ঢাকা ০২:০৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ২২ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
কালুরঘাটে ১১,৫৬০ কোটি টাকার রেল-কাম-সড়ক সেতু নির্মাণ প্রকল্প একনেকে অনুমোদন আলী রীয়াজের নেতৃত্বে সংবিধান সংস্কারে পূর্ণাঙ্গ কমিশন গঠন চিকিৎসাশাস্ত্রে নোবেল পেলেন মার্কিন বিজ্ঞানী ভিক্টর অ্যামব্রোস ও গ্যারি রুভকুন ইসলামপুরে দুর্গাপূজা উদযাপন উপলক্ষে মতবিনিময় র‌্যাবের অভিযান : শেরপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনে হামলা মামলার আসামি মোশারফ গ্রেপ্তার আরও শক্তিশালী হলো ঘূর্ণিঝড় ‘মিল্টন’, আঘাত হানবে যখন আমি ইসলামপুরে আপনাদের সেবা করার জন্য এসেছি : নবাগত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দুর্গাপূজায় অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে সরিষাবাড়ীতে পুলিশের মতবিনিময় ঝিনাইগাতীতে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে বসুন্ধরা শুভসংঘ বকশীগঞ্জে অবৈধ পার্কিং করায় ভ্রাম্যমাণ আদালতে সিএনজি চালকদের জরিমানা

২৫০ শয্যার জামালপুর জেনারেল হাসপাতাল ফাঁকা, চিকিৎসা পাচ্ছে না রোগীরা

জামালপুর জেনারেল হাসপাতালের মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ড। মাত্র দুজন রোগী ভর্তি আছেন। হাসপাতালের প্রতিটি ওয়ার্ডের চিত্র প্রায় একই। ছবিটি ২৫ মার্চ বেলা পৌনে একটার দিকে তোলা। ছবি : বাংলারচিঠিডটকম

জামালপুর জেনারেল হাসপাতালের মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ড। মাত্র দুজন রোগী ভর্তি আছেন। হাসপাতালের প্রতিটি ওয়ার্ডের চিত্র প্রায় একই। ছবিটি ২৫ মার্চ বেলা পৌনে একটার দিকে তোলা। ছবি : বাংলারচিঠিডটকম

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
বাংলারচিঠিডটকম

বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের রোগী শনাক্ত ও মৃত্যুর ঘটনার পর থেকেই ২৫০ শয্যার জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা সেবায় ধ্বস নেমেছে। ডাক্তার না পাওয়ায় প্রতিদিনই শত শত রোগী চিকিৎসা না পেয়ে ফেরৎ যাচ্ছেন। ২৫ মার্চ দুপুর দুইটা পর্যন্ত এই হাসপাতালে রোগী ভর্তি ছিল মাত্র ৮৫ জন।

২৫ মার্চ দুপুরে হাসপাতালে গিয়ে দেখা দেছে, ২৫০ শয্যার এই হাসপাতালে প্রতিদিন অন্তত ৫০০ এর চেয়েও বেশি রোগী ভর্তি থাকে। বহির্বিভাগে প্রতিদিন অন্তত সহস্রাধিক রোগী সেবা নিতে ভিড় করেন। হাসপাতালের মেঝে ও বারান্দার বিছানা পেতে থাকতে হয় রোগীদের। রোগী ও রোগীর স্বজনদের ভিড়ে হাসপাতালের কোথাও তিলধারণের ঠাই হতো না। কিন্তু করোনাভাইরাস আতঙ্কের মধ্যে সেই হাসপাতালটির পুরোটাই ফাঁকা হয়ে গেছে।

গত ২৪ ঘন্টায় এই হাসপাতালে রোগী ভর্তি হয়েছেন মাত্র ৮৫ জন। চারতলার অর্থোসার্জারি পুরুষ ওয়ার্ডে কোনো রোগী ভর্তি নেই। প্রধান ফটকে তালা ঝুলছে। পাশের শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছে ২১ জন শিশু ও ডায়রিয়া ওয়ার্ডে দুইজন, তিনতলায় পুরুষ সার্জারি ওয়ার্ডে ১৭ জন ও মহিলা সার্জারি ওয়ার্ডে নয়জন, দোতলায় গাইনি ওয়ার্ডে চারজন ও প্রসূতী ওয়ার্ডে ২০ জন, নিচতলায় পুরুষ মেডিসিন ওয়ার্ডে চারজন এবং মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি আছেন মাত্র আটজন রোগী।

