মেলান্দহে হারিয়ে যাওয়া পালাগানের আসর

মেলান্দহে হয়ে গেল পালাগানের আসর। ছবি: বাংলারচিঠিডটকম

মুত্তাছিম বিল্লাহ্ , মেলান্দহ প্রতিনিধি, বাংলারচিঠিডটকম: গ্রামবাংলার লোকসংস্কৃতির অত্যন্ত জনপ্রিয় ঐতিহ্যবাহী উৎসব পালাগানের আসর। পালাগানে ফুটে উঠে প্রকৃতি, মাটি ও মানুষের জীবন-জিজ্ঞাসা। থাকে সাম্য ও মানবতার বাণী। তাই আদিকাল থেকেই গ্রামবাংলার মাটি ও মানুষের গান হিসেবে পরিচিত পালাগান। আগে গ্রামে গ্রামে অনুষ্ঠিত হতো পালাগানের আসর। সারাদিনের কাজ কর্ম সেরে রাতে গান শুনতে আসরে সমাগম ঘটত গান প্রেমী বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার হাজার হাজার মানুষের। কালের পরিক্রমায় হারিয়ে গেছে পালাগান, তাই এখন আর রাতে পালাগানের আসর দেখা যায় না।

হরিয়ে যাওয়া পুরনো গ্রামীণ ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে পালাগানের আয়োজন করে উপজেলার খাশিমারা গ্রামের কিছু প্রবীণ ব্যক্তি। ৩১ অক্টোবর রাতে উপজেলার মাহমুদপুর ইউনিয়নের খাশিমারা গ্রামের ফজল মেম্বারের বাড়ির উঠানে অনুষ্ঠিত হয় এ পালাগানের আসর।

খাশিমারা গ্রামের কলেজ শিক্ষার্থী বিকুল মিয়া জানান, পালাগানের কথা মুরুব্বীদের কাছে শুনেছি, আজ মাটিতে খড়ের উপর বসে পালাগান শুনতেছি আমার কাছে খুব ভালো লাগছে। অপসংস্কৃতি রোধে পালাগানকে বাঁচিয়ে রাখা প্রয়োজন।

কোন প্রকার প্রচার-প্রচারণা ছাড়াই পালাগানের আসরে ভিড় করে বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষ। কিছু সময় গান এরপর কিচ্ছা আবার কিছু কৌতুকের মাধ্যদিয়ে রাত ৮টা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলে পালাগানের আসর। হরমুজ বাদশার পালাগান পরিবেশন করেন জেলার বকশীগঞ্জ উপজেলার ইদু বয়াতী।

আয়োজকদের মধ্যে খাশিমারা গ্রামের সাবেক মেম্বার ফজল মিয়া জানান, পালাগান আসলে আমাদের বাঙালিদের ঐতিহ্য, অনেক দিন থেকে পালাগান বন্ধ থাকায় আমাদের নতুন প্রজন্ম পালাগান ভুলে যাচ্ছে এবং আমাদেরও অনেকদিন থেকে পালাগান শুনা হয়না তাই এ পালাগানের আসরের আয়োজন করা।

কোন শব্দ যন্ত্র না ব্যবহার করেই পালাগান পরিবেশন করেন বয়াতি, একজন দোতরা বাদক ও পেটের সাথে মাটির পাতিল লাগিয়ে বিশেষ প্রক্রিয়ায় ঢোল বাজান একজন বাদক। অন্যজন থাকেন বয়াতির প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য। এই চরজনেই মিলেই পালাগান পরিবেশন করেন। পালাগানের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের হাসির কথায় দর্শকদের মাতিয়ে রাখেন বয়াতি। তবে পালাগানের আসরে যুবকদের তুলনায় বয়স্ক নারী ও পুরুষদের উপস্থিতি বেশি লক্ষ্য করা গেছে।

বকশীগঞ্জের ইদু বয়াতি বলেন, আগের মতো এখন আর পালাগানের আসর বসে না। তবে আগের তুলনায় গত কয়েক বছর যাবৎ পালাগানের বায়না পাচ্ছি। আমরা চারজন মিলে পালাগানের আসর করি, আমাদের উদ্দেশ্য মানুষকে আনন্দ দেওয়া। তবে সামান্য পারিশ্রমিকেই আসর করেন বলে জানান এই বয়াতি।

আয়োজকদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- ফজল মেম্বার, হানিফ উদ্দিন মেম্বার, সাহেব আলী মেম্বার, রেনু মেকার, জবেদ সোনার, বেলাল, আমিনুর, জাফর আলী মজো, হায়দর আলী, মইরে প্রমুখ।

sarkar furniture Ad
Green House Ad