জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, বাংলারচিঠিডটকম
জামালপুরের প্রবীণ লেখক সাংবাদিক ও জামালপুর প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা বাবুল আর নেই। তিনি গতকাল রবিবার দিবাগত রাত ১২টা ৫মিনিটে ঢাকায় ইউনাইটেড হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তাঁর বয়স হয়েছিল প্রায় ৬১ বছর।
সাংবাদিক মোস্তফা বাবুল গত ৪ নভেম্বর জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন। দুর্ঘটনায় তার মাথা ফেটে যায় এবং কোমরের হাড় ভেঙে যায়। ওইদিন রাতেই তাকে ঢাকায় ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এছাড়াও তিনি দীর্ঘদিন ধরে দুটি কিডনির জটিলতা, ডায়াবেটিস ও হার্টের অসুখে ভুগছিলেন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী মমতাজ বেগম, এক মেয়ে তানিয়া আক্তার ও এক ছেলে তারিক মাহদিসহ অনেক আত্মীয়স্বজন ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
তাঁর পরিবারের স্বজনরা জানান, আজ সোমবার (১৩ নভেম্বর) বিকেলের মধ্যে তাঁর মরদেহ জামালপুরে নিয়ে আসা হবে। জামালপুর প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে তাকে শ্রদ্ধা জানানো শেষে মাগরিব নামাজের পর জামালপুর মডেল মসজিদ প্রাঙ্গণে নামাজে জানাজা শেষে মরদেহ তাঁর গ্রামের বাড়ি সরিষাবাড়ী উপজেলার আওনা ইউনিয়নের কাশিনাথপুর গ্রামে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানে দ্বিতীয়বার জানাজা নামাজ শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে সমাহিত করা হবে।
সাংবাদিক মোস্তফা বাবুল ১৯৬৩ সালের ১ ফেব্রুয়ারি জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার আওনা ইউনিয়নের কাশিনাথপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা প্রয়াত ইছাহাক আলী রেলওয়ের কর্মচারী ছিলেন। মায়ের নাম রওশন আরা। জামালপুর শহরের মুকুন্দবাড়ী এলাকায় নিজ বাসায় স্থায়ীভাবে বসবাস করে সাংবাদিকতা পেশায় নিয়োজিত ছিলেন মোস্তফা বাবুল।
সাংবাদিকতার পেশাগত জীবনে তিনি দৈনিক বাংলা, দৈনিক জনতা, দৈনিক জনকণ্ঠ ও দৈনিক কালের কণ্ঠ পত্রিকায় জামালপুর জেলা প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সাপ্তাহিক পূর্বকথার সম্পাদক ও প্রকাশক ছিলেন তিনি। তিনি বেশ কিছুদিন সাপ্তাহিক জামালপুর বার্তায় সম্পাদকীয় বিভাগে দায়িত্ব পালন করেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশনের (বিটিভি) জামালপুর জেলা সংবাদদাতা ছিলেন। সাংবাদিকতায় কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি ২০১৫ সালে ময়মনসিংহ প্রেসক্লাব পদকে ভূষিত হন।
সাংবাদিকতার পাশাপাশি কবি ও লেখক হিসেবেও মোস্তফা বাবুলের ব্যাপক পরিচিতি রয়েছে। তার প্রকাশিত তিনটি কাব্যগ্রন্থ ‘নিষিদ্ধ স্লোগান’, ‘চারপাশে শুধু নীল মানুষ’ ও ‘শূন্যতার অভিমুখী’ পাঠক সমাদৃত হয়। সমাজের অস্পৃশ্য নারীদের জীবন কাহিনী নিয়ে লিখেছেন ‘বেশ্যাবৃত্তির সাতকাহন’ নামে একটি বই। এছাড়াও তিনি সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসানের বাবা মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ‘মতিয়র রহমান তালুকদার স্মারকগ্রন্থ’ লিখেছেন।
এদিকে সাংবাদিক মোস্তফা বাবুলের মৃত্যুতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম এমপি, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আইনজীবী মুহাম্মদ বাকী বিল্লাহ, সহসভাপতি ফারুক আহাম্মেদ চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক বিজন কুমার চন্দ, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শাহ মো. ওয়ারেছ আলী মামুন, জামালপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি হাফিজ রায়হান সাদা ও সাধারণ সম্পাদক লুৎফর রহমান, জামালপুর জেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি এম এ জলিল ও সাধারণ সম্পাদক মুকুল রানা, জামালপুর অনলাইন জার্নালিস্ট নেটওয়ার্কের সভাপতি বাংলারচিঠিডটকম সম্পাদক জাহাঙ্গীর সেলিম ও সাধারণ সম্পাদক কবি রাজন্য রুহানিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও সাংবাদিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ গভীর শোক প্রকাশ ও শোক সন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন।
আরও পড়ুন : সরিষাবাড়ীর নিজ গ্রামের বাড়িতে সাংবাদিক মোস্তফা বাবুলের দাফন সম্পন্ন