হাসপাতালের বহির্বিভাগে দু’জন আরএমও’র কক্ষসহ নারী, শিশু ও পুরুষ রোগীদের চিকিৎসাসেবা দেওয়ার জন্য বহির্বিভাগের কোনো কক্ষেই ডাক্তার নেই। রোগীদের তিনটি টিকিট কাউন্টার ও ওষুধ সংগ্রহের দুটি কাউন্টার বন্ধ। হাসপাতালের জরুরি বিভাগ ছাড়া গোটা হাসপাতালের ওয়ার্ডগুলোতে সার্বক্ষণিক ডাক্তার থাকার কথা থাকলেও কোনো ওয়ার্ডেই একজন ডাক্তারেরও দেখা মিললো না। হাসপাতালের এক্স-রে ও আল্ট্রা সনোগ্রাম কক্ষ ও ল্যাবেও কোনো ডাক্তার বা স্বাস্থ্যকর্মীদের পাওয়া যায়নি। গোটা হাসপাতাল ফাঁকা হয়ে গেছে। শ্বাসকষ্ট ও জ¦রের রোগী দেখা অনেকটা বন্ধই রয়েছে। এই ধরনের রোগীদের পাঠানো হচ্ছে হাসপাতাল থেকে তিন কিলোমিটার দূরে শেখ হাসিনা মেডিক্যাল কলেজ নির্মাণ প্রকল্প এলাকায় স্থাপিত আইসোলেশন ওয়ার্ডে থাকা মেডিক্যাল টিমের কাছে। এছাড়া ডাক্তারের সাক্ষাত না পেয়ে রোগীদের ফিরে যেতে হচ্ছে বাইরের ক্লিনিকগুলোতে। ফলে রোগী ও রোগীর স্বজনদের মাঝে বেড়েছে চরম দুর্ভোগ।

করোনাভাইরাস আতঙ্কের মধ্যে গোটা হাসপাতাল ডাক্তারশূন্য হয়ে গেলেও প্রতিটি ওয়ার্ডে নার্স, ইনটার্ন মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট, আয়া, ঝাড়ুদারদের উপস্থিতি দেখে মনে হলো তারাই হাসপাতাল চালাচ্ছেন। বিভিন্ন ওয়ার্ডের নার্সরা জানান, করোনাভাইরাস নিয়ে তারা খুবই আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। তাদের সহকারী পরিচালক, জরুরি বিভাগের একজন ডাক্তার এবং নার্সরাই এখন আছেন হাসপাতালে। নার্সদের জন্য কোনোরূপ নিরাপত্তা পোশাকসহ পিপিই সরবরাহ করা হয় নাই। এ নিয়ে নার্সদের মধ্যে বেশ আতঙ্ক ও উদ্বেগ নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে। হাসপাতালের ওয়ার্ডের আয়া ছাড়াও পরিচ্ছন্নকর্মীদের জন্য স্বাস্থ্য সুরক্ষার পোশাকসহ কোনো সামগ্রীই সরবরাহ করা হয়নি। তারা ঝুঁকি নিয়েই দায়িত্ব পালন করছেন।

হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসা কর্মকর্তা চিকিৎসক গাজী রফিক এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘দেখেন আমাদের জন্য সুরক্ষামূলক কোনো ব্যবস্থা নেই। তাই ডাক্তারসহ হাসপাতালের প্রত্যেক নার্স ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীদের মাঝে আতঙ্ক ও ভয়ভীতি কাজ করছে। এই অবস্থায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে। তাই আমরা রোগীর চাপ নিচ্ছি না।’

