জামালপুর রেলওয়ে ওভারপাসে আরো ১৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিলেন প্রধানমন্ত্রী, ব্যয় দাড়ালো ৪৫০ কোটি টাকা

জামালপুরে নির্মিত হচ্ছে রেলওয়ে ওভারপাস। ছবি : আলী আকবর

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, বাংলারচিঠিডটকম : জামালপুর শহরের প্রধান রাস্তার রেলক্রসিংয়ে নির্মাণাধীন জামালপুর রেলওয়ে ওভারপাস প্রকল্পের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। জামালপুরের উন্নয়নের রূপকার সাবেক প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম এমপির ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় আনা এই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে জামালপুর শহরবাসীসহ সারাদেশ থেকে আসা যানবাহন চলাচল ও সর্বস্তরের মানুষের যাতায়াতের ভোগান্তি আর থাকবে না। এই প্রকল্পের শুরুর দিকে কিছু সময় কাজে ধীরগতি থাকলেও বর্তমানে প্রকল্পের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। আগামী বছরের ৩০ জুনের মধ্যে জামালপুরবাসীর দীর্ঘদিনের প্রতীক্ষিত এই রেলওয়ে ওভারপাস চালু হওয়ার কথা জানিয়েছেন প্রকল্পটির বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর কর্তৃপক্ষ।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৮ জুন একনেকের সভায় এই রেলওয়ে ওভারপাসের সংশোধিত প্রকল্পে আরো ১৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন। প্রকল্পের দুই পাশের রাস্তা সম্প্রসারণের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ, মূলকাঠামো ওভারপাস নির্মাণ ও দুই পাশের রাস্তা নির্মাণসহ এই প্রকল্পে মোট ব্যয় হতে যাচ্ছে প্রায় ৪৫০ কোটি টাকা।

সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, জামালপুর শহরের প্রধান রাস্তার গেইটপাড় রেলক্রসিংয়ে ব্যাপক যানজট নিরসন ও নির্বিঘ্নে ট্রেন চলাচলের সুবিধার জন্য দুই পাশে সংযোগসড়কসহ ৭৩৮ মিটার দীর্ঘ এই রেলওয়ে ওভারপাস বা ওভার ব্রিজটি নির্মাণ করতে ব্যয় হচ্ছে প্রায় ৫৯ কোটি টাকা। এই রেলক্রসিংয়ে জামালপুরবাসীর দীর্ঘ দিনের যাতায়াতের চরম ভোগান্তি দূর করার লক্ষ্য নিয়ে জামালপুরের উন্নয়নের রূপকার সাবেক বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম এমপি এই প্রকল্পটির উদ্যোগ নেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজধানী ঢাকা থেকে ভিডিও কনফারেন্সে জামালপুরবাসীর সাথে যুক্ত হয়ে গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এই রেলওয়ে ওভারপাস প্রকল্পটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে।

এই প্রকল্প এলাকায় ওভারপাসের দুই পাশে স্থাপনা ভেঙে রাস্তা সম্প্রসারণের জন্য কয়েক পর্যায়ে ভূমি অধিগ্রহণে ব্যয় করা হয় প্রায় ২৩৯ কোটি টাকা। ওভারপাস পার হয়ে নির্বিঘ্নে যানবাহন চলাচলের জন্য সম্প্রতি সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর রেলক্রসিংয়ের দক্ষিণে পিটিআই এবং উত্তরে জামালপুর ফায়ার সার্ভিস স্টেশন পর্যন্ত প্রধান রাস্তা সম্প্রসারণের জন্য আরো ভূমি অধিগ্রহণ খাতে আরো অর্থ বরাদ্দ চায়। ২৮ জুন ঢাকায় শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভার সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারাদেশে দুই হাজার ২১৬ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ১০টি উন্নয়ন প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছেন। এই দশটি প্রকল্পের মধ্যে জামালপুর রেলওয়ে ওভারপাস প্রথম সংশোধনী প্রকল্পে আরো ১৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। নতুন করে বরাদ্দ পাওয়া এই ১৫০ কোটি টাকা ভূমি অধিগ্রহণ খাতে ব্যয় করা হবে। এ নিয়ে এই প্রকল্পে ভূমি অধিগ্রহণ খাতে মোট ব্যয় করা হচ্ছে প্রায় ৩৮৯ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে এই প্রকল্পে মোট ব্যয় দাঁড়াচ্ছে প্রায় ৪৫০ কোটি টাকা। সূত্র আরো জানায়, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর জামালপুর রেলওয়ে ওভারপাস প্রকল্পটির নির্মাণ কাজ আসছে ২০২৩ সালের ৩০ জুনের মধ্যে শেষ করে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করার সময়সীমা নির্ধারণ করেছে।

প্রকল্প এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, এই প্রকল্পের মূলকাজ বিশেষ করে ওভারপাস নির্মাণ কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। সবমিলিয়ে এই প্রকল্পের কাজ শতকরা প্রায় ৬০ ভাগ শেষ হয়েছে। এই ওভারপাসের ১৩টি স্প্যানের নির্মাণ কাজ অনেক আগেই শেষ হয়েছে। এখন এই স্প্যানগুলোর ওপর গার্ডার বসানোর কাজও প্রায় শেষের দিকে। ওভারপাসের কাজের পাশাপাশি খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে দুই পাশে ফুটপাথসহ রাস্তার নির্মাণ কাজ শুরু হয়ে যাবে। রেলক্রসিংয়ের দক্ষিণে চারটি স্প্যানের ওপর ইতিমধ্যে ছাদ নির্মাণ কাজও শেষ হয়েছে। এখন দুই রেললাইনের মাঝ থেকে উত্তরের স্প্যানগুলোতে গার্ডার স্থাপনের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। এই রেলওয়ে ওভারপাসের দুই দিকে সম্প্রসারিত প্রকল্পের আওতাধীন ভূমি অধিগ্রহণের কাজক্রমও ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে।

জামালপুর সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী খায়রুল বাশার মো. সাদ্দাম হোসেন এ প্রতিবেদককে বলেন, সংশোধিত প্রকল্পে আরো ১৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ পাওয়ায় এই প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণ খাতে আর কোনো সমস্যা হবে না। প্রকল্পের মূলকাঠামো ওভারপাসের প্রায় শতকরা ৬০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নে প্রথমদিকে ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতায় কিছু সময় নষ্ট হয়েছে। তবে বর্তমানে এই প্রকল্পের আর্থিক কোনো সমস্যা না থাকায় এবং ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া দ্রুত শুরু হওয়ায় প্রকল্পটি বাস্তবায়নে আরো গতি বাড়বে। রাস্তাসহ পুরো প্রকল্পটির কাজ শেষ করে আগামী বছরের ৩০ জুনের মধ্যে এই রেলওয়ে ওভারপাসটি যানবাহন চলাচলের জন্য চালু করার সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। আশা করছি এই সময়ের মধ্যেই কাজটি শেষ করতে পারবো।