তথ্য-প্রযুক্তি, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের স্বর্ণযুগ চলছে। কয়েকদিন পর পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোন একটি বিষয় নিয়ে বেশ আলোচনা সমালোচনা হয়। এই আলোচনা এবং সমালোচনার একমাত্র মাধ্যম ভাষা। তবে এই ভাষা সবসময়ই ছিল না, ভাষার উদ্ভব হয়েছে লম্বা একটি সময় চর্চা করার মাধ্যমে। সাধারণ অর্থে ভাষা বলতে আমরা মুখ নিঃসৃত কাল্পনিক শব্দ বিন্যাসকে বুঝি, যে শব্দ বিন্যাস নির্দিষ্ট অর্থ বহন করে।
বিশেষজ্ঞদের মতে আমাদের ভাষায় উদ্ভব হয়েছে মূলত নিজেদের নিয়ে গল্প করার, আড্ডাবাজি করার এমনকি নিন্দা করার উপায় হিসেবে। ইতিহাসবিদ ইউভাল নোয়া হারারির মতে, আড্ডা, খুনসুটি বা পরচর্চা করার জন্যই মানুষদের ভাষার বিকাশ ঘটেছে- এরকম একটি তত্ত¡কে আমরা ‘পরচর্চা তত্ত্ব’ (Gossip Theory) নামে ডাকতে পারি। যদিও পরচর্চার জন্যই ভাষার বিকাশ ঘটেছে এই কথাটি আপাতভাবে অনেক হাস্যকর মনে হতে পারে কিন্তু এ-সংক্রান্ত অনেক গবেষণায় কিন্তু এই তত্ত্বকে সমর্থন করে। এমনকি আজকের পৃথিবীর কথা যদি ভাবি, এখনো মানুষের সঙ্গে মানুষের বেশির ভাগ আলাপ আলোচনার বিষয়বস্তু থাকে অপরে কি করল, কী খেল, কোথায় কোন মুখরোচক বা অদ্ভুত ঘটনা ঘটলো এসব নিয়ে; হোক সরাসরি আলাপচারিতা, ই-মেইলে, ম্যাসেজিংয়ে অথবা ফোনে। পরচর্চা করার ব্যাপারটা আমাদের এতটাই মজ্জাগত যে মাঝেমধ্যে সত্যিই মনে হয়, গল্পগুজব আর পরনিন্দা করার জন্যই মানুষের ভাষার উৎপত্তি ও বিকাশ হয়েছে।
মানুষ ছাড়াও অন্য অনেক প্রাণীদের মাঝে ভাষার প্রচলন আছে, তবে সেগুলো সাংকেতিক এবং সীমিত। মানুষরা সীমিত সংখ্যক ধ্বনি এবং প্রতীককে বিভিন্নভাবে জোড়া লাগিয়ে অসীমসংখ্যক বাক্য গঠন করতে পারে, যে বাক্যগুলোর আলাদা আলাদা অর্থ বহন করে। গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আদান-প্রদান হোক আর পরচর্চার জন্যই হোক ভাষা মানুষকে অন্য সকল প্রাণীদর চেয়ে আলাদা এবং উন্নত প্রাণী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সাহায্য করেছে।
– মুহাম্মদ হিজবুল্লাহ
জনসংযোগ কর্মকর্তা কাম ফটোগ্রাফার
বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
জামালপুর।
ই-মেইল: hizbullah@bsfmstu.ac.bd