|| নজরুল ইসলাম তোফা ||
পরিকল্পিত উন্নয়নের ছোঁয়াতে বদলে গেছে বা যাচ্ছে বাংলাদেশ। বদলে যাচ্ছে- দেশের জনপ্রিয় ইতিহাস, ঐতিহ্যের তথ্য আদান-প্রদানের বৃহৎ মাধ্যম ডাকঘর। তারমধ্যে বদলেও গেছে ছোট্ট একটি শব্দ চিঠি, তার মাধ্যমে আদানপ্রদানের প্রচলন। এমন চিঠির প্রচলন ও ইতিহাসটা ছিল অনেক পুরোনো। চিঠি অথবা পত্রের মাধ্যমে একজনের পক্ষ থেকে অন্যজনের কাছে লিখিত তথ্যধারক বার্তা বললেও ভুল হবে না। চিঠিতেই দুজন বা দু’পক্ষের মধ্যেই যেন যোগাযোগ বজায় রাখে। বলাই চলে যে, বন্ধু এবং আত্মীয় স্বজনদের খুবই ঘনিষ্ট করে, পেশাদারি সম্পর্ককে খুব উন্নয়ন করে এবং আত্মপ্রকাশের সুযোগ প্রাণবন্ত করে তোলে। কিন্তু ‘ডিজিটাল সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে’ এসেই চিঠি লেখার পাট শেষের পথে। নিজ হস্তে চিঠি লেখার প্রচলন এখন নেই বললেই চলে। কালি কলম বা বল পেনের মাধ্যমেই চেয়ারে বসে ঠিক টেবিলের উপর সাদাকাগজ কিংবা রঙিন কাগজে চিঠি আর লেখেনা। বলতেই হয় যে আধুনিক যুগে উন্নত প্রযুক্তির ছোঁয়ায় কালের গর্ভেই যেন এমন এই মাধ্যমের ব্যবহার বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে। স্ব-হস্তে লেখা চিঠির মধ্যেই হৃদয়ের শত সহস্র কথা ও তার আবেগ, আকুলতা এবং ব্যাকুলতা সব বিষয় প্রকাশ পেত। মা-বাবা তাঁর সন্তনের হাতের লেখা চিঠিটা যখন কাছে পেত, ঠিক তখনই যেন লেখাটিতে কোমল হৃদয় দিয়ে পড়ে। চিঠির মধ্যেই বাবা মা নিজের সন্তানের মুখটাও দেখতে পেতো। অবচেতনে চিঠি বুকে জড়িয়েও আদর করে। প্রাচীন কাল থেকেই মানুষ চিঠি আদানপ্রদান করেছে, ইলিয়াডে তার উল্লেখ ছিল। হিরোডোটাস ও থুসিডাইডিসের রচনাবলীতে তা উল্লেখ করাও আছে।
অশিক্ষিত মানুষরা শুধুমাত্র চিঠি পড়া ও লেখার জন্যেই যেন স্বাক্ষরতা অর্জনের খুব চেষ্টা করেছিল। সেই সময়ে স্বাক্ষরতা টিকিয়ে রাখার বিশাল অবদান ‘চিঠি’। আবার পারিবারিক চিঠি গুলো অনেক সময় খবরের কাগজের বিকল্প হিসাবেই যেন ব্যবহার করেছিল। কোনো চিঠিতে গ্রামের যেকোন ঘটনা ও আশা ভরসার খবর, আবাদের খবর বা প্রাকৃতিক দুর্যোগের খবরসহ বিভিন্ন খবর লেখা থাকত। আসলে, হাতে লেখা চিঠি পরিবারের মধ্যে যেন নিবিড় সম্পর্ক ও ভালবাসার গভীরতার সেতুবন্ধন সৃষ্টি হতো। প্রেম ভালোবাসার চিঠিগুলো তো ছিল একেকটি কালজয়ী বৃহৎ প্রেমের ইতিহাস। প্রচলিত চিঠির যুগেরই সকল প্রেমিক-প্রেমিকারা হৃদয়ের আকুলতা-ব্যাকুলতা কিংবা প্রতীক্ষার প্রহরের খুঁটিনাটি অনেক কিছুই সহজ সরল ভাষায় মনের মাধুরীতে লিখত। যা পড়ে পুলকিত হওয়ার পাশাপাশি তা সংগ্রহ করে রাখতো। চিঠিগুলোর ভাষা ও ভাবকে মনেই হতো শত ফুল দিয়ে গাঁথা একটি গল্প বা উপন্যাস।
বিশ্বের সবচেয়ে বড় চিঠিটা লিখেছিলেন নিউইয়র্কের ব্রুকলিনের একজন নারী তার প্রেমিককে। ১৯৫২ সালে কোরিয়াতেই যুদ্ধ চলাকালীন সময় লেখে। তখন তার প্রেমিক মার্কিন সেনাবাহিনীর একজন যুদ্ধের সৈনিক ছিল। সেই চিঠিটার দৈর্ঘ্য ছিল ৩ হাজার ২০ ফুট লম্বা যা লিখতে সময় লেগেছিল একমাস। আবার খুবই ক্ষুদ্র চিঠি লিখেছিল চমৎকার ভাষাতে ফ্রান্সের বিখ্যাত সাহিত্যিক ও ঔপন্যাসিক ভিক্টর হুগো। তা ছাড়াও আর এক ঘটনা স্মরণ করার মতোই ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের শৈশবের লেখা একটি চিঠি বা পত্র সম্পর্কে বলতেই হয়, তিনি বাড়ি থেকে বহুদূরে পড়তে গিয়েই সবেমাত্র বাংলা স্বরবর্ণের পরিচয় হয়েছিল। তখন তাঁর টাকার প্রয়োজন হয়েছিল। তিনি কী আর করবে, শুধুমাত্র স্বরবর্ণ দিয়েই বাবার কাছে চিঠি বা পত্র লিখেছিল। বর্ণের সাথে ‘কার’ যোগ করলে তা ঠিক এমনটি হয় ‘বাবা টাকা পাঠাও তো পাঠাও, না পাঠাও তো- ভাত অভাবে মরি’। তাঁর চিঠিতে এই ভাবে লিখে ছিল- ‘বব টক পঠও ত পঠও ন পঠও ত ভত অভব মর’।
চিঠি নিয়ে সে সময়ের বহু স্মৃতির মতো এখনকার আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি যুগে তেমন স্মৃতি স্মরণ রাখার মতো নেই বললেই চলে। চিঠিপত্র লেখাকে কেন্দ্র করেই বেড়ে গিয়েছিল চিঠি লেখাকে পেশা রূপে নেয়ার প্রবণতা। ডাকঘরের বারান্দায় লাইনের পর লাইন ধরেই সকল শ্রেণির মানুষের ভিড় লেগেই থাকত। ডাকটিকিট, পোস্টাল অর্ডার, ইনভেলাপ, রেজিস্ট্রিচিঠি, মানিঅর্ডার, পোস্টকার্ড, বীমা, পার্সেল, জিএমই, ভিপিপি, ইএমএস, স্মারক ডাকটিকিট, ডাক জীবনবীমা, লাইফ ইন্স্যুরেন্স, ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংকসহ সরকারি কর্মচারীদের বেতন। এমনকি নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পও ডাকঘর থেকেই যেন সংগ্রহ করতো। এগুলো চাহিদাতেই চিঠিপত্রের আদান প্রদানের মাধ্যম খুব দ্রুতগতিতে জনপ্রিয় হয়ে উঠছিল। তখনকার যুগে যে সব মানুষরা লেখাপড়া জানতোই না, ডাকঘরের লেখকেরা সেই ডাকঘরের বারান্দাতে কিংবা সুবিধাজনক স্থানেই চেয়ার-টেবিল বসিয়ে লেখাপড়া না জানা