মামলা নিষ্পত্তিতে জামালপুরের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ এর রেকর্ড

নিজস্ব প্রতিবেদক, বাংলারচিঠিডটকম: জামালপুর জেলার সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মো. জুলফিকার আলী খাঁন বিগত ২০২০ সালের ১৫ মার্চে জামালপুর জেলা ও দায়রা জজ হিসাবে যোগদান করার পরবর্তীতে ক্রমাগতভাবে মামলা নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে অতীতের সকল ইতিহাস ভেঙে নতুন রেকর্ড স্থাপন করার খবর পাওয়া গেছে।

গত ৩০ নভেম্বর চাকরি থেকে অবসরের দিন পর্যন্ত ২০২০, ২০২১ এবং ২০২২ খ্রিস্টাব্দে সর্বমোট ৫৮৯ কার্য দিবসে দেওয়ানী ও ফৌজদারী মিলে ৬ হাজার ৮২০টি মামলা নিষ্পত্তি করেন। ওই নিষ্পত্তি পর্যালোচনায় দেখা যায় এই পর্যন্ত জামালপুর জেলায় বিগত ৪০ বছরে আগত সকল জেলা জজ মহোদয়গণের মধ্যে সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মো. জুলফিকার আলী খাঁন তার কার্যসময়ে সবচেয়ে বেশী সংখ্যক মামলা নিষ্পত্তি করেছেন।

নিষ্পত্তির মধ্যে দেওয়ানী মামলায় ২০২০ সনের দেওয়ানী আপীল, পারিবারিক আপীল, টাকা আপীল, অর্পিত আপীল, নির্বাচন আলী, মিস আপীল, সিভিল রিভিশন, মিস কেইস, দেওলীয়া, মিস ডিংসহ সর্বমোট ২৩৪টি মামলা নিষ্পত্তি করেন। ২০২১ সনে সর্বমোট ৩৪৩টি এবং ২০২২ সনে ৪৩৫টি মামলাসহ বিগত ৩ বছরে ১ হাজার ১২টি দেওয়ানী মামলা নিষ্পত্তি করেছেন।

এছাড়া ফৌজদারী মধ্যে উল্লেখ্য যোগ্য হচ্ছে দায়রা মামলা, স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল মামলা, স্পেশাল মামলা, এসিড মামলা, ক্রিমিনাল আপীল, ক্রিমিনাল রিভিশন, ক্রিমিনাল মিস কেইস, জন নিরাপত্তা, সন্ত্রাস এই ক্যাটাগরীতে সর্বমোট ২০২০ সালে ১ হাজার ৬৭৮টি, ২০২১ সালে ১ হাজার ৭৯৫টি, ২০২২ সনে ২ হাজার ৩১৪টি। সর্বমোট দেওয়ানী ও ফৌজদারী মামলা নিষ্পত্তি করা হয়েছে ২০২০ সালে ১ হাজার ৯১২টি, ২০২১ সালে ২ হাজার ১৩৮টি এবং ২০২২ সালে ২ হাজার ৭৬৯টি। ৩ বছরে ৬ হাজার ৮২০টি মামলা মাত্র ৫৮৯ কার্য দিবসে নিষ্পত্তি করেন এবং সমগ্র জেলায় এই নিষ্পত্তির বিষয়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয়।

বিজ্ঞ সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মহোদয়ের আদালতে করোনার সময় দীর্ঘ দিন নিয়মিত আদালতের বিচার কার্যক্রম বন্ধ থাকার কারণে মূল মামলার রায় প্রচারসহ নিয়মিত বিচার কার্য প্রায় ১৫০ কার্যদিবস বন্ধ থাকা সত্বেও পরবর্তীতে অতীতের সকল ইতিহাসের মধ্যে সর্বোচ্চ সংখ্যক মামলা নিষ্পত্তি করে গেছেন।

