ঢাকা ০৩:০৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ২২ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
ইসরায়েলকে দুঃসংবাদ দিলেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট, ক্ষেপলেন নেতানিয়াহু যুক্তরাষ্ট্রের দিকে ধেয়ে আসছে ‘মিল্টন’ প্রথম টি-টোয়েন্টিতে ভারতের কাছে ৭ উইকেটে পরাজিত বাংলাদেশ আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে ব্রাজিলের ‘হেক্সা’ জয় বৃষ্টির পানিতে সরিষাবাড়ী স্টেশনে ব্যাপক জলাবদ্ধতা, ব্যাপক দুর্ভোগ মাদারগঞ্জের নলছিয়া এ কে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দুর্বৃত্তের হানা, আলমিরার নথিপত্রে আগুন নকলায় ইয়াবা ও গাঁজাসহ মাদক কারবারি গ্রেপ্তার দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে একটি মহল ষড়যন্ত্র করার পাঁয়তারা করছে : ওয়ারেছ আলী মামুন বিএফএ জামালপুর নতুন কমিটিতে সভপতি চান মিয়া, সম্পাদক নবাব দেওয়ানগঞ্জে জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন দিবস পালিত

শেরপুরের জগৎপুর গণহত্যা ও ইতিহাসের স্মারক স্মৃতিসৌধ নির্মাণ

শেরপুর, ঝিনাইগাতী, শ্রীবরদী এলাকার বিশিষ্ট নাগরিক ও রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে স্মৃতি সৌধের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়।ছবি: বাংলারচিঠিডটকম

শেরপুর, ঝিনাইগাতী, শ্রীবরদী এলাকার বিশিষ্ট নাগরিক ও রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে স্মৃতি সৌধের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়।ছবি: বাংলারচিঠিডটকম

:উৎপল কান্তি ধর:
প্রত্যন্ত গ্রাম জগৎপুর। শেরপুর জেলা শহর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার উত্তর পশ্চিম দিকে ঝিনাইগাতী উপজেলার ধানশাল ইউনিয়নে অবস্থিত জগৎপুর গ্রাম। ধানশাল ইউনিয়নের উত্তর দিকে কাংশা ইউনিয়ন তার উত্তর দিকে ভারতীয় সিমানা। জগৎপুর গ্রাম থেকে ভারতীয় সীমানার দুরত্ব প্রায় ১০ কি.মি.। ২৫শে এপ্রিলের মধ্যে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী শেরপুর অঞ্চলে ঢুকে পড়ে ও গণহত্যা শুরু করে।

৩০ শে এপ্রিল ১৯৭১, জগৎপুর গ্রামের সাধারণ মানুষ ভোর হওয়ার সাথে সাথে নিত্যদিনের মত গৃহস্থালির কাজকর্ম সারছিলো। ভারতে আশ্রয় নেয়ার আশায় বহুসংখ্যক শরণার্থী জগৎপুর গ্রামে আশ্রয় নিয়েছিলো, কারণ ভারতীয় সীমান্ত খুব বেশি দুরে নয়।

জগৎপুর গ্রামের এক কিশোর নাম ভজন চন্দ্র দে, সকাল বেলা তার মার কাছে ভাত খাইতে চাইলো। বললো, মা পাট শাক দিয়ে ভাত খাবো। এ কথা বলে ভজন কোথায় চলে গেল। ভজনের মা জ্যোতি রানী দে শাক তুলে ভাত রাধতে বসে গেলেন। এমনি সময় গ্রামের দক্ষিণ দিক থেকে গুলির শব্দ, মানুষের চিৎকার, আর্তনাদ। সবাই মৃত্যুভয়ে পালাচ্ছে। এমন সময় ভজন দৌড়ে এসে মাকে বললো, মা পালাও পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর লোকেরা গুলি করে সবাইকে মেরে ফেলছে।

