নিজস্ব প্রতিবেদক॥
২৫ নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ ২০২০ উপলক্ষে আস্থা প্রকল্পের উদ্যোগে ‘জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতা প্রতিরোধে মাল্টি-সেক্টরাল সেবার ব্যবহার ও মান বৃদ্ধিতে করণীয়’ শীর্ষক অনলাইন আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। নেদারল্যান্ডস অ্যাম্বাসির অর্থায়নে, ইউএনএফপিএ ও আইন ও সালিশ কেন্দ্রের কারিগরি সহযোগিতায় মাঠ পর্যায়ে প্রকল্প অংশীদার সংগঠন স্বাবলম্বী উন্নয়ন সমিতি এই অনলাইন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এতে লিগ্যাল এইড অফিস, জামালপুর জেলা পুলিশ, মহিলা বিষয়ক কার্যালয়, সমাজ সেবা অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন সরকারি মাল্টি-সেক্টরের কর্মকর্তা এবং একইসাথে সুশীল সমাজ সংগঠনের প্রতিনিধিবৃন্দ অংশ নেন।
সভায় ‘১৬ দিনব্যাপী নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ’ এর গুরুত্ব এবং প্রতিপাদ্য বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়, সেই সাথে আস্থা প্রকল্প, কমিউনিটি পর্যায়ে নারীরা বিভিন্ন সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে সেবা নিতে গিয়ে কি ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন এবং তাদের সুপারিশসমূহ কি এ বিষয়ক একটি পর্যালোচনা করে – যা এই আলোচনা সভায় তুলে ধরা হয়। সংশ্লিষ্ট ডিপার্টমেন্টের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাগণ সকল প্রশ্নের উত্তর দেন এবং সারভাইভারদের আরো উন্নত সেবা দেওয়ার আশ্বাস দেন।
সভায় প্রধান অতিথি জামালপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সীমা রানী সরকার বলেন, ‘নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে বাংলাদেশ পুলিশ সদা তৎপর। আপনারা জানেন জামালপুরের প্রতিটি উপজেলার পুলিশ স্টেশনে নারী সহায়তা কেন্দ্র থেকে প্রতিনিয়ত নারীদের সেবা দেওয়া হচ্ছে। জামালপুরে চরঅঞ্চল বেশি থাকায় অনেক ক্ষেত্রে আমাদের কাছে খবর আসতে দেরি হয়, সেক্ষেত্রে আপনাদেরও সহযোগিতা আমাদের প্রযোজন। আমাদের কাছে খবর যত বেশি দ্রুত আসবে আমরা তত দ্রুত ব্যবস্থা নিতে পারবো। পুলিশের পক্ষ থেকে প্রতিটি ইউনিয়নে একটি করে কমিটি করে দেওয়া হয়েছে যারা জনসচেতনতায় কাজ করছে এবং আমরা পুলিশের সেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌছে দিতে প্রতিনিয়ত কাজ করছি।’
বিশেষ অতিথি লিগ্যাল এইড অফিসার মো. ইকবাল মাহমুদ বলেন, ‘নারী নির্যাতন প্রতিরোধে বিচার বিভাগের ভূমিকা রয়েছে। মাননীয় বিজ্ঞ জেলা জজ নির্যাতিত নারীর দ্রুত বিচার প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে খুবই আন্তরিক এবং তৎপর। লিগ্যাল এইডের প্যানেল আইনজীবীদের লিগ্যাল এইডের মামলার ব্যাপারে উদাসীনতা দূর করা গেলে দ্রুত সময়ে মামলা শেষ করা সম্ভব। আপনারা যদি জেলা লিগ্যাল এইড কমিটির মাসিক সভায় সংবেদনশীল মামলার তথ্য উপস্থাপন করেন, তাহলে আমরা সে মামলাগুলোর দ্রুত তারিখ দিয়ে অল্প সময়ে বিচার প্রাপ্তিতে সহযোগিতা করবো।’
বিশেষ অতিথি মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কামরুন্নাহার বলেন, ‘বর্তমানে নারীর প্রতি নির্যাতন সহিংসতা বেড়ে গেছে যা অসহনীয় পর্যায়ে চলে গেছে। আমরা জিও, এনজিও সকলেই একতাবদ্ধ হয়ে নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে কাজ করছি। অশিক্ষা, দারিদ্রতা থেকে আমরা যেভাবে বেরিয়ে এসেছি সেভাবে নারী নির্যাতনের হার কমাতে কাজ করতে হবে। নারীর প্রতি সহিংসতা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হলো মানবিক মূল্যবোধের অবক্ষয়। এ থেকে বের হয়ে আসতে আমাদের পারিবারিক বন্ডিং বাড়াতে হবে, ছেলে মেয়েদের আরো বেশি সময় দিতে হবে। এছাড়া নারীর প্রতি সহিংসতা কমাতে কমিউনিটিতে আইনের বিষয়ে আরো সচেতনতা বাড়াতে হবে বলে আমি মনে করি।’
সবশেষে আলোচনা সভার সভাপতি স্বাবলম্বী উন্নয়ন সমিতির সহকারী প্রকল্প পরিচালক মুর্শেদ ইকবাল সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে সভার কার্যক্রম সমাপ্তি ঘোষণা করেন।
আশা করা যাচ্ছে এই অনলাইন সভার মাধ্যমে মাল্টি-সেক্টর সেবাপ্রদানকারীদের নিজেদের মধ্যে এবং তাদের সাথে সুশীল সমাজ সংগঠনের মেলবন্ধনের মাধ্যমে সম্পর্ক উন্নয়ন ও পারস্পরিক যোগাযোগ সৃষ্টি হবে যা সকল প্রতিবন্ধকতা দূর করে সুষ্ঠু সমন্বয়ের মাধ্যমে সারভাইভারদের আরো উন্নত সেবা পেতে সাহায্য করবে।