জানা যায়, বিজ্ঞ সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ ডিজিটাল পদ্ধতির মাধ্যম ব্যবহার করে ভয়েস রেকর্ডের মাধ্যমে নতুন ডিজিটাল প্রযুক্তির উদ্ভাবনী শক্তি ব্যবহার করে নিষ্পত্তি করে গেছেন। এছাড়া আদালতের কার্যক্রমে সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ তাঁর অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে গতি সঞ্চার করেছেন এবং আদালতে তিনি নানামুখী উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন। সেই কার্যক্রম গুলোর দ্বারা বর্তমানে বিচার প্রার্থী জনগণ এবং বিচার প্রার্থীরা আদালতের স্টাফসহ, আদালতের বিচারকবৃন্দ, কর্মকর্তা কর্মচারীবৃন্দ সকলেই সুবিধা ভোগ করেছেন।

সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মো. জুলফিকার আলী খাঁন যে সকল উন্নয়ন করেছেন তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো জামালপুর জজ কোর্টের আইনজীবীগণের গাড়ি রাখার জন্য ব্যক্তিগত অর্থায়নে ও ব্যক্তি উদ্যোগে ৩ হাজার ৬০০ স্কয়ার ফুট এর একটি টিনসেড পাকা গাড়ির গ্যারেজ নির্মাণ করেন। জজ কোর্ট ভবনের উত্তর পাশে সুন্দর একটি বাগান করেন। বিচারকদের গাড়ির গ্যারেজের পাশেই একটি পানির ফোয়ারা করেন। বিচার প্রার্থী জনগণের বিচার কার্য দ্রুত সম্পন্ন করার লক্ষ্যে বিচারকগণকে বিভিন্ন প্রকার পরামর্শ ও নির্দেশনা প্রদান করেন। আদালতের কর্মচারীদেরকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ করে তোলেন যার সুবিধা বিচার প্রার্থী জনগণ ভোগ করে যাচ্ছেন।

বাৎসরিক কনফারেন্সের মাধ্যমে বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা, কর্মচারী ও জেলার বিভন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা এবং আইনজীবীসহ বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গের সমন্বয়ে সভা করে মামলা দ্রুত নিষ্পত্তিতে বাধা দূরীকরণসহ বিভিন্ন প্রকার পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। বিশেষ করে জামালপুর জেলা জজ আদালতে বিগত ১৭ জুলাই মামলা নিষ্পত্তি সংক্রান্ত মনিটরিং কমিটি ময়মনসিংহ বিভাগের প্রধান হিসাবে দায়িত্ব প্রাপ্ত বিচারপতি মো. জাকির হোসেন এবং তাঁর সাথে বিচারপতি মো. মাহমুদ হাসান তালুকদার জেলা জজ আদালত পরিদর্শনে আসেন।

পরিদর্শনে এসে সিনিয়র সিনিয়র জেলা জজ মহোদয়ের আদালতের মামলা নিষ্পত্তির বিষয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং ভূয়সী প্রশংসা করেন। বিচারপতিগণ বিজ্ঞ বিচারকের সাথে এজলাসে বসে বিচার কার্যক্রম দেখেন এবং বিচারকার্য বিষয়ে বিচারপতি মহোদয়গণ সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন।

এছাড়া জামালপুর জেলার আইনজীবী সমিতির আইনজীবীবৃন্দ সদস্যরা বিচারপতি মো. জাকির হোসেন এবং বিচারপতি মো. মাহমুদ হাসান তালুকদারের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করে এ আদালতের মামলা নিষ্পত্তি বিষয়ে বিজ্ঞ বিচারকের দূরদর্শিতা ও পরিশ্রমের ফলে মামলা নিষ্পত্তির হার বেড়ে যায় সে বিষয়ে জেলা আইনজীবী সমিতি হতে বিচারপতি মহোদয়ের নিকট ভূয়সী প্রশংসা এবং সন্তোষ প্রকাশ করা হয়।