হাসপাতালের সহকারী পরিচালক চিকিৎসক মো. হাবিবুর রহমান ফকির এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘করোনাভাইরাস নিয়ে সবাই ভয়ভীতির মধ্যে রয়েছি। ডাক্তাররা একেবারেই হাসপাতালে আসছেন না তা ঠিক নয়। সীমিত সময়ের জন্য তারা রোগী দেখছেন। তারা স্টেশনেই অবস্থান করছেন। যখন যাকে ডাকা হবে তখনই তারা ছুটে আসবেন। ডাক্তারদের জন্য ইতিমধ্যে পিপিইসহ সব ধরনের সুরক্ষা সরঞ্জাম পেয়েছি। অনেক রোগীরাও করোনা আতঙ্কে হাসপাতালে আসা কমিয়ে দিয়েছেন। জামালপুরে করোনাভাইরাস রোগী এখনও শনাক্ত হয়নি। শনাক্ত হলে তাদের চিকিৎসাসেবা দেওয়ার জন্য নার্স ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীদেরকেও সুরক্ষা সরঞ্জামের আওতায় আনা হবে।

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

কালুরঘাটে ১১,৫৬০ কোটি টাকার রেল-কাম-সড়ক সেতু নির্মাণ প্রকল্প একনেকে অনুমোদন

২৫০ শয্যার জামালপুর জেনারেল হাসপাতাল ফাঁকা, চিকিৎসা পাচ্ছে না রোগীরা

আপডেট সময় ০৪:১২:০০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ মার্চ ২০২০
জামালপুর জেনারেল হাসপাতালের মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ড। মাত্র দুজন রোগী ভর্তি আছেন। হাসপাতালের প্রতিটি ওয়ার্ডের চিত্র প্রায় একই। ছবিটি ২৫ মার্চ বেলা পৌনে একটার দিকে তোলা। ছবি : বাংলারচিঠিডটকম

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
বাংলারচিঠিডটকম

বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের রোগী শনাক্ত ও মৃত্যুর ঘটনার পর থেকেই ২৫০ শয্যার জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা সেবায় ধ্বস নেমেছে। ডাক্তার না পাওয়ায় প্রতিদিনই শত শত রোগী চিকিৎসা না পেয়ে ফেরৎ যাচ্ছেন। ২৫ মার্চ দুপুর দুইটা পর্যন্ত এই হাসপাতালে রোগী ভর্তি ছিল মাত্র ৮৫ জন।

২৫ মার্চ দুপুরে হাসপাতালে গিয়ে দেখা দেছে, ২৫০ শয্যার এই হাসপাতালে প্রতিদিন অন্তত ৫০০ এর চেয়েও বেশি রোগী ভর্তি থাকে। বহির্বিভাগে প্রতিদিন অন্তত সহস্রাধিক রোগী সেবা নিতে ভিড় করেন। হাসপাতালের মেঝে ও বারান্দার বিছানা পেতে থাকতে হয় রোগীদের। রোগী ও রোগীর স্বজনদের ভিড়ে হাসপাতালের কোথাও তিলধারণের ঠাই হতো না। কিন্তু করোনাভাইরাস আতঙ্কের মধ্যে সেই হাসপাতালটির পুরোটাই ফাঁকা হয়ে গেছে।

গত ২৪ ঘন্টায় এই হাসপাতালে রোগী ভর্তি হয়েছেন মাত্র ৮৫ জন। চারতলার অর্থোসার্জারি পুরুষ ওয়ার্ডে কোনো রোগী ভর্তি নেই। প্রধান ফটকে তালা ঝুলছে। পাশের শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছে ২১ জন শিশু ও ডায়রিয়া ওয়ার্ডে দুইজন, তিনতলায় পুরুষ সার্জারি ওয়ার্ডে ১৭ জন ও মহিলা সার্জারি ওয়ার্ডে নয়জন, দোতলায় গাইনি ওয়ার্ডে চারজন ও প্রসূতী ওয়ার্ডে ২০ জন, নিচতলায় পুরুষ মেডিসিন ওয়ার্ডে চারজন এবং মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি আছেন মাত্র আটজন রোগী।