মানুষের পে চিঠিপত্র, মানিঅর্ডার কিংবা মালামাল প্রেরণসংক্রান্ত কাজ করে দিতো। ব্রিটিশ আমল থেকেই শুরু করে দেড়শ’ বছর পর্যন্তই ছিল চিঠিপত্রের রমরমা অবস্থা। গাঁওগেরামের বেশকিছু স্বল্পশিক্ষিত লোকজনরাই বিনে পয়সায় চিঠি লিখে দেওয়ার কাজ করতো। অবশ্য তাদের কদরই ছিল আলাদা। তাদের এমন এই মানুষের প্রতি মানুষের ভালোবাসা সত্যিই প্রশংসনীয়। তারা যেন নাওয়া-খাওয়ার এতটুকু সময় পেতো না। আর এ যুগের মানুষ হয়েছে স্বার্থপর ও আত্মকেন্দ্রিক।
তখনকার দিনে পত্রমিতালীর প্রচলনও ছিল খুব বেশি। প্রতি বছর প্রচুর ছেলে-মেয়ের নাম ঠিকানা সম্বলিত পত্রমিতালী গাইডও পাওয়া যেত বিভিন্ন বুক স্টলে বা পত্রিকার স্টলে। এসব পত্রমিতালীর গাইড থেকেই অনেকে পছন্দের বন্ধু খুঁজে নিত আর শেয়ার করতো জীবনের সুখ-দুঃখের বহুগল্প। একজন অন্য জনকে চিঠি লিখতো অনেক সুন্দর করে। যাতে স্থান পেত বিভিন্ন কবিতার লাইন বা গানের কথা। ব্যবহার হতো বিভিন্ন বর্ণিল চিঠির প্যাডও। হলুদ খামের এক একটি চিঠি যেন একটি গীতি কবিতা।
আবার অনেক দিনের চিঠিগুলি তারা যেন ফেলে দিতো না। প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই সাইকেলের স্পোকের মাথায় বড়শির মতো করে তার মধ্যেই যেন গেঁথে রাখতো। সেই চিঠিগুলো তাদের নীরব স্বাক্ষী। বাজারে রাইটিং প্যাডও (চিঠি লেখার প্যাড) পাওয়া যেতো। রঙ-বেরঙের হরেক রকমের প্যাডে প্রিয়জনের নিকটে সুস্পষ্ট হরফে বিভিন্ন কালি বা কলমের মাধ্যমে চিঠি লিখতো। আবার চিঠিটা লিখে, আঠা দিয়ে খামের মুখটা বন্ধ করে তাতে স্ট্যাম্প সেঁটে, বহুদূর হেঁটে গিয়ে যেন ডাকবাক্সে চিঠি ফেলতো।প্রেম ও ভালোবাসার ক্ষেত্রে তাদের যদি- প্রেমের ব্যর্থতা আসতো, সেক্ষেত্রে চিঠি দিয়ে অনুভূতিগুলোকে প্রকাশ করতো। আবার পরিবারের চিঠিই হোক বা প্রেমের চিঠি হোক না কেন, তা অবশ্যই নান্দনিকতার সৃষ্টিতেই লেখা হয়। কোন কোন চিঠিটা পড়ে হৃদয় জুড়িয়ে যেত। কোন চিঠি পড়ে আনন্দে পুলকিত হতো। আবার কোন চিঠিটা পড়ে চোখের জলও পড়ে। মনের আবেগ-অনুভূতি এবং চাওয়া-পাওয়া, স্বপ্ন-সাধের কথাগুলো লেখাও থাকতো সকল মানুষের চিঠিতে। ডাক পিয়নের প্রতীক্ষায় দিনের পর দিন মানুষেরা থাকতো কখন পিয়ন এসেই কাঙ্খিত চিঠিটি তার হাতে দেবে। চিঠি পেলেই মনের মধ্যে সে কী অনুরণন! যতক্ষণ চিঠি না পড়বে ততক্ষণ মনের সান্ত্বনা খুঁজে পায়না।
