করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সরকারি নির্দেশনা

বাংলারচিঠিডটকম ডেস্ক : বিদেশ ফেরতদের হোম কোয়ারেন্টিনে থাকাকালে সরকারি নির্দেশনা মেনে চলতে অনুরোধ জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। ২৯ মার্চ এক সরকারি তথ্যবিবরণীতে এ নির্দেশনা জানানো হয়।

নির্দেশনায় বলা হয়, বিদেশ ফেরতদের বাড়ির অন্য সদস্যদের থেকে আলাদা থাকতে হবে। সম্ভব না হলে, অন্যদের থেকে অন্তত ১ মিটার (৩ ফুট) দূরে থাকতে হবে এবং ঘুমানোর জন্য পৃথক বিছানা ব্যবহার করতে হবে। অন্য সদস্যদের থেকে আলাদা আলো বাতাসের সুব্যবস্থা সম্পন্ন ঘরে থাকতে হবে। যদি সম্ভব হয় তাহলে আলাদা গোসলখানা এবং টয়লেট ব্যবহার করতে হবে। সম্ভব না হলে, অন্যদের সাথে ব্যবহার করতে হয় এমন স্থানের সংখ্যা কমাতে হবে ও ওই স্থানগুলোতে জানালা খুলে রেখে পর্যাপ্ত আলো-বাতাসের ব্যবস্থা করতে হবে।

বুকের দুধ খাওয়ান এমন মা শিশুকে বুকের দুধ খাওয়া অব্যাহত রাখবেন। শিশুর কাছে যাওয়ার সময় মাস্ক ব্যবহার করতে হবে এবং ভালোভাবে হাত ধুয়ে নিতে হবে। আপনার সাথে কোনো পশু অথবা পাখি রাখবেন না।

বাড়ির অন্য সদস্যদের সঙ্গে একই ঘরে অবস্থান করলে, বিশেষ করে এক মিটারের মধ্যে আসার সময় মাস্ক ব্যবহার করা উচিত। প্রয়োজনে বাড়ি থেকে বের হলে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে।

মাস্ক পরে থাকাকালীন এটি হাত দিয়ে ধরা থেকে বিরত থাকুন। মাস্ক ব্যবহারের সময় প্রদাহের (সর্দি, থুতু, কাশি, বমি ইত্যাদি) সংস্পর্শে আসলে সঙ্গে সঙ্গে মাস্ক খুলে ফেলুন এবং নতুন মাস্ক ব্যবহার করুন। মাস্ক ব্যবহারের পর ঢাকনাযুক্ত ময়লার পাত্রে ফেলুন এবং সাবান পানি দিয়ে ভালোভাবে হাত ধুয়ে নিন।

টিস্যু পেপার ও মেডিক্যাল মাস্ক ব্যবহারের পর ঢাকনাযুক্ত ময়লা ফেলার ঝুড়িতে ফেলুন। ব্যক্তিগত ব্যবহার সামগ্রী অন্য কারো সাথে ভাগাভাগি করে ব্যবহার করবেন না।

আপনার খাওয়ার বাসনপত্র- থালা, গ্লাস, কাপ ইত্যাদি, তোয়ালে, বিছানার চাদর অন্য কারো সাথে ভাগাভাগি করে ব্যবহার করবেন না। এসব জিনিসপত্র ব্যবহারের পর সাবান-পানি দিয়ে ভালোভাবে পরিষ্কার করে ফেলুন।

চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী আপনার কোয়ারেন্টিন শেষ হবে। চিকিৎসকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী একজন হতে অন্যজনের কোয়ারেন্টাইনের সময়সীমা আলাদা হতে পারে। তবে, এ পর্যন্ত পাওয়া তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে এ সময়সীমা ১৪ দিন।

কোয়ারেন্টিনকালে সকলের সাথে ফোন অথবা মোবাইল বা ইন্টারনেটের সাহায্যে যোগাযোগ রাখুন।