সেনাবাহিনীর লোকেরা ইতিমধ্যেই জ্যোতি রানী দের উঠোনে এসে পড়েছে। ভজনকে দেখা মাত্র গুলি চালায় পাকিস্তানি সেনারা। মায়ের সামনেই ভজন ছটফট করে মারা যায়। জগৎপুর গ্রামে সেদিন যাকে সামনে পেয়েছে তাকেই গুলি করেছে পাকিস্তানি সেনা সদস্যরা। শিশু, নারী, বৃদ্ধ, যুবক কেউ রেহাই পায়নি সেদিন। তারপর বাড়িঘরে লুটপাট চালিয়ে আগুন ধরিয়ে সারা গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়। এ সময় এদেশীয় ১০-১৫ জন পাকিস্তানি সহযোগী রাজাকার পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সঙ্গে ছিলো।

নৃশংস এই গণহত্যায় জগৎপুর গ্রামবাসী, আশেপাশে গ্রামের মানুষ ও শরনার্থীসহ শহীদ হন প্রায় দেড়শতাধিক বাঙালি। জ্যোতি রানী দে এখনো বেঁচে আছেন, বয়স ৯০ ছাড়িয়ে গেছে, বয়স হলেও ৩০ এপ্রিল জগৎপুর গণহত্যার নারকীয় ঘটনার কথা মনে করতে পারেন। কথা বলতে বলতে চোখের পানিতে বুক ভাসান জ্যোতি রানী দে।

জগৎপুর গ্রামের অন্যান্য পরিবারগুলিও ৩০ এপ্রিল ১৯৭১ এর ঘটনা বর্ণনা করতে, করতে চোখের জলে বুক ভাসায়। মুক্তিসংগ্রাম জাদুঘর জগৎপুর গণহত্যার প্রত্যক্ষর্দশীর ভাষ্য, উপাদান, তথ্য, স্মারক সংগ্রহের কাজ শুরু করেছে বেশ কিছু দিন আগে থেকে।

৩০ এপ্রিল ১৯৭১ কেন জগৎপুর গ্রামকে টার্গেট করা হলো? এলাকার মানুষের ভাষ্য – জগৎপুর গ্রামটি ছিলো হিন্দু ও আওয়ামী লীগ অধ্যুষিত এলাকা।

মুক্তিসংগ্রাম জাদুঘর শেরপুর সদর উপজেলা নেটওয়ার্ক কমিটির উদ্যোগে জগৎপুর গ্রামে শহীদের স্মরণে স্মৃতি সৌধ নির্মাণ হবে। আর এ কাজে শহীদ পরিবারের দু সস্তান বিমল চন্দ্র দে ও সজল চন্দ্র দে জমি দান করেছেন। ৩০ এপ্রিল জগৎপুর গণহত্যা দিবসে শেরপুর, ঝিনাইগাতী, শ্রীবরদী এলাকার বিশিষ্ট নাগরিক ও রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে স্মৃতি সৌধের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। সকলের সহযোগিতায় জগৎপুর গ্রামে শহীদের স্মরণে স্মৃতি সৌধ নির্মাণ হবে এই প্রত্যাশা।

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

ইসরায়েলকে দুঃসংবাদ দিলেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট, ক্ষেপলেন নেতানিয়াহু

শেরপুরের জগৎপুর গণহত্যা ও ইতিহাসের স্মারক স্মৃতিসৌধ নির্মাণ

আপডেট সময় ০৯:৩৪:২০ অপরাহ্ন, সোমবার, ১০ এপ্রিল ২০২৩
শেরপুর, ঝিনাইগাতী, শ্রীবরদী এলাকার বিশিষ্ট নাগরিক ও রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে স্মৃতি সৌধের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়।ছবি: বাংলারচিঠিডটকম

:উৎপল কান্তি ধর:
প্রত্যন্ত গ্রাম জগৎপুর। শেরপুর জেলা শহর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার উত্তর পশ্চিম দিকে ঝিনাইগাতী উপজেলার ধানশাল ইউনিয়নে অবস্থিত জগৎপুর গ্রাম। ধানশাল ইউনিয়নের উত্তর দিকে কাংশা ইউনিয়ন তার উত্তর দিকে ভারতীয় সিমানা। জগৎপুর গ্রাম থেকে ভারতীয় সীমানার দুরত্ব প্রায় ১০ কি.মি.। ২৫শে এপ্রিলের মধ্যে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী শেরপুর অঞ্চলে ঢুকে পড়ে ও গণহত্যা শুরু করে।

