জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, বাংলারচিঠিডটকম: জামালপুরের প্রবীণ ভাষাসৈনিক কয়েছ উদ্দিন সরকার গুরুতর অসুস্থ হয়ে জামালপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। অনুষ্ঠানে যেতে পারবেন না, তাই হাসপাতালে গিয়েই তাকে সংবর্ধনা জানালেন ওই অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি জেলা প্রশাসক মুর্শেদা জামানসহ অন্যান্য অতিথিবৃন্দ। ২১ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে জেলা প্রশাসন আয়োজিত আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ও মহান শহিদ দিবসের অনুষ্ঠানে তাকে সংবর্ধনা দেওয়ার কথা ছিল।
২১ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ভাষাসৈনিক কয়েছ উদ্দিন সরকারের খোঁজখবর নিতে এবং তাকে সংবর্ধনা জানাতে ফুল, সম্মাননা স্মারক ও আর্থিক সহায়তার নগদ দশ হাজার টাকা নিয়ে জামালপুর সদর হাসপাতালের চারতলায় সরকারি কর্মচারী কেবিনে হাজির হন জেলা প্রশাসক মুর্শেদা জামান। এ সময় তার সাথে ছিলেন পুলিশ সুপার নাছির উদ্দিন আহমেদ, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ মোকলেছুর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সৈয়দ আতিকুর রহমান ছানা ও অধ্যাপক কবি তারিকুল ফেরদৌস।
জেলা প্রশাসককে কাছে পেয়ে ভাষাসৈনিক কয়েছ উদ্দিন সরকার আবেগ আপ্লুত হয়ে বিছানায় শুয়েই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং তাকে ভালোমতো চিকিৎসার আবেদন জানান। এ সময় জেলা প্রশাসক মুর্শেদা জামান তাকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান এবং শিল্পকলা একাডেমির অনুষ্ঠানের অন্যান্য অতিথিদের নিয়ে তার হাতে সম্মাননা স্মারক ও আর্থিক সহায়তার নগদ ১০ হাজার টাকা তুলে দেন।
এ সময় জেলা প্রশাসক মুর্শেদা জামান তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, জামালপুরের গর্ব ভাষাসৈনিক কয়েছ উদ্দিন সরকারকে জেলা প্রশাসন সব সময় সহযোগিতা করে আসছে। তার কাছ থেকে জামালপুরের ভাষা আন্দোলনের অনেক অভিজ্ঞতার কথা শুনতে পেরে ভালো লাগলো। তার চিকিৎসার সার্বিক ব্যবস্থা করা হয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে সার্বক্ষণিক প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা দিয়ে আসছে। আশা করি উনি সুস্থ হয়ে উঠবেন।
ভাষাসৈনিক কয়েছ উদ্দিন সরকারের বয়স প্রায় ৯৫ বছর। জামালপুর জেলা শহরের বেলটিয়া গ্রামে ১৯২৭ সালের ২১ জুলাই জন্মগ্রহণ করেন তিনি। পিতা মৃত ছইম উদ্দিন সরকার ও মাতা মৃত কুলছুম বেগমের অষ্টম সন্তান তিনি। তিনি চিরকুমার। তিনি শ্রমিক শ্রেণির অধিকার আদায়ের সংগ্রামে নিবেদিতপ্রাণ একজন বামপন্থীকর্মী। অক্ষরজ্ঞানশূন্য এই ভাষাসৈনিক ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে পরবর্তীতে সকল জাতীয় সঙ্কটময় মুহূর্তে তার তৈরি ও মুখে মুখে গাওয়া গণসঙ্গীত মেহনতি মানুষের কণ্ঠকে ধারণ করেছে। ভাসানী ন্যাপের রাজনীতির সাথে যুক্ত এই ভাষাসৈনিক ভাষা আন্দোলন, আইয়ুববিরোধী আন্দোলন, ’৬৯ এর গণঅভ্যুত্থানসহ প্রতিটি গণআন্দোলনে রাস্তায় রাস্তায় গান গেয়ে জনতাকে অনুপ্রাণিত করতেন। এসব করতে গিয়ে তাকে শাসকশ্রেণির কবলে নির্যাতনও ভোগ করতে হয়েছিল। স্মরণশক্তি প্রখর ও কথা বলতে পারলেও বয়সের ভারে ন্যুব্জ এই প্রবীণ ভাষাসৈনিক বার্ধক্যজনিত নানা অসুখে ভোগছেন। গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় ১৯ ফেব্রুয়ারি থেকে তিনি জামালপুর সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।