জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
বাংলারচিঠিডটকম
জামালপুরে বই পাঠে উদ্বুদ্ধ করার কাজে পথিকৃৎ বিশিষ্ট গবেষক, সাহিত্যিক, লেখক ও গ্রন্থাগারিক মু. আজিজুর রহমান আর নেই। তিনি ২৩ জানুয়ারি রাত পৌনে ১১টার দিকে ঢাকায় বারডেম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। ২৪ জানুয়ারি তাঁর মরদেহের দাফন সম্পন্ন হয়েছে।
মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল প্রায় ৮৩ বছর। তিনি দীর্ঘদিন ধরে পারকিনসন্স এবং ডায়াবেটিস রোগে ভুগছিলেন। স্ত্রী, এক ছেলে ও দুই মেয়েসহ অনেক আত্মীয়স্বজন ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন তিনি।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, মু. আজিজুর রহমানের মরদেহ ঢাকা থেকে জামালপুর শহরের দেওয়ানপাড়ায় তার নিজ বাসভবনে নিয়ে আসা হলে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, শিল্প, সাহিত্য, সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের ব্যক্তিবর্গ তাকে একনজর দেখতে ছুটে যান। তারা তাঁর প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি এবং পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
২৪ জানুয়ারি জুমার নামাজের পর জামালপুর শহরের দেওয়ানপাড়ায় টেনিস ক্লাব মাঠে তাঁর নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীরা ছাড়াও সমাজের সর্বস্তরের বিপুল সংখ্যক মানুষ জানাজায় অংশ নেন এবং জানাজা শেষেও তাকে সবাই শ্রদ্ধাঞ্জলি জানান। পরে জামালপুর পৌর কবরস্থানে তাঁর মরদেহ দাফন করা হয়।
প্রসঙ্গত, মু. আজিজুর রহমান জাতীয় যাদুঘরের আজীবন সদস্য এবং বাংলা একাডেমীর ফেলো হিসেবে কাজ করেছেন। এছাড়া তিনি জামালপুর পাবলিক লাইব্রেরীর কার্যকরী কমিটির সদস্যসহ জামালপুরের বিভিন্ন সাহিত্য ও সামাজিক সংগঠনের সাথে যুক্ত ছিলেন। জামালপুর জিলা স্কুলের শতবর্ষ উপলক্ষে প্রকাশিত বার্ষিকীর আহ্বায়ক ছিলেন তিনি। লেখক ও গবেষক হিসেবে তার বেশ সুনাম রয়েছে।
কর্মজীবনে মু. আজিজুর রহমান ১৯৫৫ সালে সরকারি আশেক মাহমুদ কলেজে গ্রন্থাগারিক পদে যোগদান করেন। সরকারি আশেক মাহমুদ কলেজ, সরকারি জাহেদা সফির মহিলা কলেজ, শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ফিশারিজ কলেজ, জামালপুর পাবলিক লাইব্রেরীসহ জেলার অধিকাংশ গ্রন্থাগার গড়ে উঠার পেছনে তার অনেক অবদান রয়েছে। তিনি সরকারি আশেক মাহমুদ কলেজে গ্রন্থাগারিক হিসেবে দায়িত্বপালনকালে এবং পরবর্তীতে জামালপুরের ইতিহাস-ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, রাজনৈতিক, সামাজিকসহ বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণা করেছেন।
তাঁর গবেষণা কর্মের মধ্যে ‘লুপ্ত ঐতিহ্য চৈতন্য নাসারী’ এবং ‘ঈশ্বরচন্দ্র গুহের জীবনী’ বই আকারে প্রকাশিত হয়। এ দুটি বইয়ের মাধ্যমে জানা যায় বাংলাদেশে প্রথম বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে কৃষি কাজের সূচনা হয় জামালপুর শহরের বোসপাড়া এলাকায়। জামালপুরের ভাষা ও মুক্তিসংগ্রাম গবেষণা কেন্দ্র সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে সম্প্রতি গুণী এই গবেষককে সম্মাননা জানিয়েছে।