বাংলাদেশের মানুষ বিদেশে চিঠি পৌঁছানোর জন্যে যেন বিশেষ ধরনের নীল রঙের এয়ার মেইল পার অ্যাভয়েন ছাপাঙ্কিত খাম ব্যবহার করতো। বলাই যায় নীল কাগজ এবং খামে লেখা চিঠিগুলো ছিল প্রেমের চিঠির প্রতীক। পোস্ট অফিসের এসব চিঠিকে ঘিরেই এসেছে সভ্যতা। প্রথম স্ট্যাম্প করা চিঠি রানী ভিক্টোরিয়ার রাজত্ব কালে ১৮৪০ সালের দিকেই শুরু হয়। প্রাচীনকাল থেকে ভাব বিনিময়ের প্রধান মাধ্যম ছিল চিঠি। মানুষের মনের ভাব আদান প্রদানে চিঠি দীর্ঘকাল ধরেই রাজত্ব করেছে। এই মাধ্যম যতদিক দিয়ে সফল হয়েছিল, তা ভবিষ্যতে অন্য কোনো মাধ্যমের দ্বারা সফলতা পাবে কিনা সন্দেহ। তাই চিঠির যুগের কথা মনে হলে এখনো যেন মানুষের কানে কানেই ভাসে বাংলা ছায়াছবির জনপ্রিয় গান ‘চিঠি দিও প্রতিদিন, চিঠি দিও/ নইলে থাকতে পারবো না’। প্রেমের এই চিঠি আদান-প্রদানও ছিল অ্যাডভেঞ্চারাস। লুকিয়ে চিঠি লিখে খামে ভরেই ‘পোস্ট অফিসের বাক্সে’ ফেলার পর শুরু হতো ফিরতি চিঠির পাওয়ার প্রহর গোনা। এই ক্ষেত্রে পিয়নরাও ছিল প্রণয় গভীর করে দেওয়ার জন্যে অনুঘটক। গত ৮০ কিংবা ৯০-এর দশকে চিঠিতেই যেন যোগাযোগ মাধ্যম ছিল অন্যতম। চিঠি আসবে প্রেমিক-প্রেমিকার; সেই অপেক্ষাতেই প্রেমিক বা প্রেমিকার বসে থাকা পথের দিকে চেয়ে। চিঠি পাঠাবে ছেলে; মাও যেন অপেক্ষাতে থাকে। স্বামীর চিঠির অপেক্ষাতেই মুখ ভার করে পুকুর পাড়ে স্ত্রী বসে থাকে, যার কোনো অস্তিত্বই আজ খোঁজে পাওয়া যায় না।
চিঠির যুগে মানুষের ভাষাজ্ঞানের সীমাবদ্ধতা থাকলেও আন্তরিকতার বিন্দুমাত্র কমতিও ছিল না চিঠির পাতায়। বানান ও ভাষাগত ভুলভ্রান্তি যেন চাপা পড়েছিল তাদের আন্তরিক ভালোবাসার আড়ালে। বিখ্যাত কবি, মহাদেব সাহাও লিখেছিল-‘ভুল বানানেও লিখো প্রিয়, বেশি হলে কেটে ফেলো তাও…/এটুকু সামান্য দাবি,…চিঠি দিও,… তোমার শাড়ির মতো…/ অক্ষরের পাড়-বোনা একখানি চিঠি’। আগেকার রাজা বাদশারা- প্রেমিকার কাছে চিঠি লেখতো। তারা এক রাষ্ট্রের সাথে অন্য যেকোনো রাষ্ট্রের সম্পর্ক স্থাপন করতে এবং দেশের কূটনৈতিকদের মধ্যে প্রধান সমন্বয় করতে চিঠির মাধ্যমে আদানপ্রদান হতো। তারা স্ব-দেশের খবর দূর-দূরান্তে পৌঁছাতে যেন ঘোড়ায় সওয়ার হয়ে বা কবুতর কিংবা পাখির পায়ে চিঠি লিখে উড়িয়ে দেওয়া হতো। প্রতুত্তরে অন্যান্য দেশের রাজাগণও কবুতরের পায়ে চিঠি লিখে খবর পৌঁছিয়ে দিতো। জানা যায়, সম্রাট শের শাহের সময়েই ঘোড়ায় চড়ে ডাক বিলি প্রথা চালু হয়। কালক্রমেই জমিদারদের এমন প্রথা চালু ছিল। