি বা সংক্ষেপে সমুদ্র অর্থনীতি। এই সমুদ্র অর্থনীতি কার্যকর করতে ইসলামী ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (আইডিবি), মালয়েশিয়া সরকার এবং বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়নে মালয়েশিয়া থেকে একটি জাহাজ নির্মাণ করে আনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
বক্তারা বলেন, মালয়েশিয়া থেকে অনুসন্ধানী জাহাজ আসলে আমাদের সমুদ্রের মৎস্যসম্পদ কী পরিমাণ আছে তা জরিপ করা সম্ভব হবে। সমুদ্র অর্থনীতিকে কার্যকর ও ফলপ্রসূ করতে হলে দক্ষ জনশক্তি তৈরি করতে হবে। কিন্তু এই ক্ষেত্রে সরকারের তেমন কোনো উদ্যোগ নেই।
এদিকে, সমুদ্র অর্থনীতিকে উজ্জীবিত করতে সরকার সমুদ্র সৈকতের সৌন্দর্যকে ব্যবহার করে কক্সবাজার, সেন্টমার্টিন এবং কুয়াকাটার পর্যটন শিল্পকে আরও বিকশিত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বাংলাদেশে রয়েছে ১২০ কিলোমিটারের পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত- কক্সবাজার। এই সমুদ্র সৈকতকে ঘিরে পর্যটন শিল্প গড়ে তুলতে পারলে গোটা বাংলাদেশই বদলে যেতে পারে। আন্তর্জাতিক পর্যটকদের জন্য কক্সবাজার ও প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনকে আকর্ষণীয় করে তুলতে পারলে এ অঞ্চলে বিদেশি পর্যটকের ঢল নামবে। পর্যটন বিশেষজ্ঞদের মতে, এই বিপুলসংখ্যক পর্যটকের প্রায় ৭৩ শতাংশ ভ্রমণ করবেন এশিয়ার দেশগুলোতে।
কর্মশালায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ইআরএফের সাবেক সভাপতি শারমিন রিনভী, সাইফুল ইসলাম দিলাল, সাধারণ সম্পাদক এসএম রশিদুল ইসলাম, মো. নুরুল ইসলাম খান, আবদুর রহিম হারামাছি প্রমুখ।
উল্লেখ্য, ২০১২ সালে বাংলাদেশের সামনে সমুদ্রের এক বিশাল দিগন্ত উন্মোচন হয়। মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে বিবাদ মিটিয়ে ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটার সমুদ্র এলাকা লাভ করে দেশ। তাতে মোট সমুদ্রসীমার পরিমাণ দাঁড়ায় ১ লাখ ২১ হাজার ১১০ বর্গকিলোমিটার, যা আগে ছিল ২ হাজার ২৯৭ বর্গকিলোমিটার। এটি বাংলাদেশের প্রায় সমান। অর্থাৎ মূল ভূখণ্ড থেকে মাত্র ২৬ হাজার ৪৬০ বর্গকিলোমিটার ছোট। কিন্তু প্রায় এক যুগ অতিক্রান্ত হলেও গভীর সমুদ্র থেকে অর্জিত কোনো আয় দেশের জাতীয় আয়ে উল্লেখযোগ্য ভাবে যুক্ত হচ্ছে না।