জাহিদুর রহমান উজ্জল, মাদারগঞ্জ প্রতিনিধি, বাংলারচিঠিডটকম: স্বাধীনতার মাত্র পাঁচ দশকে ছয়জন শহীদের কবর পাঁকা রাস্তার নীচে চাপা পড়ে আছে। এটাই মাদারগঞ্জ উপজেলার একমাত্র বধ্যভূমি। ১৯৭১ সালে হানাদাররা এই স্থানে মুক্তিকামী বাঙালির ওপর নির্বিচারের গুলি চালিয়ে ছয়জনকে হত্যা করে। সেই ইতিহাসের কোন চিহ্ন নেই। এখানে নেই কোন স্মৃতিসৌধ বা নামফলক। নিচিহ্ন হতে বসেছে এই বধ্যভূমিটি।
জামালপুর জেলার মাদারগঞ্জ উপজেলার আদারভিটা ইউনিয়নের নগর গ্রামে এই বধ্যভূমিটি এখন পাঁকা রাস্তার নীচে চাপা পড়ে আছে।
১৯৯১ সালে এই বধ্যভূমির ওপর দিয়ে বহুজাতিক উন্নয়ন সংস্থা ‘কেয়ার’ একটি মাটির সড়ক নির্মাণ করে। তৎকালীন ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইসমাইল হোসেন রাস্তাটি পরিকল্পনা করে কেয়ার এর কাছে পাঠায়। পরে কেয়ার এই রাস্তা তৈরি করে। বধ্যভূমির ওপর রাস্তা নির্মাণ করে। তখন এলাকার মুক্তিযোদ্ধা ও কিছু সচেতন মানুষ প্রতিবাদ করলেও তা বন্ধ হয়নি। তখন প্রশাসন নড়েচড়ে বসে। কিন্তু কোন কাজ হয়নি।
পরবর্তীতে এই রাস্তাটি এলজিইডি পাকাকরণ করে। তখন থেকে স্থায়ীভাবে ছয় শহীদের কবর রাস্তার নীচে চাপা পড়ে যায়।
এলাকাবাসী জানান, ১৯৭১ সালের সেপ্টেম্বর মাসের কোনো এক সময় পাকিস্তানি সেনাদের একটি দল আক্রমণ করার জন্য সরিষাবাড়ীর ভাটারা থেকে মাদারগঞ্জ অভিমুখে রওনা দেয়। তারা কয়েকটা জিপে মাদারগঞ্জ সদরে আসছিল। পথ ভুল করে মাদারগঞ্জের আদারভিটা ইউনিয়নের নগর গ্রামের ভেতর ঢুকে পড়ে। এ সময় এই গ্রামের মেছের আলী নামের এক বাকপ্রতিবন্ধী যুবক তাদের জিপে ইট নিক্ষেপ করে। সঙ্গে সঙ্গে তারা জিপ থেকে নেমে মেছের আলীকে গাছের সঙ্গে বেঁধে গুলি করে হত্যা করে।
এ সময় গ্রামের সাহসী যুবক আ. গনি, কদ্দুছ, নুর হোসেন, ঘোতা মিয়া ও ভোলা মিয়া প্রতিবাদ করলে হায়েনারা তাদের ওপর নির্বিচারে ব্রাশ ফায়ার চালায়। সঙ্গে সঙ্গে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তারা। দু-তিন দিন পর অন্য গ্রাম থেকে লোকজন এসে ছয় শহীদের লাশ একটি ডোবা থেকে তুলে সড়কের পাশে কবর দেয়।
স্বাধীনতার পর তৎকালীন আওয়ামী লীগের এমপি করিমুজ্জামান তালুকদার, আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রফিক উদ্দিন তালুকদারসহ প্রশাসনের লোকজন গণকবরটি পরিদর্শন করেন। এইটিকে বধ্যভূমি হিসেবে ঘোষণা করেন। কিন্তু পাঁচ দশকেই বধ্যভূমি নিশ্চিহ্ন হতে বসেছে।