হাছানিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জামালপুর সদরের শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতি
বিশেষ প্রতিনিধি
সদিচ্ছা আর টিম ওয়ার্কের ফলে কীভাবে একটি প্রতিষ্ঠান সাফল্যের শীর্ষ পর্যায়ে উঠে আসতে পারে তার উদাহরণ সৃষ্টি করেছে হাছানিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। তিল তিল করে সফলগাঁথার পিছনে রয়েছে শিক্ষকদের মমত্ববোধ, অভিভাবকদের সহায়তা, শিক্ষা বিভাগের স্থানীয় কর্মকর্তাদের নিবিড় পর্যবেক্ষণ এবং শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয় আর পাঠে মনোযোগিতা। বিদ্যালয়টির উত্থান যেন একটি ছোট গল্পের মতো সকল মহলের কাছে সমাদৃত হয়েছে।
জামালপুর সদর উপজেলার অন্তর্গত জামালপুর পৌরসভর ইকবালপুর এলাকায় অবস্থিত হাছানিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ক’দিন আগেও ভবনের পলেস্তারা খসে খসে পড়েছে। বর্তমানে সুরম্য ভবন, স্বাস্থ্যসম্মত শৌচাগার, দৃষ্টিনন্দন বাগান, সুসজ্জিত শ্রেণিকক্ষ, শিশুবান্ধব প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণিকক্ষ সবমিলিয়ে শিশুদের জন্য যেন একটি স্বর্গরাজ্য। বিদ্যালয়টিতে আনন্দঘন পরিবেশে শ্রেণিপাঠদান কার্যক্রম পরিচালিত হয়। রয়েছে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম। সাতজন শিক্ষক নিরলসভাবে শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন। যার ফলশ্রুতিতে প্রতিবছরই শিক্ষার্থীরা বৃত্তি পেয়ে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় বিগত বছরেও নয়জন টেলেন্টপুলে এবং একজন সাধারণ গ্রেডে বৃত্তি পেয়েছে।
কেবল পড়ালেখাতেই নয়, শিক্ষার্থীদের নৈতিক মূল্যবোধ গঠনেও শিক্ষকদের নানা তৎপরতা চোখে পড়ার মতো। বিদ্যালয়টিতে আছে পাখিদের জন্য অভয়ারণ্য। শিশুরা শিখছে কেবল পাখিদের জন্যই নয়, সকল বন্যপ্রাণীদের বেঁচে থাকার অনুকূল পরিবেশ তৈরি করা তাদের নৈতিক দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। সততার চর্চা করছে সততা স্টোর ব্যবহারের মাধ্যমে। যে স্টোরে কোনো বিক্রেতা নেই সেখান থেকে দ্রব্য ক্রয় করে নিজেরাই মূল্য পরিশোধ করে। বিদ্যালয়টিতে আছে ভালো কাজের সিন্দুক। প্রতিদিন শিশুরা ন্যূনতম একটি ভালো কাজ করে। ভালো কাজের বিবরণ একটি চিরকুটে লিখে সেই সিন্দুকে জমা করে।
বিদ্যালয়টিতে আছে খেলার মাঠ। লেখাপড়ার পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা খেলাধুলা করে। আউটডোর গেমসের পাশাপাশি ইনডোর গেমসের ব্যবস্থা আছে। আছে লাইব্রেরি, পাঠ্যপুস্তকের পাশাপশি শিশুতোষ নানা বই পড়ার সুযোগ পাচ্ছে তারা। এছাড়াও শিক্ষার্থীরা নাচ, গান, আবৃত্তি ও অভিনয়ে পারদর্শী। জাতীয় পর্যায়ে কম্পিটিশনে সাফল্যের স্বাক্ষর রাখছে শিশুরা।
বিদ্যালয়টি পরিদর্শনে এসে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ। গত ১২ সেপ্টেম্বর পরিদর্শন করেন বিভাগীয় উপপরিচালক মোহাম্মদ আলী রেজা। বিদ্যালয়ের সার্বিক কার্যক্রম দেখে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন এবং দিকনির্দেশনামূলক পরামর্শ প্রদান করেন তিনি।
এবছর বিদ্যালয়টি উপজেলার শ্রেষ্ঠ বিদ্যালয় হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে।
এছাড়াও যারা উপজেলা পর্যায়ে প্রাথমিক শিক্ষা পদকে ভূষিত হয়েছেন তাঁরা হলেন- শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক (পুরুষ) হয়েছেন বাগেরহাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহীনুর রহমান, শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক (মহিলা) হয়েছেন কুজগর নবরত্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক লুৎফা বেগম, শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষক (পুরুষ) হয়েছেন শ্রীরামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ইলিয়াস উদ্দীন, শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষক (মহিলা) হয়েছেন শরীফপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সুবর্ণা খন্দকার, শ্রেষ্ঠ কাব শিক্ষক হয়েছেন চন্দ্রা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মু: ওহিদুল হক, শ্রেষ্ঠ বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটি হয়েছে সিংহজানী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। শ্রেষ্ঠ সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা হয়েছেন জামালপুর সদর উপজেলার সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ফরহাদ আলী।