হাসপাতালের বহির্বিভাগে দু’জন আরএমও’র কক্ষসহ নারী, শিশু ও পুরুষ রোগীদের চিকিৎসাসেবা দেওয়ার জন্য বহির্বিভাগের কোনো কক্ষেই ডাক্তার নেই। রোগীদের তিনটি টিকিট কাউন্টার ও ওষুধ সংগ্রহের দুটি কাউন্টার বন্ধ। হাসপাতালের জরুরি বিভাগ ছাড়া গোটা হাসপাতালের ওয়ার্ডগুলোতে সার্বক্ষণিক ডাক্তার থাকার কথা থাকলেও কোনো ওয়ার্ডেই একজন ডাক্তারেরও দেখা মিললো না। হাসপাতালের এক্স-রে ও আল্ট্রা সনোগ্রাম কক্ষ ও ল্যাবেও কোনো ডাক্তার বা স্বাস্থ্যকর্মীদের পাওয়া যায়নি। গোটা হাসপাতাল ফাঁকা হয়ে গেছে। শ্বাসকষ্ট ও জ¦রের রোগী দেখা অনেকটা বন্ধই রয়েছে। এই ধরনের রোগীদের পাঠানো হচ্ছে হাসপাতাল থেকে তিন কিলোমিটার দূরে শেখ হাসিনা মেডিক্যাল কলেজ নির্মাণ প্রকল্প এলাকায় স্থাপিত আইসোলেশন ওয়ার্ডে থাকা মেডিক্যাল টিমের কাছে। এছাড়া ডাক্তারের সাক্ষাত না পেয়ে রোগীদের ফিরে যেতে হচ্ছে বাইরের ক্লিনিকগুলোতে। ফলে রোগী ও রোগীর স্বজনদের মাঝে বেড়েছে চরম দুর্ভোগ।

করোনাভাইরাস আতঙ্কের মধ্যে গোটা হাসপাতাল ডাক্তারশূন্য হয়ে গেলেও প্রতিটি ওয়ার্ডে নার্স, ইনটার্ন মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট, আয়া, ঝাড়ুদারদের উপস্থিতি দেখে মনে হলো তারাই হাসপাতাল চালাচ্ছেন। বিভিন্ন ওয়ার্ডের নার্সরা জানান, করোনাভাইরাস নিয়ে তারা খুবই আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। তাদের সহকারী পরিচালক, জরুরি বিভাগের একজন ডাক্তার এবং নার্সরাই এখন আছেন হাসপাতালে। নার্সদের জন্য কোনোরূপ নিরাপত্তা পোশাকসহ পিপিই সরবরাহ করা হয় নাই। এ নিয়ে নার্সদের মধ্যে বেশ আতঙ্ক ও উদ্বেগ নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে। হাসপাতালের ওয়ার্ডের আয়া ছাড়াও পরিচ্ছন্নকর্মীদের জন্য স্বাস্থ্য সুরক্ষার পোশাকসহ কোনো সামগ্রীই সরবরাহ করা হয়নি। তারা ঝুঁকি নিয়েই দায়িত্ব পালন করছেন।

হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসা কর্মকর্তা চিকিৎসক গাজী রফিক এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘দেখেন আমাদের জন্য সুরক্ষামূলক কোনো ব্যবস্থা নেই। তাই ডাক্তারসহ হাসপাতালের প্রত্যেক নার্স ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীদের মাঝে আতঙ্ক ও ভয়ভীতি কাজ করছে। এই অবস্থায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে। তাই আমরা রোগীর চাপ নিচ্ছি না।’

হাসপাতালের সহকারী পরিচালক চিকিৎসক মো. হাবিবুর রহমান ফকির এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘করোনাভাইরাস নিয়ে সবাই ভয়ভীতির মধ্যে রয়েছি। ডাক্তাররা একেবারেই হাসপাতালে আসছেন না তা ঠিক নয়। সীমিত সময়ের জন্য তারা রোগী দেখছেন। তারা স্টেশনেই অবস্থান করছেন। যখন যাকে ডাকা হবে তখনই তারা ছুটে আসবেন। ডাক্তারদের জন্য ইতিমধ্যে পিপিইসহ সব ধরনের সুরক্ষা সরঞ্জাম পেয়েছি। অনেক রোগীরাও করোনা আতঙ্কে হাসপাতালে আসা কমিয়ে দিয়েছেন। জামালপুরে করোনাভাইরাস রোগী এখনও শনাক্ত হয়নি। শনাক্ত হলে তাদের চিকিৎসাসেবা দেওয়ার জন্য নার্স ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীদেরকেও সুরক্ষা সরঞ্জামের আওতায় আনা হবে।