এ বিষয়ে জেলা আইজীবী সমিতির সদস্য হিসেবে, জামালপুর জেলার জনৈক আইনজীবী জানান, এই আদালতের বিচারক মহোদয়ের মামলা নিষ্পত্তির হার সর্বোচ্চ এবং বিজ্ঞ বিচারক মহোদয়ের এই আদালতে সন্ধ্যা শেষে রাত অবধি বিচারকার্যক্রম চলে। জেলার সর্বত্র এই আদালতে মামলা নিষ্পত্তি হয় মর্মে সংবাদ প্রচারিত হয়ে যায়। বিশেষ করে বিজ্ঞ বিচারক মহোদয় পুরাতন মামলাগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিষ্পত্তির জন্য অল্প সময়ের ব্যবধানে ধার্য তারিখ রেখে সেগুলো নিষ্পত্তিতে সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছেন। ইতোমধ্যে অনেকগুলো পুরাতন মামলা চূড়ান্ত শুনানীর পর্যায়ে রয়েছে এবং বিজ্ঞ বিচারক মহোদয় নিজেই তদারকি করে এবং নিজেই তারিখ দেন। এছাড়া আদালতে বিচার প্রার্থী জনগণ মামলা নিষ্পত্তিতে তাদের উচ্ছ্বসিত সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন।

তিনি আরও বলেন, বিজ্ঞ বিচারক মহোদয় রাত-দিন পরিশ্রম করেন। আমরা আশা করি এইভাবে মামলা নিষ্পত্তি হলে জনগণের নিকট বিচার ব্যাবস্থা সম্পর্কে ইতিবাচক ধারণা প্রতিষ্ঠিত হবে এবং বিচার সংশ্লিষ্ট প্রার্থীদের ভোগান্তি অনেকাংশে কমে যাবে। সমগ্র জেলায় ইতোমধ্যে জেলা জজ আদালত এর রোল মডেল হিসেবে স্থাপিত হয়েছে।

বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, জামালপুর জেলার সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মো. জুলফিকার আলী খাঁন, জামালপুর জেলায় মামলা নিষ্পত্তিতে অতীতের সকল রেকর্ড অতিক্রম করেছেন। তিনি ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করে ভয়েস রেকর্ডের মাধ্যমে মামলা নিষ্পত্তি করেন। সেই ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন আদালতে বিশেষ করে জেলা জজ আদালতে মামলা নিষ্পত্তিতে বর্তমানে অতীতের সকল রেকর্ড অতিক্রম করেছে । এছাড়া বিজ্ঞ সিনিয়র জেলা জজ মহোদয় বিচার প্রার্থীসহ সকলের নিরাপত্তার জন্য সিসি টিভি স্থাপন করেছেন। জজশীপের বিচারপ্রার্থীদের বসার জন্য প্রতিটি এজলাসের সামনে স্টিলের বেঞ্চ স্থাপন করেছেন, জজ শীপের প্রতিটি ফ্লোরে সুপেয় খাবার পানির ব্যবস্থা করেছেন, মহিলাদের জন্য পৃথক টয়লেটের ব্যবস্থাপনা করেছেন, মাতৃদুগ্ধ পান সহায়তা কক্ষ স্থাপন করেছেন। বিচারক ও আইনজীবিদের চিত্ত বিনোদনের জন্য দুইটি বসার পাকা চত্বর নির্মাণ করেছেন। অতি সম্প্রতি প্রকাশিত মহামান্য সুপ্রীম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের মামলা নিষ্পত্তি সংক্রান্ত মনিটরিং কমিটির প্রতিবেদনে সারাদেশের সব কয়টি জেলা জজ আদালতে মামলা দায়ের ও নিষ্পত্তির হার এর অনুপাত শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছে।

প্রত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যায়, জামালপুর জেলা জজ আদালত ও জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেসি ১৩৬% নিষ্পত্তি করে প্রথম দশটি জেলার মধ্যে সম্মিলিতভাবে পঞ্চম স্থান অর্জন করেছে।

এই সকল কার্যক্রম অতীতের যে কোন কাজের চেয়ে জামালপুর জেলার সদ্য অবসর গ্রহণকারী সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ জুলফিকার আলী খাঁন মহোদয়কে জামালপুর জেলার বিচার প্রার্থীদের নিকট চিরস্মরনীয় করে রাখবে বলেই সংশ্লিষ্ট সুধীজনের বিশ্বাস। আমরা আশা করি এই মহান বিচারক তার অবসর জীবনে সুস্থ ও নিরাপদে থাকবেন। জামালপুরবাসী কোন দিন আপনাকে ভুলবে না।