শিশুকে তার জন্য প্রযোজ্যভাবে বোঝান। তাদের পর্যাপ্ত খেলার সামগ্রী দিন এবং খেলনাগুলো খেলার পরে জীবাণুমুক্ত করুন। আপনার দৈনন্দিন রুটিন, যেমন- খাওয়া, হালকা ব্যায়াম ইত্যাদি মেনে চলুন। সম্ভব হলে বাসা থেকে অফিসের কাজ করতে থাকুন। বইপড়া, গান শোনা, সিনেমা দেখা অথবা উপযুক্ত নিয়মগুলোর সাথে পরিপন্থী নয় এমন যেকোনো বিনোদনমূলক কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখুন।

পরিবারের সদস্য যারা সুস্থ আছেন এবং যাদের দীর্ঘমেয়াদি রোগসমূহ (যেমন : ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, ক্যানসার, অ্যাজমা প্রভৃতি) নেই, এমন একজন নির্দিষ্ট ব্যক্তি পরিচর্যাকারী হিসেবে নিয়োজিত হতে পারেন। তিনি ওই ঘরে বা পাশের ঘরে থাকবেন, অবস্থান বদল করবেন না। কোয়ারেন্টিনে আছেন এমন ব্যক্তির সাথে কোনো অতিথিকে দেখা করতে দিবেন না।

পরিচর্যাকারী খালি হাতে ওই ঘরের কোনো কিছু স্পর্শ করবেন না।

কোয়ারেন্টাইনে থাকা ব্যক্তির সংস্পর্শে এলে বাতাস ঘরে ঢুকলে; খাবার তৈরির আগে ও পরে এবং খাবারের আগে ও টয়লেট ব্যবহারের পরে, গ্লাভস পরার আগে ও খোলার পরে, হাত দেখে নোংরা মনে হলে প্রতিবার দুই হাত পরিষ্কার করবেন।

কোয়ারেন্টাইনে থাকা ব্যক্তির ব্যবহৃত বা তার পরিচর্যায় ব্যবহৃত মাস্ক, গ্লাভস, টিস্যু ইত্যাদি অথবা অন্য আবর্জনা ঢাকনাযুক্ত ময়লার পাত্রে রাখুন। এসব আবর্জনা উন্মুক্ত স্থানে না ফেলে পুড়িয়ে ফেলুন।

ঘরের মেঝে, আসবাবপত্রের সকল পৃষ্ঠতল, টয়লেট ও বাথরুম প্রতিদিন অন্তত একবার পরিষ্কার করতে হবে। পরিষ্কারের জন্য ১ লিটার পানির মধ্যে ২০ গ্রাম (২ টেবিল চামচ পরিমাণ) ব্লিচিং পাউডার মিশিয়ে দ্রবণ তৈরি করতে হবে। এই দ্রবণ দিয়ে সকল স্থান ভালোভাবে মুছতে হবে। তৈরিকৃত দ্রবণ সর্বোচ্চ ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত ব্যবহার করা যাবে।

কোয়ারেন্টিনে থাকা ব্যক্তিকে নিজের কাপড়, বিছানার চাদর, তোয়ালে ইত্যাদি ব্যবহৃত কাপড় গুঁড়া সাবান অথবা কাপড় কাচা সাবান ও পানি দিয়ে ভালোভাবে পরিষ্কার করতে বলুন এবং ভালোভাবে শুকিয়ে ফেলুন।

নোংরা কাপড় একটি লন্ড্রি ব্যাগে আলাদা রাখুন। মল-মূত্র বা নোংরা লাগা কাপড় ঝাঁকাবেন না এবং নিজের শরীর বা কাপড়ে যেন না লাগে তা খেয়াল করুন।

কোয়ারেন্টিনে থাকার সময় কোনো উপসর্গ দেখা দিলে (১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট এর বেশি জ্বর, কাশি, সর্দি, গলাব্যথা, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি), অতি দ্রুত আইইডিসিআর-এর হটলাইন নম্বরে অবশ্যই যোগাযোগ করে পরবর্তী করণীয় জেনে নিতে নির্দেশনায় বলা হয়েছে।সূত্র:বাসস।