প্রধানমন্ত্রীর সহায়তা ছাড়াও আরো অনেকেই শম্পার পাশে দাঁড়ালেন

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে শম্পার বাবা শফিকুলকে অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। ছবি : বাংলারচিঠিডটকম

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
বাংলারচিঠিডটকম

সড়ক দুর্ঘটনায় পঙ্গুত্ববরণকারী দরিদ্র বাবার চিকিৎসার টাকার রোজগারে আর রিকশাভ্যান চালাতে হবে না জামালপুরের কেন্দুয়া ইউনিয়নের নাকাটি গ্রামের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী শম্পা খাতুনকে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়াও আরো অনেকেই সহায়তার হাত বাড়িয়ে পাশে দাঁড়িয়েছেন।

শম্পার রিকশাচালানোর সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইউটিউব, ফেসবুক ও কয়েকটি অনলাইন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হলে শিশুটির বাবা শফিকুল ইসলাম ভাসানীর পায়ের উন্নত চিকিৎসা, পাকাঘর নির্মাণ, শম্পার লেখাপড়া ও পরিবারের আয়ের উৎসসহ সবকিছুর দায়িত্ব নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শম্পার বাবা শফিকুলকে উন্নত চিকিৎসার জন্য অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকায় জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতালে (পঙ্গু হাসপাতাল) পাঠানো হয়েছে ২ ডিসেম্বর সকালে। এই দিন সকালে শম্পাদের জন্য বরাদ্দের পাকাঘর নির্মাণ কাজের উদ্বোধনের সময় জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ এনামুল হক এসব তথ্য নিশ্চিত করেন। এ সময় জামালপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফরিদা ইয়াছমিন ও কেন্দুয়া ইউপি চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান মনজুসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। পাকাঘর নির্মাণ কাজের উদ্বোধনের পর সেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দীর্ঘায়ু কামনায় মোনাজাত করা হয়।

নিজের বেতন থেকে চার হাজার টাকা শম্পার হাতে তুলে দেন পুলিশ কনস্টবল মো. ইউছুফ আলী। ছবি : বাংলারচিঠিডটকম

একই দিনে শম্পার জন্য ১০ হাজার টাকার আর্থিক সহায়তা পাঠিয়েছেন আমেরিকা প্রবাসী সৈয়দ আসাদুজ্জামান বাবু। তার পক্ষে গাজীটিভির সাংবাদিক আলী আকবর সহায়তার সেই ১০ হাজার টাকা শম্পা ও তার অসুস্থ বাবা শফিকুল ইসলাম ভাসানীর হাতে তুলে দেন। এ সময় জামালপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফরিদা ইয়াছমিন, চ্যানেল টোয়েন্টিফোর এর সাংবাদিক আনোয়ার হোসেন মিন্টু, শম্পার মা নেবুজা বেগম উপস্থিত ছিলেন।

জামালপুর সদর থানার পুলিশ কনস্টবল মো. ইউছুফ আলী শম্পার সংগ্রামী জীবনের সংবাদ পড়ে শম্পা এবং তার পরিবারের পরিস্থিতি দেখতে ১ ডিসেম্বর নাকাটি গ্রামে শম্পাদের বাড়িতে যান। তিনি তার তিনি তার মাসিক বেতনের টাকা থেকে চার হাজার টাকা শম্পার হাতে তুলে দেন এবং তার বাবা-মায়ের সাথে কুশল বিনিময় করেন। ২ ডিসেম্বর জামালপুর সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাহিদা ইয়াসমিনও শম্পাদের বাড়িতে যান তাদের খোঁজখবর নিতে। এ সময় তিনিও শম্পাদের আর্থিক সহায়তা হিসেবে পাঁচ হাজার টাকা তুলে দেন শম্পা ও তার বাবা-মায়ের হাতে।

আমেরিকা প্রবাসী সৈয়দ আসাদুজ্জামান বাবুর পাঠানো ১০ হাজার টাকা শম্পার হাতে তুলে দেন গাজী টিভির সাংবাদিক আলী আকবর। ছবি : বাংলারচিঠিডটকম

প্রসঙ্গত, নাকাটি গ্রামের দরিদ্র রিকশাভ্যানচালক শফিকুল বছর পাঁচেক আগে জামালপুর শহর থেকে বাড়ি ফেরার পথে দুর্ঘটনায় তার এক পা ভেঙে যায়। পঙ্গু হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে দীর্ঘদিন চিকিৎসা করান তিনি। এতে তার সবকিছু বিক্রি করে প্রায় নিঃস্ব হয়ে পড়েন তিনি। তাদের সংসারে দুই মেয়ের মধ্যে শম্পার বড়বোনের বিয়ে হয়ে গেছে। স্ত্রী নেবুজা বেগম ও শম্পাকে নিয়ে খুবই দুর্বিষহ জীবন যাপন করছিলেন শফিকুল। এই পরিস্থিতিতে সংসার চালানোর খরচ ছাড়াও বাবার ওষুধ কেনার টাকা রোজগারের জন্য দেড় বছর আগে থেকে বাবার পেশায় হাল ধরে প্রতিদিন রিকশাভ্যান চালাতো শম্পা।

সংগ্রামী এই শিশু শম্পাকে খুঁজে পান বিজয় টিভির সাংবাদিক জুয়েল রানা। জুয়েল রানা প্রথমে তার নিজের সম্পাদনা ও প্রযোজনায় জামালপুর লাইভ নামের ইউটিউব চ্যানেলে ‘জীবনের গল্প’ শিরোনামের ধারাবাহিক পর্বে সংগ্রামী শম্পার জীবন কাহিনি তুলে ধরেন। এরপর অনলাইন নিউজ পোর্টাল বিডিনিউজ২৪ডটকমসহ একে একে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে শম্পার কষ্টগাঁথাগুলো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ অনেকেরই মনে নাড়া দেয়। সহায়তা পাওয়ায় শম্পা ও তার বাবা-মা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ যারা সহায়তার হাত বাড়িয়েছেন, তাদের সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।