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের ৬৪টি জেলায় চিঠি আদান প্রদানের প্রচলন দেখা দিয়েছিল। রানাররা পিঠে চিঠি বা সংবাদের বস্তাসহ ১ হাতে হারিকেন অন্য হাতে বর্শা নিয়ে রাতের অন্ধকারে এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে ছুটে যেতো।
বাংলা সাহিত্যেও ’চিঠি’ বেশ জায়গা দখল করে আছে। অবশ্য এক্ষেত্রে বলা যায় যে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলো অগ্রগামী। কবিগুরু জীবনে যা চিঠি লিখেছিল তা অন্য কোন কবি ও সাহিত্যিক লিখে ছিল কি না সন্দেহ। আর জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের পত্র নির্ভর আত্মজৈবনিক উপন্যাস লিখেছিল-বাঁধনহারা। সেখানে তিনি প্রথম স্ত্রী নার্গিসকে যে চিঠি লিখেছিল তা আজও অনন্য। চিঠির এক জায়গায় কবি লিখেছিল-‘তুমি ভুলে যেও না আমি কবি,… আমি আঘাত করলেও ফুল দিয়ে আঘাত করি।… অসুন্দর কুৎসিতের সাধনা আমার নয়। আরও লিখা আছে, ‘আমার আঘাত বর্বরের কাপুরুষের আঘাতের মতো নিষ্ঠুর নয়’। সুতরাং- চিঠি যে শুধু মনের ভাব আদানপ্রদান হতো তা নয় বরং কবি সাহিত্যিকদের চিঠির মধ্যেই ফুটে উঠতো সাহিত্য-সংস্কৃতির নানা দিক। কবি কালিদাস কর্তৃক প্রেমিকার নিকট প্রেরিত বার্তাতে দূত ছিল মেঘ। নল-দময়ন্তীর পত্রের বাহক হাঁস, আবার রামায়ণের পত্র বাহক- হনুমান, মহাভারতে বাহক- বিদুর ও আনারকলিতে হরিণ দূতিয়ালির কাজে ব্যবহার হতো চিঠি।
চিঠি বা মানিঅর্ডার কমে যাওয়াতেই যেন সমগ্র দেশের ডাকঘর ও ডাকবাক্সের সংখ্যাও কমে গেছে। জানা যায় বর্তমানে সারাদেশেই রয়েছে ৯ হাজার ৮৮৬টি ডাকঘর। এর মধ্যে বিভাগীয় ডাকঘরের সংখ্যা- ১ হাজার ৪২৬ ও অবিভাগীয় ডাকঘরের সংখ্যা ৮ হাজার ৪৬০টি যেখানে কর্মরত ৩৯ হাজার ৯০৭ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী। আবার বিভাগীয় কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা ১৬ হাজার ৮৮৬ ও ভাতাপ্রাপ্ত বা অবিভাগীয় কর্মচারীর সংখ্যা- ২৩ হাজার ২১ জন। অবিভাগীয় ডাক কর্মচারীদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল একটি জাতীয় স্কেল দেওয়া হয়। কিন্তু তাদের যেন তা পূরণ হয়নি। তাই আশার প্রদীপ এখন সবার কাছেই নিভু নিভু।
কালের পরিক্রমায় মোবাইল ফোন আর বহু যান্ত্রিক যোগাযোগের উন্নতির কারণে যে হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী এই চিঠি লিখন পদ্ধতি। হাতের লেখা চিঠির প্রচলন বর্তমানে না থাকলেও এখনো বহু মানুষ, পুরনো চিঠি পড়ে স্মৃতি রোমন্থন করে, খুঁজে পেতে চায় আপন মানুষগুলোর হার্দিক স্পর্শ। ব্যক্তিগত অনুভূতি মিশানো চিঠিগুলোতে থাকতো মনের গহীনে লুকানো ভাবাবেগ, উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা বা আনন্দ বেদনার সাবলীল প্রকাশ যা অন্য কোন মাধ্যমেই এইভাবে বলা হয়ে উঠেনা বা ব্যক্ত করা সম্ভব না। পুরনো মানুষের চিঠি লেখা হয় না এখন কারো কাছে। চিঠির যুগ বদলে এসেছে- ইমো, ই-মেইল, এসএমএস, হোয়াটসঅ্যাপ, ফেইসবুক, টুইটারসহ নানা ধরনের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। সব শ্রেণির মানুষ প্রয়োজনের তাগিদেই যেন- ‘মুঠোফোন’ ব্যবহার করছে। তাছাড়াও ইন্টারনেট, চ্যাট, ই-মেইল, এসএমএস কিংবা ফেসবুকের মতোই আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে আর কাগজ-কলমে হাতে লিখে চিঠি আদানপ্রদান করছেনা।
মানুষের আবেগ কেড়ে নিয়েছে এমন প্রযুক্তির ব্যবহার, মানুষও আজকে আন্তরিকতা হারিয়ে অনেকটা যান্ত্রিক হয়ে গেছে। অবশ্যই প্রযুক্তির ভালো দিক যেমন রয়েছে তেমন খারাপ দিকটা লক্ষণীয়। তাই আমাদেরকেই ভাল দিকটা বেছে নিতে হবে। তাহলেই যেন এ দেশের হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যবাহী চিঠির সুনাম বিদ্যমান থাকবে। আর দুঃখজনক হলেও সত্য যে বেশিরভাগ ডাকঘরের অবস্থা করুণ। জনবলের অভাবে, ভাঙা চেয়ার ও টেবিল এবং জরাজীর্ণ কাঠের বাক্স ও আলমারি। বর্তমানে সরকারি আসবাবপত্রের বরাদ্দ হলেও তা উপজেলা কিংবা শাখা পর্যায়ের ডাকঘরগুলোতে যেন পৌঁছে না। দেখা যায় যে কোনো কোনো ডাকঘরে যেন প্রয়োজনীয় আলমারি না থাকাতেই অফিসের নথিপত্র যেখানে-সেখানে অরক্ষিতভাবে ফেলে রাখায় তা নষ্ট হচ্ছে। আহা! সে দিনের সেই চিঠির ভাষা হতো ঠিক এমন- “এলাহী ভরসা”। সম্বোধন করতো এমনভাবে,’পাকজনাবেষু ভাইজান, আমার শত কোটি সালাম গ্রহণ করিবেন। সকলকেই আমার সালাম এবং ভালবাসা পৌঁছাইয়া দিবেন। পর সমাচার এই যে’, ইত্যাদি ইত্যাদি। আবার চিঠি নিয়ে কতো গান শুনা যেত এখন আর শুনা যায় না। রেডিও টেলিভিশনে শুনা যেত বিদেশ গিয়ে বন্ধু তুমি আমায় ভুইলো না চিঠি দিও পত্র দিও জানাও ঠিকানারে।
লেখক: টিভি ও মঞ্চ অভিনেতা, চিত্রশিল্পী, সাংবাদিক, কলামিস্ট এবং প্রভাষক।