৩০ শে এপ্রিল ১৯৭১, জগৎপুর গ্রামের সাধারণ মানুষ ভোর হওয়ার সাথে সাথে নিত্যদিনের মত গৃহস্থালির কাজকর্ম সারছিলো। ভারতে আশ্রয় নেয়ার আশায় বহুসংখ্যক শরণার্থী জগৎপুর গ্রামে আশ্রয় নিয়েছিলো, কারণ ভারতীয় সীমান্ত খুব বেশি দুরে নয়।

জগৎপুর গ্রামের এক কিশোর নাম ভজন চন্দ্র দে, সকাল বেলা তার মার কাছে ভাত খাইতে চাইলো। বললো, মা পাট শাক দিয়ে ভাত খাবো। এ কথা বলে ভজন কোথায় চলে গেল। ভজনের মা জ্যোতি রানী দে শাক তুলে ভাত রাধতে বসে গেলেন। এমনি সময় গ্রামের দক্ষিণ দিক থেকে গুলির শব্দ, মানুষের চিৎকার, আর্তনাদ। সবাই মৃত্যুভয়ে পালাচ্ছে। এমন সময় ভজন দৌড়ে এসে মাকে বললো, মা পালাও পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর লোকেরা গুলি করে সবাইকে মেরে ফেলছে।

সেনাবাহিনীর লোকেরা ইতিমধ্যেই জ্যোতি রানী দের উঠোনে এসে পড়েছে। ভজনকে দেখা মাত্র গুলি চালায় পাকিস্তানি সেনারা। মায়ের সামনেই ভজন ছটফট করে মারা যায়। জগৎপুর গ্রামে সেদিন যাকে সামনে পেয়েছে তাকেই গুলি করেছে পাকিস্তানি সেনা সদস্যরা। শিশু, নারী, বৃদ্ধ, যুবক কেউ রেহাই পায়নি সেদিন। তারপর বাড়িঘরে লুটপাট চালিয়ে আগুন ধরিয়ে সারা গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়। এ সময় এদেশীয় ১০-১৫ জন পাকিস্তানি সহযোগী রাজাকার পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সঙ্গে ছিলো।

নৃশংস এই গণহত্যায় জগৎপুর গ্রামবাসী, আশেপাশে গ্রামের মানুষ ও শরনার্থীসহ শহীদ হন প্রায় দেড়শতাধিক বাঙালি। জ্যোতি রানী দে এখনো বেঁচে আছেন, বয়স ৯০ ছাড়িয়ে গেছে, বয়স হলেও ৩০ এপ্রিল জগৎপুর গণহত্যার নারকীয় ঘটনার কথা মনে করতে পারেন। কথা বলতে বলতে চোখের পানিতে বুক ভাসান জ্যোতি রানী দে।

জগৎপুর গ্রামের অন্যান্য পরিবারগুলিও ৩০ এপ্রিল ১৯৭১ এর ঘটনা বর্ণনা করতে, করতে চোখের জলে বুক ভাসায়। মুক্তিসংগ্রাম জাদুঘর জগৎপুর গণহত্যার প্রত্যক্ষর্দশীর ভাষ্য, উপাদান, তথ্য, স্মারক সংগ্রহের কাজ শুরু করেছে বেশ কিছু দিন আগে থেকে।

৩০ এপ্রিল ১৯৭১ কেন জগৎপুর গ্রামকে টার্গেট করা হলো? এলাকার মানুষের ভাষ্য – জগৎপুর গ্রামটি ছিলো হিন্দু ও আওয়ামী লীগ অধ্যুষিত এলাকা।

মুক্তিসংগ্রাম জাদুঘর শেরপুর সদর উপজেলা নেটওয়ার্ক কমিটির উদ্যোগে জগৎপুর গ্রামে শহীদের স্মরণে স্মৃতি সৌধ নির্মাণ হবে। আর এ কাজে শহীদ পরিবারের দু সস্তান বিমল চন্দ্র দে ও সজল চন্দ্র দে জমি দান করেছেন। ৩০ এপ্রিল জগৎপুর গণহত্যা দিবসে শেরপুর, ঝিনাইগাতী, শ্রীবরদী এলাকার বিশিষ্ট নাগরিক ও রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে স্মৃতি সৌধের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। সকলের সহযোগিতায় জগৎপুর গ্রামে শহীদের স্মরণে স্মৃতি সৌধ নির্মাণ হবে এই প্রত্যাশা।