জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
বাংলারচিঠিডটকম
জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী ধানুয়া কামালপুর ইউনিয়নের স্থানীয় জনতার হাতে আটক সুমন মিয়া (২৩) ভারতীয় নন, তিনি বাংলাদেশি নাগরিক। তার বাড়ি জামালপুর জেলার ইসলামপুর উপজেলায়। মিথ্যা পরিচয় দিয়ে তার আটকের ঘটনাটি নিয়ে দিনভর তোলপাড় চলে সর্বত্র। ১৪ জুন রাতে মা ও স্ত্রীর সাথে ঝগড়া করে বাড়ি থেকে পালিয়ে রাতের অন্ধকারে ভারতের জলপাইগুড়িতে পাড়ি জমানোর উদ্দেশ্যে সীমান্তবর্তী ধানুয়া কামালপুরে গিয়েছিলেন বলে তিনি স্বীকার করেছেন।
স্থানীয় সূত্র জানায়, ১৪ জুন রাত সাড়ে ১১টার দিকে ধানুয়া কামালপুরে একটি সেতুতে ঘোরাফেরা করার সময় স্থানীয়দের হাতে আটক হন সুমন মিয়া। স্থানীয়দের জিজ্ঞাসাবাদে আটক সুমন মিয়া নিজেকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের জলপাইগুড়ি জেলা সদর থানার এশকুশপাড়া গ্রামের তালেব আলী মেম্বারের ছেলে বলে পরিচয় দেন। স্থানীয়রা সারারাত তাকে স্থানীয় একটি ঝুপড়ি ঘরে রেখে খাবার ও পাহারা দেয়। তারা বিষয়টি স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকেও জানান। ১৫ জুন ভোরে স্থানীয়রা বিষয়টি স্থানীয় কামালপুর বিজিবি ক্যাম্পে জানালে আটকের স্থান সীমান্তের নো-ম্যানস ল্যান্ডে না হওয়ায় বিজিবির কামালপুর ক্যাম্প কর্তৃপক্ষ তাকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করতে পরামর্শ দেন। পরে স্থানীয়রা তাকে ধানুয়া কামালপুর ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তফা কামালের কাছে হস্তান্তর করেন।
১৫ জুন সকালে তাকে দেখতে ধানুয়া কামালপুর ইউনিয়ন পরিষদ ভবনে উৎসুক অনেক মানুষ ভিড় করেন। খবর পেয়ে ১৫ জুন বিকেলে বকশীগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. খায়রুল ইসলাম পুলিশ ফোর্স নিয়ে ধানুয়া কামালপুর ইউপি ভবন থেকে তাকে উদ্ধার ও আটক করে বকশীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান।
ভারতীয় নাগরিক পরিচয় দেওয়ায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তার নমুনা পরীক্ষা ও হাসপাতালে আইসোলেশনের প্রস্তুতি চলছিল। সেখানে তার র্যাপিড এন্টিজেন পরীক্ষায় করোনা নেগেটিভ আসে। এ সময় পুলিশ ও হাসপাতালের চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মীদের জেরার মুখে একপর্যায়ে তিনি তার আসল পরিচয় দেন। পুলিশের কাছে তার দেওয়া সর্বশেষ তথ্যমতে, তিনি বিবাহিত। জামালপুর জেলার ইসলামপুর উপজেলা সদর পৌরসভার পলবান্ধা গ্রামের মৃত তালেব মেম্বারের ছেলে তিনি। তার পালক বাবার নাম মফিজল হক। পুলিশ ইসলামপুরে তার বাড়িতে স্বজনদের সাথে যোগাযোগ করে পরিচয় নিশ্চিত হয়ে তাদেরকে বকশীগঞ্জ থানায় যেতে বলেন। পরে সন্ধ্যার পর তার পালক বাবা মফিজল হক ও সহোদর বড়ভাই তানভীর হোসেন বকশীগঞ্জ থানায় গিয়ে সুমনের পরিচয় শনাক্ত করেন। এ সময় থানার ওসি মো. শফিকুল ইসলাম তাকে তার স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করেন।
বকশীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ইউএইচএফপিও ডা. প্রতাপ নন্দী বাংলারচিঠিডটকমকে বলেন, ভারতীয় পরিচয়ে আটক সুমন মিয়াকে পুলিশ উপজেলা হাসপাতালে নিয়ে আসার সাথে সাথে র্যাপিড এন্টিজেন কিট দিয়ে তার নমুনা পরীক্ষা হলে করোনা নেগেটিভ আসে। আমরা তার আইসোলেশনেরও প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। যেহেতু তার করোনা নেগেটিভ এসেছে, ভারতীয় নাগরিকও নয়, তাই তাকে আইসোলেশনে রাখার আর দরকার নেই। হাসপাতাল থেকে তাকে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।
বকশীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শফিকুল ইসলাম বাংলারচিঠিডটকমকে বলেন, আটক সুমনের বাবা তালেব মেম্বার জীবদ্দশায় কিছুদিন ভারতের জলপাইগুড়িতে অবস্থানকালে সেখানে ভারতীয় এক নারীকে বিয়ে করেছিলেন। সেই কারণেই হয়তো তিনি স্থানীয়দের চাপে ভয়ে নিজেকে ভারতীয় নাগরিক পরিচয় দিয়েছিলেন। সুমন মিয়াকে সন্ধ্যার পর তার পরিবারের স্বজনদের হাতে তুলে দিয়েছি।