জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
বাংলারচিঠিডটকম
সরকারি হটলাইন ফোন নম্বর ৯৯৯-এ ফোন করায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে পথভুলে চলে আসা তানভীর (৯) নামের এক শিশুর ঠাঁই হয়েছে জামালপুর সদর থানা হেফাজতে। ৪ মার্চ বিকেলে জামালপুর শহরের ভোকেশনাল মোড়ে আবু সাঈদ বাচ্চু নামের একজন সিএনজিচালক শিশুটিকে পান। জামালপুর সদর থানা ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানায় খবর পাঠালে পুলিশ অনুসন্ধান করে অতি অল্প সময়ের মধ্যেই শিশুটির মাসহ অন্যান্য আত্মীয়স্বজনের সন্ধান পায়। তারা তানভীরকে নিতে সন্ধ্যার আগেই ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে জামালপুরের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন।
অপরদিকে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি কিশোরগঞ্জে হারিয়ে যাওয়া ইয়াসিন আলীকে (১০) ৪ মার্চ শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্র থেকে তার বাবা-মার কাছে হস্তান্তর করা হয়।
সিএনজিচালক আবু সাঈদ বাচ্চু এ প্রতিবেদককে জানান, ৪ মার্চ বেলা তিনটার দিকে শহরের ভোকেশনাল মোড়ে আনুমানিক ৯ বছরের এক ছেলে শিশুকে কাঁদতে দেখে কাছে ডেকে নেন তিনি। শিশুটি জানায়, তার বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার ভাদুগর গ্রামে। তার বাবা হাফিজ মিয়া কুয়েত প্রবাসী এবং মা ফেরদৌসা গৃহিণী। তারা দুই ভাই এক বোন। বড় বোন রিপা স্থানীয় একটি মাদরাসায় ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। তানভীরও মাদরাসায় পড়ে। তার বড় ভাই ফারুক হাট দেখানোর কথা বলে তাকে নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়। তাকে একটি দোকানে রেখে ফারুক আর ফিরে আসেনি। তবে কোথায় কোন দোকানে তাকে রেখে গেছে তাও বলতে পারে না তানভীর। সে তার মায়ের কাছে ফিরে যেতে চায় এবং মায়ের জন্য কান্নাকাটি করতেছে।
আবু সাঈদ বাচ্চু আরো জানান, বিষয়টি দ্রুত ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে জানান তিনি। কিছুক্ষণ পরেই জামালপুর সদর থানা থেকে শিশুটির বিষয়ে তার কাছে ফোন আসে। পরে জামালপুর সদর থানার ওসির নির্দেশে বেলা সোয়া ৪টার দিকে জামালপুর সদর থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মো. হুমায়ুন কবীর ভোকেশনাল মোড় থেকে শিশু তানভীরকে থানা হেফাজতে নিয়ে যান।
জামালপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সালেমুজ্জামান এ প্রতিবেদককে জানান, হারিয়ে যাওয়া ব্রাহ্মণবাড়িয়ার শিশু তানভীরের ব্যাপারে ৯৯৯ নম্বর থেকে ফোন আসার পর দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছি। শিশুটি বর্তমানে থানা হেফাজতে রয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে সে যাতে তার মায়ের কাছে ফিরে যেতে পারে সেই ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে অভিভাবকরা খবর পেয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে রওনা দিয়েছে।
এ ব্যাপারে সদর থানা থেকে খবর পেয়ে উন্নয়ন সংঘের মানবসম্পদ বিভাগের পরিচালক জাহাঙ্গীর সেলিম ও তার সহকর্মী আরজু এবং শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের সমাজকর্মী আরমান আলী থানায় আসেন। উন্নয়ন সংঘের পক্ষ থেকে সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়। ৪ মার্চ দিবাগত রাতের মধ্যেই শিশুটিকে তার মা ও চাচার কাছে উপযুক্ত প্রমাণ সাপেক্ষে হস্তান্তর করা হবে বলে উন্নয়ন সংঘ সূত্র জানায়।
২৭ ফেব্রুয়ারি কিশোরগঞ্জ সমাজসেবা অধিদপ্তরের জেলা প্রবেশন কর্মকর্তা হারিয়ে যাওয়া শিশু ইয়াসিন আলীকে তার সুরক্ষার লক্ষ্যে জামালপুর শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে প্রেরণ করেন। শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ শিশুটিকে কাউন্সিলের মাধ্যমে জানতে পারেন তার বাবা-মা চাঁদপুরে থাকেন। তার কথার সূত্র ধরে শেখ রাসেল কর্তৃপক্ষ চাঁদপুর সদর থানা এবং চাঁদপুর আক্কাছ আলী রেলওয়ে একাডেমির প্রধান শিক্ষক গোফরান হোসেনের সাথে যোগাযোগ করেন এবং শিশুটির ছবি পাঠান। প্রধান শিক্ষক গোফরান হোসেন খুবই আন্তরিকতার সাথে শিশুটির ছবি সম্বলিত পোস্টার ছাপিয়ে চাঁদপুর শহরে লাগিয়ে দেন। এর ফলে দ্রুত সময়ের মধ্যে ইয়াসিনের বাবা-মার সন্ধান পান ওই প্রধান শিক্ষক। ৪ মার্চ দুপুরে শিশুটির বাবা রশিদ আহমেদ ও মা রহিমা বেগম জামালপুরে আসলে উপযুক্ত প্রমাণ সাপেক্ষে ইয়াসিনকে তাদের হাতে হস্তান্তর করা হয়। হস্তান্তরকালে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের পরিচালনা কমিটির সদস্য ও উন্নয়ন সংঘের মানবসম্পদ বিভাগের পরিচালক জাহাঙ্গীর সেলিম, শেখ রাসেলের উপ-প্রকল্প পরিচালক শুভঙ্কর ভট্টাচার্য, সমাজকর্মী আরমান আলী, শিক্ষক নুরুজ্জামান প্রমুখ।