মাহমুদুল হাসান মুক্তা, নিজস্ব প্রতিবেদক, বাংলারচিঠিডটকম: জামালপুরের মেলান্দহে বীনা আক্তার নামে এক নারী (২২) এর গলাকাটা লাশ উদ্ধারের ঘটনায় এলাকাবাসীর মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। নিহত মা হাজের বেগম মেলান্দহ থানায় বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামি করায় গ্রামের অধিকাংশ বাড়ি-ঘর ছেড়ে পালিয়ে গা ঢাকা দিয়েছে।
জানা যায়, ১০ মে দিবাগত রাত ১টার দিকে উপজেলার শ্যামপুর ইউনিয়নের পূর্ব শ্যামপুর কমিউনিটি ক্লিনিকের পাশ থেকে লাশটি উদ্ধার করে মেলান্দহ থানা পুলিশ।
নিহত বীনা আক্তার ওই এলাকার মৃত বাদশা মিয়ার মেয়ে। এই ঘটনায় বিনার মা হাজের বেগম মেলান্দহ থানায় বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা কয়েকজনের নামে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় পুলিশ বীনা হত্যার সাথে জড়িত সন্দেহে দুজনকে আটক করে থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে এবং পরে তাদেরকে জেল হাজতে পাঠানো হয়।
আটককৃতরা হলেন- মেলান্দহ উপজেলার পৌরসভার দীঘলবাড়ী নজরুল ইসলামের ছেলে বীনার খালাতো ভাই সাইদুর রহমান (২৩) ও শ্যামপুর ইউনিয়নের পূর্ব শ্যামপুর গ্রামের বাসিন্দা চান মিয়া শেখের ছেলে বীনার মামাতো ভাই মিজানুর রহমান (২৬)।
বীনার খালাতো বোন নাসরিন আক্তার বলেন, জমি সংক্রান্ত বিরোধকে কেন্দ্র করে আমাদের ক্ষেতের ধান কেটে নিয়ে যায় প্রতিপক্ষরা। ঘটনার ওইদিন রাত ১০টার দিকে আমাদের ক্ষেতের ধান কাটার ঘটনাটি জানাতে মেম্বারের বাড়িতে বিচার দিতে যায়। ওই সময় বীনাকে রেখে যায়। পরে আনুমানিক ১টার দিকে মেম্বারের বাড়ি থেকে আসার পর বীনাকে বাড়িতে না পাওয়ায় আমরা তাকে খোঁজাখুঁজি করতে থাকি। পরে আমাদের বাড়ির দক্ষিণে কমিউনিটি ক্লিনিকের পশ্চিমে রাস্তার সাথেই একটি গর্তের মধ্যে বীনার গলাকাটা মরদেহ দেখতে পাই। পরে এলাকার বাসিন্দারা রাতেই ছুটে আসেন বীনার লাশ দেখতে। তবে কে বা কারা পুলিশকে খবর দিয়েছে তা আমি জানি না। খবর পেয়ে মেলান্দহ থানা পুলিশ ওই রাতেই এসে বীনার মরদেহ দেখে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। হত্যার ঘটনায় সন্দেহজনকভাবে বীনার খালাতো ও মামাতো ভাই দুইজনকে আটক করে নিয়ে যায় পুলিশ। পরের দিন বীনার লাশ ময়নাতদন্তের জন্য জামালপুর জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠান মেলান্দহ থানা পুলিশ। এ ঘটনায় বীনার মা হাজেরা বেগম কয়েকজনের নামে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মেলান্দহ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
এ বিষয়ে এলাকাবাসী জানান, বীনা হত্যা মামলায় আমাদের এলাকায় এখন আতঙ্ক বিরাজ করছে। পূর্ব শ্যামপুর গ্রামবাসী আতঙ্কে গ্রাম ছেড়ে চলে গেছে। এখন প্রায় গ্রাম শূন্য হয়ে পড়েছে। গ্রামটিতে এখন কৃষকের ধানকাটার সময়। দিনের বেলায় পুলিশ এলেই সবার মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করে। আর রাতের বেলায় বাড়ি ছেড়ে অন্য জায়গায় ঘুমাতে হয়। ধান কাটার শ্রমিকরা আতঙ্কে কেউ কাজ করতে চাইনা। তাদের দাবি যদি সময় মত ধান কাটতে না পারি, তাহলে আমরা অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হবো। তারা বীনা হত্যা মামলার সঠিক তদন্ত করে প্রকৃত হত্যাকারীকে খুঁজে বের করে তাদের ফাঁসির দাবি জানান।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই এনামুল হক সিদ্দিকী বলেন, পুলিশ সাধারণ মানুষকে হয়রানি করবেনা। তিনি সাধারণ মানুষের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা যার যার বাড়িতে অবস্থান করেন। এখানে পুলিশ কোন প্রকার নিরীহ মানুষকে হয়রানি করবে না। বীনা হত্যার সঠিক তদন্ত করে প্রকৃত হত্যাকারীকে বের করে তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে।