নকলায় পরিবেশ বিপর্যয় হচ্ছে অনুমোদনহীন চিড়া তৈরির মিলে

শফিউল আলম লাভলু, নকলা (শেরপুর) প্রতিনিধি
বাংলারচিঠিডটকম
শেরপুরের নকলা উপজেলায় অনুমোদন ছাড়াই প্রায় ২০/২২ বছর বছর যাবৎ প্রধান সড়ক ও আবাসিক এলাকায় বসত বাড়ির পাশে চিড়া তৈরির মিল চালানো হচ্ছে। উপজেলার পৌর শহরের সরকারি হাজী জালমামুদ কলেজেরে সামনে মো. শফিক মিয়া পাড়ই ও জিয়ারুল পাড়ই অনুমোদন ছাড়াই এই চিড়া তৈরির মিল দিয়ে ব্যবসা করে আসছে।
চিড়া তৈরির মিলের কালো ধোঁয়ায় এবং ছাইয়ের কনার কারণে আশপাশের বশত বাড়ির ক্ষতি হচ্ছে। গাছের ফল নষ্ট হচ্ছে। মরিচা ধরে নষ্ট হচ্ছে টিনের চাল। গোসলের পরে কাপরও শুকাতে পারে না ভাড়াটিয়া ও বাসার মালিকগণ। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হচ্ছে বয়স্ক ও শিশুদের। কালো ধোঁয়ার কারণে আশেপাশের পরিবেশ মারাত্মকভাবে দূষিত হচ্ছে। তাছাড়া নকলা থেকে চন্দ্রকোনা যাওয়ার একমাত্র রাস্তা এটা। মিলের উড়ন্ত ছাইয়ের কারনে পথচারীদের চলাচলে ব্যাপক অসুবিধা হচ্ছে। সড়কটি দিয়ে মোটরসাইকেল, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ট্রাকসহ প্রতিদিন শতশত যানবাহন চলাচল করে বলে শ্রমিকেরা জানান।
অনুমোদন ছাড়া চিড়ার মিলের বিরুদ্ধে স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ বিভাগ, পরিবেশ অধিদপ্তরের জেলা ও বিভাগীয় কার্যালয়সহ নকলা প্রেসক্লাবে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন স্থানীয়রা।
ভাটার পাশের বাড়িতে বসবাসকারী জাহিদ হাসান সবুজ জানান, চিড়ার মিলের কালো ধোঁয়ার কারণে আমার বয়স্ক মা ঘর থেকে বের হতে পারে না। ঠিকমত শ্বাস দিতে পারে না এবং গোসলের পরে রোদে কোন কাপড়ও শোকাতে পারে না। অনেক ঘরে টিনের চালে মরিচা ধরেছে।
এম এ ইউসুফ হাসান বলেন, চিড়ার মিলের অনুমোদন আছে কি না তা আমাদের জানা নেই। গাছে ফুল-ফল কিছুই থাকছে না। কাউকে কিছু বলেও লাভ হয় না। তাই কষ্ট সহ্য করে থাকি।

নুরুন নাহার রিতা ও সানজিদা আক্তার ইশিতা জানান, বাসার কোন জানালা দরাজা খোলা যায় না। শিক্ষার্থীরাও জালালা খোলে পড়ালেখা করতে পারে না। কালো ধোঁয়া ও ছাইয়ের কারণে বাসার বারান্দা বা উঠানে বাচ্চারা খেলাধুলাও করতে পারে না। জেলখানার মতন বন্দি জীবন কাটাতে হয়। স্থানীয় পৌর কাউন্সিলর মো. শফিকুল হাছান রুবেল জানান, বিষয়টি আমিও দেখেছি। আমি নিজে সরোজমিন ঘুরে দেখেছি। সত্যিই জনসাধরণের ক্ষতি হচ্ছে।
চিড়ার মিল মালিক শফিক পাড়ই বলেন, আমরা বৈধ কাগজপত্র নিয়েই ব্যবসা করে আসছি। আমাদের কালো ধোঁয়া ও ছাই উড়ে যদি আমাদের ঘরের বাহিরে যায় তাহলে আমরা বন্ধ করে দিব।
নকলা থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আলমগীর হোসেন শাহ জানান, এ বিষয়ে আমরা একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। থানা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) সুবুজকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে আইনানুগভাবে পরবর্তী ব্যাবস্থা গ্রহণের জন্য।
নকলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাহিদুর রহমান জানান, এ বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি এবং সরেজমিনে ঘুরে দেখেছি। পরিবেশ অধিদপ্তরের সাথে যোগাযোগ করা হয়েছে। দ্রত সময়ের মধ্যে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পরিবেশ অধিদপ্তর শেরপুরের সহকারী পরিচালক রাসেল নোমান জানান, নকলা উপজেলায় পৌর শহরের ভিতরে আবাশিক এলাকায় পরিবেশের ছাড়পত্র বিহীন চিড়ার মিল রয়েছে এবং পরিশেষ দুষণসহ সাধারণ জনগনের ক্ষতি হচ্ছে বলে এই মর্মে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়ে সরোজমিনে পরিদর্শন করেছি। আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে এদের বিরুদ্ধে প্রয়োজীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।