বাংলারচিঠিডটকম ডেস্ক :
ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর দেশটিতে সবচেয়ে বড় আকারে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। ২৯ ডিসেম্বরের হামলায় ১২ জন নিহত এবং আরও ডজনখানেক আহত হয়েছে বলে দেশটির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। দক্ষিণ ও পশ্চিম কিয়েভের আবাসিক ভবনেও হামলা চালানো হয়েছে। খবর রয়টার্সের।
শহরটির সামরিক প্রশাসন জানিয়েছে, কিয়েভের একটি ক্ষতিগ্রস্ত গুদামের ধ্বংসাবশেষের নীচে দশজন লোক আটকা পড়েছে। এছাড়ও হামলায় দিনিপ্রো শহরে একটি প্রসূতি ওয়ার্ড ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি বলে গভর্নর জানিয়েছেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্রো কুলেবা কিয়েভের মিত্রদেরকে সমর্থন বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ‘আজ, লাখ লাখ ইউক্রেনীয় বিস্ফোরণের বিকট শব্দে জেগে উঠেছে। আমি চাই ইউক্রেনের সেই বিস্ফোরণের শব্দ যেন সারা বিশ্বে শোনা যায়।’
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রায় দুই বছর। চলতি বছরও শেষ হওয়ার দ্বারপ্রান্তে। বর্তমান পরিস্থিতি অনুযায়ী যুদ্ধক্ষেত্রে কিয়েভের ভবিষ্যত নির্ধারণের জন্য পশ্চিমা সামরিক ও আর্থিক সহায়তার মাত্রা কেমন হবে বা আদৌ সহায়তা তাদের দেওয়া হবে কিনা তা নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যেই দেশটিতে বড় মাপের বিমান হামলা চালিয়েছে মস্কো।
রাষ্ট্রপতি ভলোদিমির জেলেনস্কি টেলিগ্রামে বলেছেন, ‘রাশিয়া তার অস্ত্রাগারে যা কিছু আছে তা নিয়ে আক্রমণ করেছে… প্রায় ১১০টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়েছিল। এসবের বেশিরভাগই গুলি করে ধ্বংস করা হয়েছে।’
এয়ার ফোর্স কমান্ডার মাইকোলা ওলেশচুক বলেছেন, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে আক্রমণের পর থেকে রাশিয়ার সবচেয়ে বড় এরিয়াল ব্যারেজ ছিল আজকের হামলাটি। আকাশপথে সবচেয়ে বড় হামলা বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।
সেনাপ্রধান জেনারেল ভ্যালেরি জালুঝনি বলেছেন, হামলার লক্ষ্যবস্তু ছিল গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো এবং শিল্প ও সামরিক স্থাপনা। রাশিয়ার পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
জ্বালানি মন্ত্রণালয় দক্ষিণ ওডেসা, উত্তর-পূর্ব খারকিভ, সেন্ট্রাল দিনিপ্রপেত্রোভস্ক ও মধ্য কিয়েভ অঞ্চলে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কথা জানিয়েছে।
ইউক্রেন কয়েক সপ্তাহ ধরে সতর্ক করে আসছে, জ্বালানি ব্যবস্থায় বড় ধরনের বিমান হামলা চালাতে ক্ষেপণাস্ত্র মজুত করতে পারে রাশিয়া। গত বছর দেশটির পাওয়ার গ্রিডে হামলা করেছিল রাশিয়া। এতে অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়েছিল লাখ লাখ মানুষ।
দিনিপ্রোপেত্রোভস্কের কেন্দ্রীয় অঞ্চলে পাঁচজন নিহত হয়েছে। এই অঞ্চলের একটি শপিং সেন্টার, ব্যক্তিগত বাড়ি ও একটি ছয় তলা আবাসিক ভবনে ক্ষেপাণাস্ত্র আঘাত হেনেছে।
মেয়র ভিতালি ক্লিৎস্কো বলেছেন, কিয়েভের একটি গুদামে একজনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। আবাসিক ভবন ও একটি জনবসতিহীন ভবনেও আঘাত হেনেছে।
আঞ্চলিক গভর্নর বলেছেন, কৃষ্ণসাগর বন্দর শহর ওডেসায় তিনজন নিহত হয়েছে ও আবাসিক ভবনগুলোতে ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে দুই শিশুসহ কমপক্ষে ১৫ জন আহত হয়েছে। ন্যাটো সদস্য পোল্যান্ডের সীমান্তবর্তী লাভিভ অঞ্চলের একটি জটিল অবকাঠামো সুবিধায় ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাত নিশ্চিত করা হয়েছে।
আঞ্চলিক গভর্নর বলেছেন, লাভিভ শহরের একটি ক্ষতিগ্রস্ত বহুতল আবাসিক ভবনে একজন নিহত হয়েছেন। তিনটি স্কুল ও একটি কিন্ডারগার্টেনও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
আঞ্চলিক গভর্নর বলেছেন, উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় শহর খারকিভে ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় একটি গুদাম, শিল্প স্থাপনা, একটি চিকিৎসা সুবিধা ও একটি পরিবহন ডিপো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। হামলায় একজন নিহত ও ১১ জন আহত হয়েছেন।
ক্ষেপণাস্ত্র দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় শহর জাপোরিঝিয়ায় বেশ কয়েকটি অবকাঠামোতে আঘাত হানে। এতে একজন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।