ছেলে প্রফেসর, বাবা শিক্ষার্থী!

আবুল কালাম আজাদ। ছবি: বাংলারচিঠিডটকম

সুজন সেন, নিজস্ব প্রতিবেদক, শেরপুর, বাংলারচিঠিডটকম: ছেলেরা প্রফেসর-ইঞ্জিনিয়ার হলেও বাবা স্বপ্ন সফল করতে স্কুল বেঞ্চে বসছেন মেট্রিক পরীক্ষা দিতে। ৬৭ বছর বয়সে কিশোর শিক্ষার্থীদের সাথে একই বেঞ্চে পরীক্ষা দেওয়ায় ঘটনা এলাকায় আলোড়ন ফেলেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শিক্ষার কোনো বয়স নেই। ওই শিক্ষার্থী ইতোমধ্যে বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে অসংখ্য ছড়া ও কবিতা লিখে মুদ্রণ আকারে প্রকাশ করেছেন। এছাড়াও লিখেছেন উপন্যাস, গল্প ও গান। হাল না ছাড়া ওই ব্যক্তির নাম আবুল কালাম আজাদ। থাকেন শেরপুরের শ্রীবরদীর খড়িয়াকাজীরচর ইউপির খড়িয়া গ্রামে।

আবুল কালাম আজাদ জানান, ১৯৭৫ সালে তিনি এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিলেন। আর্থিক অনটনের কারণে পরীক্ষা না দিয়ে চাকরি নিয়ে সৌদি আরবে যান। সেখানে থাকেন দীর্ঘ ১৮ বছর। বাড়ি ফিরে সাংসারিক কাজের ফাঁকে শুরু করেন লেখালেখি। তিনি দাম্পত্য জীবনে তিন ছেলের পিতা। বড় ছেলে প্রফেসর। মেজো ছেলে কামিল পাশ ও ছোট ছেলে ইঞ্জিনিয়ার। তার পুত্রবধূরাও শিক্ষিত। ইতোমধ্যে তিনি লিখেছেন অসংখ্য কবিতা, ছড়া, উপন্যাস ও গান। এরমধ্যে দেহদাহ ও দেশরত্ন নামে দুইটি কবিতার বইও প্রকাশ করেছেন।

আবুল কালাম আরো জানান, ছোট বেলা থেকেই স্বপ্ন দেখতেন তিনি শিক্ষিত হবেন। এ কারণে শেষ বয়সে ছেলেদের সহযোগিতায় শুরু করেন পড়ালেখা। এবার তিনি উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে স্থানীয় একটি বিদ্যালয় থেকে মেট্রিক পরীক্ষা দিচ্ছেন।

তার মেজো ছেলে আরিফুল ইসলাম বলেন, বাবা সংসার জীবনে অনেক কষ্ট করেছেন। এ কারণে ইচ্ছা থাকা সত্তে¡ও পড়াশোনা তিনি করতে পারেননি। শেষ বয়সে তার চাওয়া পাওয়া পূরণ করতে আমরা তাকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করছি।

আরিফুল ইসলাম আরো জানান, তার পিতা এখন পর্যন্ত প্রায় আট হাজার গান, কবিতা ও ছাড়া লিখেছেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে লেখা কবিতার বই পাঠকের মাঝে বিতরণ করেন আবুল কালাম আজাদ। (মাঝখানে) ছবি: বাংলারচিঠিডটকম

খড়িয়াকাজীরচর ইউপি চেয়ারম্যান দুলাল মিয়া বলেন, বঙ্গবন্ধু, প্রধানমন্ত্রী ও দেশের উন্নয়ন নিয়ে লেখা কবিতার বই প্রকাশ করে এলাকায় প্রশংসিত হচ্ছেন আবুল কালাম আজাদ। গ্রামে তিনি কবি কালাম নামে অধিক পরিচিত।

দুলাল মিয়া আরো বলেন, আবুল কালাম আজাদ এই বয়সে এসে ধৈর্য্যরে সাথে মেট্রিক পরীক্ষা দিচ্ছেন এ কারণে আমরা খুশি।

কথা প্রসঙ্গে আবুল কালাম আজাদ আকুতি জানিয়ে বলেন, প্রধানমন্ত্রী দেশরতœ শেখ হাসিনাকে নিয়ে ২৭টি কবিতা লিখেছি। এছাড়া বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে এখন পর্যন্ত পাঁচটি কবিতা লেখা হয়েছে। এ কবিতাগুলো যে কোন মাধ্যমেই হোউক তিনি প্রধানমন্ত্রীর হাতে পৌঁছানোর সুযোগ চান।

আবুল কালাম আজাদ চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন শিক্ষার কোনো বয়স নেই উল্লেখ করে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রহুল আলম তালুকদার বলেন, এ ঘটনা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।

রহুল আলম তালুকদার জানান, কবি কালাম এখন পর্যন্ত তিনটি বই রচনা করেছেন যা আমাদের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।

sarkar furniture Ad
Green House Ad