যমুনা সার কারখানায় চারদিন ধরে সার উত্তোলন বন্ধ, লোকসানের মুখে ডিলাররা

যমুনা সার কারখানার স্তুপিকৃত সারগুলো এভাবেই বৃষ্টির পানিতে ভিজে নষ্ট হচ্ছে। ছবি : বাংলারচিঠিডটকম

সরিষাবাড়ী (জামালপুর) প্রতিনিধি
বাংলারচিঠিডটকম

জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার তারাকান্দিতে অবস্থিত ইউরিয়া উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান যমুনা সার কারখানায় (জেএফসিএল) ভেজা ও ছেঁড়া বস্তার পঁচা সার উত্তোলন বন্ধ রেখেছে যমুনার ডিলাররা। ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে সার উত্তোলন বন্ধ করায় লোকসানের মুখে পড়েছে ডিলাররা। এতে চারদিন ধরে বৃহত্তর ময়মনসিংহসহ উত্তরাঞ্চলের ২০ জেলায় সার সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।

যমুনা সার কারখানার বিক্রয় শাখা সূত্র জানায়, কারখানায় বর্তমানে নিজস্ব উৎপাদিত ইউরিয়া সার মজুদ রয়েছে ৫২ হাজার ২৬০ মেট্রিক টন। অপরদিকে বাইরে থেকে আমদানি করা সারের মজুদ রয়েছে ৩৩ হাজার ৪৪৯ মেট্রিক টন। বিসিআইসি’র তালিকাভূক্ত ডিলারদের প্রতিমাসে কারখানার কমান্ড এরিয়ায় সরবরাহের জন্য ১২ মেট্রিক টন সার বরাদ্দ। এরমধ্যে যমুনা সার কারখানার উৎপাদিত সার ১০ মেট্রিক টন ও আমদানিকৃত ২ মেট্রিক টন সার গ্রহণ বাধ্যতামূলক করে কর্তৃপক্ষ।

সংশ্লিষ্ট ডিলারদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, আমদানিকৃত সারগুলোর বস্তা ছেঁড়া-ফাঁটা ও জমাটবাঁধা। অপরদিকে কারখানার গুদামে ধারণক্ষমতা না থাকায় সারের বস্তাগুলো বাইরে স্তুপাকারে রেখে দেওয়া হয়েছে। এতে চলমান বৃষ্টিতে সারগুলো পঁচে-গলে গুণগত মান নষ্ট হয়ে যায়। নিম্নমানের সার কৃষকরা গ্রহণ না করায় ডিলারদের প্রতিমাসে বিপুল অঙ্কের টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে। ফলে ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে ডিলাররা পঁচা সার গ্রহণ বন্ধ করে দেওয়ায় চারদিন ধরে সার সরবরাহ সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে।

কারখানার অভ্যন্তরে জমাট বাঁধা সার ট্রাক্টর দিয়ে রিফাইং করা হচ্ছে। ছবি : বাংলারচিঠিডটকম

মেসার্স আকলিমা এন্টারপ্রাইজের মালিক আলী আকবর মিয়া, চাঁন মিয়া এন্টারপ্রাইজের মালিক মোজাম্মেল হক মুকুল ও মেসার্স এল কে এন্টারপ্রাইজের মালিক লুৎফর রহমানসহ কয়েকজন ডিলার অভিযোগ করেন, খোলা আকাশের নীচে ফেলে রাখা সার দীর্ঘদিন রোদে পুড়ে ও বৃষ্টিতে ভিজে গুণগতমান নষ্ট হয়ে যায়। কর্তৃপক্ষ পুণরায় সেগুলো রিফাইং ও রিপ্যাকিং করে ডিলারদের নিতে বাধ্য করে আসছে। সারগুলো জমিতে প্রয়োগের সময় পাউডার হয়ে ওড়ে যায় ও ফসলের কোনো কাজেই আসে না। ফলে ওইসব নিম্নমানের সার কৃষক নিতে না চাওয়ায় ডিলারদের প্রতিমাসে বিপুল পরিমাণ টাকা লোকসান গুণতে হচ্ছে। তাই এসব গ্রহণ বন্ধ করা হয়েছে।

অভিযোগ রয়েছে, কারখানার কর্তৃপক্ষ দায় এড়াতে জমাট বাঁধা সার ট্রাক্টর দিয়ে পিষে ও হাতুড়ি দিয়ে ভেঙে সেগুলো রিপ্যাকিং করে ডিলারদের বরাদ্দকৃত সারের সাথে ঢুকিয়ে দেয়। তবে ‘নগদ সেলামি’র বিনিময়ে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী সিণ্ডিকেট কোনো কোনো ডিলারকে ভালো সার পাইয়ে দেয় বলে অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি নিয়ে গত আগস্ট মাসেও ডিলারদের সাথে কর্তৃপক্ষের বনিবনা না হওয়ায় তারা তিনদিন সার উত্তোলন বন্ধ রাখে। ২৩ আগস্ট এক সমঝোতা বৈঠকে কর্তৃপক্ষ ভালো সার সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দিলে সরবরাহ শুরু হয়। কর্তৃপক্ষ শর্ত অমান্য করায় ডিলাররা ফের সরবরাহ বন্ধ করে। সরবরাহ বন্ধ থাকায় কারখানার কমাণ্ড এরিয়ায় চলতি মওসুমে সারের দাম বৃদ্ধির শঙ্কা করছে স্থানীয়রা।

এ ব্যাপারে যমুনা সার কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সুজিদ মজুমদারের বক্তব্য জানতে মুঠোফোনে চেষ্টা করে পাওয়া যায়নি।

কারখানার ব্যবস্থাপক (বিক্রয়) ওয়ায়েছুর রহমান এ প্রতিবেদককে জানান, ‘ডিলাররা চারদিন ধরে সার গ্রহণ বন্ধ রেখেছে। ২৬ সেপ্টেম্বর দুপুরে ডিলারদের সাথে আলোচনা করেছি। তাদের দাবিগুলো কারখানার কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে। এর বাইরে তিনি মন্তব্য করতে রাজি হননি।

sarkar furniture Ad
Green House Ad