নিশিন্দিতে অন্ত:সত্ত্বা স্ত্রী হত্যা : র‌্যাব ধরেছে পাষণ্ড স্বামী আসামি আরিফকে

র‌্যাবের অভিযানে গ্রেপ্তার আসামি মো. আরিফ। ছবি: বাংলারচিঠিডটকম

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, বাংলারচিঠিডটকম:
জামালপুর সদর উপজেলার গহেরপাড়া নিশিন্দি গ্রামের নয় মাসের অন্ত:সত্ত্বা স্ত্রী মীম আক্তার (২০) হত্যা মামলার প্রধান আসামি পাষণ্ড স্বামী আরিফকে (২২) গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব-১৪। মামলাটির ছায়া তদন্তে নেমে ঘটনার ১৬ দিনের মাথায় ৩ নভেম্বর রাতে ময়মনসিংহ জেলার গফরগাঁও উপজেলার ঘাঘড়া এলাকা থেকে আরিফকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আরিফ গহেরপাড়া নিশিন্দি গ্রামের মো. আলী আকবরের ছেলে।

র‌্যাব জানায়, জামালপুর সদরের গহেরপাড়া নিশিন্দি গ্রামের মো. আরিফ তিন লাখ টাকা যৌতুক নিয়ে একই গ্রামের মোক্তার হোসেনের মেয়ে মীম আক্তারকে বিয়ে করেন। পরবর্তীতে আরিফ ও তার পরিবারের সদস্যরা আরও যৌতুকের জন্য মীম আক্তারকে চাপ দিতে থাকেন। মীমের বাবা আরও যৌতুকের টাকা না দিতে পারায় আরিফ ও তার পরিবারের স্বজনরা মীম আক্তারকে বিভিন্ন সময় নির্যাতন করতেন। ১৮ সেপ্টেম্বর রাত আনুমানিক ১১টার দিকে আরিফ তার পরিবারের স্বজনদের সহায়তায় নয় মাসের অন্ত:সত্ত্বা স্ত্রী মীম আক্তারকে অমানুষিক নির্যাতন করলে মীম আক্তার গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। একই সাথে আরিফ নির্যাতনের কথা আড়াল করে মীম আক্তার অসুস্থ হয়ে পড়েছে বলে মীমের বাবাকে ফোন করে আরিফ ওই রাতেই বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়।

খবর পেয়ে মীমের বাবা মোক্তার হোসেন ওই রাতে মীমকে অজ্ঞান অবস্থায় ওই বাড়ি থেকে উদ্ধার করে প্রথমে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় পরদিন তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। ২৫ সেপ্টেম্বর দুপুরে মীম আক্তার সেখানে মারা যান। এ ঘটনায় নিহতের বাবা মোক্তার হোসেন বাদী হয়ে মীমের স্বামী মো. আরিফকে প্রধান আসামি এবং আরিফের বাবা, মা, ভাই, ভাবী ও বোনকে আসামি করে জামালপুর সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে দায়ের করা ওই মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে যৌতুকের জন্য ভুক্তভোগী মীম আক্তারকে মারপিট করে হত্যা এবং গর্ভে থাকা জীবিত শিশুর মৃত্যু ঘটানোর অভিযোগ আনা হয়।

পরবর্তীতে চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনার প্রকৃত রহস্য উদঘাটন ও পলাতক আসামি আরিফকে গ্রেপ্তারের লক্ষ্যে সদর থানা পুলিশের পাশাপাশি ছায়া তদন্তে নামে র‌্যাবের জামালপুর ক্যাম্পের একটি আভিযানিক দল। গোপনতথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাবের দলটি ঘটনার ১৬ দিনের মাথায় ময়মনসিংহ জেলার গফরগাঁও উপজেলার ঘাঘড়া এলাকা থেকে ৩ নভেম্বর গভীর রাতে আরিফকে গ্রেপ্তার করেছে। আরিফ ওই গ্রামে তার এক আত্মীয়ের বাড়িতে আত্মগোপনে ছিলেন।

র‌্যাব-১৪ জামালপুর ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার স্কোয়াড্রন লিডার আশিক উজ্জামান ৪ নভেম্বর এক প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার আসামি মো. আরিফ তার স্ত্রীকে হত্যার নির্মম ঘটনার লোমহর্ষক বর্ণনা দেয় এবং এই হত্যাকাণ্ডটি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার লক্ষ্যে আরিফ তার বাবা মো. আলী আকবর, মা পারুল বেগম, ভাই মো. পলাশ, ভাবী মোছা. নিলুফা ও বোন মোছা. আল্পনার সহায়তায় ভিকটিমের গলায় উড়না পেঁচিয়ে ঘরের ভিমের সাথে ঝুলিয়ে রেখেছিল বলে স্বীকার করেছে। গ্রেপ্তার আরিফকে জামালপুর সদর থানায় হস্তান্তরসহ এ সংক্রান্ত আইনি পদক্ষেপের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।