শফিউল আলম লাভলু, নকলা (শেরপুর) থেকে
বাংলারচিঠিডটকম
আধুনিক নতুন কৌশল ও তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে কৃষিক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন এনে হাজারো কৃষকের জীবন পাল্টে দিয়েছেন তিনি। তার নাম কৃষিবিদ পরেশ চন্দ্র দাস। একজন কৃষি কর্মকর্তা। কর্মরত ছিলেন শেরপুর জেলার নকলা উপজেলায়। ৯টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত এ উপজেলা।
পরেশ চন্দ্র দাস নেত্রকোনা জেলার আটপাড়া উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন। ৪ ভাই ও ২ বোনের মধ্যে সবার ছোট তিনি। ২০১০ সালের ১ ডিসেম্বর তিনি ২৮তম বিসিএসের মাধ্যমে চাকরিতে যোগদান করেন। তার প্রথম কর্মস্থল ছিল কক্সবাজারের কুতুবদিয়া উপজেলায়। সর্বশেষ তিনি সিলেটের বিয়ানি বাজার উপজেলায় প্রায় ৪ বছর অত্যন্ত দক্ষতার সাথে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ২০১৮ সালের অক্টোবর মাসের ১৬ তারিখে তিনি নকলা উপজেলায় যোগদান করেন। একজন দক্ষ সংগঠক ও কৃষি ও কৃষকবান্ধব কৃষি কর্মকর্তা হিসেবে সরকারিভাবে তিনি ২০১৫ সালে চীন, ২০১৯ সালে ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়া সফর করেন।
এরপর থেকে নিজের শ্রম ও মেধার সমন্বয়ে কৃষকদের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ, সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন ও পরামর্শ প্রদানের মাধ্যমে নিজেকে নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়। কৃষিবিষয়ক যে কোনো প্রয়োজন ও পরামর্শের জন্য তারা ছুটে যান তার কাছে। সোহাগ তাদের সহায়তায় দিচ্ছেন। হতদরিদ্র অনেককে কৃষিপ্রযুক্তিতে সম্পৃক্ত করে তাদের পরিবারে স্বচ্ছলতা এনে দিয়েছেন। কাজের মাধ্যমে হয়ে উঠেছেন সাধারণ কৃষকের নির্ভরতা ও ভালোবাসার প্রতীক।
ভার্মি কম্পোস্ট (কেঁচো সার) ব্যবহার ও উৎপাদন, বিষমুক্ত কলা উৎপাদনে ব্যাগিং পদ্ধতি, ইয়েলো কালার ট্র্যাপ, ফেরোমন ট্র্যাপ, ডাম সিডার দিয়ে বপন পদ্ধতিতে ধান আবাদ, ছাদ বাগান, ড্রাগন চাষ, উচ্চ ফলনশীল ভিয়েতনামি নারিকেল ও পাকচং ঘাষ চাষ, বারো মাসি সজিনা, বাদাম চাষ, আগাম সবজি, সরিষা ক্ষেতে মৌ ও মচির চাষ এবং খামারজাত সার সংরক্ষণ ইত্যাদি কর্মকান্ড বাস্তবায়নের মাধ্যমে গ্রামের কৃষকদের আধুনিকায়ন করেছেন। কৃষিতে এনেছেন যান্ত্রীকিকরন। তার পরামর্শে আউস, আমন ও বোর ধানে এসেছে বাম্পার ফলন।
ফেসবুকে ‘উপজেলা কৃষি অফিস’ আইডির মাধ্যমে জনসাধারণকে কৃষিপ্রযুক্তি সম্পর্কে ধারণা দিয়ে আসছেন। দিনের বেলায় কাজে ব্যস্ত থাকা চাষিদের কৃষি বিষয়ে পরামর্শ দেওয়ার জন্য খুলেছেন রাত্রিকালীন পরামর্শ কেন্দ্র। সপ্তাহের সাত দিনই সন্ধ্যা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত বিনামূল্যে কৃষকদের পরামর্শ প্রদান করছেন। করোনার সময়ও কৃষি সেবা বন্ধ করেননি। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাগণ করোনার সময় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দিয়েছেন কৃষকদের ননস্টপ সেবা। এক গ্রামের কৃষকের সঙ্গে অন্য গ্রামের কৃষকের সংযোগ স্থাপন করে দিচ্ছেন। কৃষিবিষয়ক নিত্যনতুন প্রযুক্তি, সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে পরামর্শ প্রদান করেছেন।
পোলাদেশি গ্রামের কৃষিকবি খ্যাত কৃষক মো. আব্দুল হালিম বলেন, আমি পরেশ স্যারের পরামর্শে কেঁচো সার উৎপাদন শুরু করি। কেঁচো সার ব্যবহারে ব্যাপক সাফল্য পাই। পরে বাণিজ্যিকভাবে কেঁচো সার উৎপাদন করি। এভাবে পর্যায়ক্রমে লাভবান হতে থাকি। নারায়নখোলা এলাকার কৃষক মেরাজ উদ্দিন বলেন, এই স্যারের পরামর্শে আমি বিষমুক্ত করলা ও আগাম সবজি করে আজ লাভবান হয়েছি। যখন ডাকতাম তখনই স্যারকে পাইতাম। আমাদের প্রকৃত বন্ধু ছিলেন তিনি। নকলা উপজেলায় এমন আরও অনেক কৃষক কৃষাণী রয়েছে যারা কৃষিবিদ পরেশ চন্দ্র দাসের পরামর্শে কৃষিপ্রযুক্তিতে সম্পৃক্ত করে বাড়তি আয়ের সুযোগ করতে পেরেছে এবং তাদের সংসারে সচ্ছলতা এনেছেন।
কৃষিবিদ পরেশ চন্দ্র দাস বলেন, ‘কৃষি আমাদের দেশের মানুষের প্রাচীন পেশা। জন্মের পর থেকেই আমি এটি দেখে এসেছি। কারণ আমি নিজেও কৃষকের সন্তান। কৃষক পরিবারের আমার জন্ম। মাটি ও মায়ের সাথে আমার পরিচিতি। একটা সময় উৎপাদন অনেক কম হতো। বর্তমান সরকার আধুনিক কৃষি করতে কৃষিতে যান্ত্রীকিকরণ করেছে। আমরা সেগুলো কৃষকের দ্বারপ্রান্তে পৌছে দিচ্ছি। বর্তমান সরকার কৃষিবান্ধব সরকার। তাই মুজিব বর্ষের অঙ্গিকার কৃষি হবে দুর্বার। এখন নতুন প্রযুক্তি আর নানান উদ্ভাবনের ফলে কৃষিক্ষেত্রে সফলতা অনেক সহজ হয়েছে। প্রযুক্তি আর উদ্ভাবন কৃষকদের কাছে আমরা পৌঁছে দিতে পেরেছি। আধুনিক কৃষি ব্যবস্থার সঙ্গেও তাদের পরিচয় করিয়ে দিতে পেরেছি। আমি এই উপজেলায় কৃষকদের ভাগ্য বদলানোর চেষ্টা করেছি মাত্র। কতটুকু করতে পেরেছি সেটা কৃষকরাই বলতে পারবে। একজন কৃষি কর্মকর্তা হিসেবে এই কাজটিই সঠিকভাবে করার চেষ্টা করি আমি।’
উল্লেখ্য, কৃষিবিদ পরেশ চন্দ্র দাস সরকারি আদেশে জামালপুর জেলার দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।