বাংলারচিঠিডটকম ডেস্ক : মাশরাফি বিন মর্তুজার ঢাকা প্লাটুনকে বিদায় দিয়ে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) টি-২০ ক্রিকেট টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় কোয়ালিফাইয়ারে উঠলো মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স। ১৩ জানুয়ারি এলিমিনেটর ম্যাচে চট্টগ্রাম ৭ উইকেটে হারিয়েছে ঢাকাকে। প্রথমে ব্যাট করে ৮ উইকেটে ১৪৪ রান করে ঢাকা। জবাবে ১৪ বল বাকী রেখেই জয় নিশ্চিত করে চট্টগ্রাম। ১৩ জানুয়ারি সন্ধ্যা খুলনা টাইগার্স ও রাজশাহী রয়্যালসের মধ্যকার প্রথম কোয়ালিফাইয়ার ম্যাচের হেরে যাওয়া দলের সাথে দ্বিতীয় কোয়ালিফাইয়ার খেলবে চট্টগ্রাম।
মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে প্রথমে ফিল্ডিং করার সিদ্বান্ত নেয় চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স। হাতে ১৪টি সেলাই নিয়েই এ ম্যাচে খেলতে নামেন ঢাকার অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। এমন পরিস্থিতিতে ম্যাশের খেলাতেও উজ্জীবিত হতে পারেননি ঢাকার উপরের সারির ব্যাটসম্যানরা। চট্টগ্রাম বোলারদের তোপে ৬০ রানে ঢাকার সাত ব্যাটসম্যান প্যাভিলিয়নে ফিরেন।
তৃতীয় ওভারের শেষ বলে চট্টগ্রামের পেসার রুবেল হোসেনকে উইকেট ছেড়ে মারতে গিয়ে বোল্ড হন ৩ রান করা তামিম। এরপর ক্রিজে আরেক ওপেনার মোমিনুল হকে সঙ্গী হন এনামুল হক বিজয়। তবে রান তোলার কাজটা করছিলেন মোমিনুল। উইকেট সেট হবার পরিকল্পনায় ছিলেন বিজয়। কিন্তু পঞ্চম ওভারের পঞ্চম বলে বিদায় নিতে হয় তাকে। রানের খাতা খোলার আগেই ফিরেন এনামুল। তিনি শিকার হন স্পিনার নাসুম আহমেদের।
এনামুলের বিদায়ের পর তাসের ঘরের মতো ভেঙ্গে পড়ে ঢাকার মিডল-অর্ডার। ইংল্যান্ডের লুইস রিসিকে শুন্য রানেফেরান চট্টগ্রামের অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, মেহেদি হাসান ৭ ও জাকের আলি শুন্য রান করে ওয়েস্ট ইন্ডিজের রায়াদ এমরিতের ও পাকিস্তানের আসিফ আলি ৫ রানে নাসুমের শিকার হন। অর্থাৎ ৩৩ রানে ৬ উইকেট পতন হয় ঢাকার।
অষ্টম উইকেটে শ্রীলংকার থিসারা পেরেরাকে নিয়ে মারমুখী ব্যাট করেন পাকিস্তানের শাদাব। ৩৩ বলে ৪৪ রান যোগ করেন তারা। এরমধ্যে ১৩ বলে ৩টি চার ও ১টি ছক্কায় ২৫ রান করেন পেরেরা। ১৮তম ওভারের চতুর্থ বলে দলীয় ১০৪ রানে অষ্টম ব্যাটসম্যান হিসেবে ফিরেন পেরেরা। এ অবস্থায় ঢাকার রান কত যায় সেটিই দেখার বিষয় ছিলো। কিন্তু পেরেরার বিদায়ে মাশরাফির ব্যাট হাতে নামায় পুরো স্পটলাইট ছিলো অধিনায়কের উপর। কারন ১৪টি সেলাই নিয়ে ব্যাট করাটা কঠিনই। তারপরও ২ বল খেলেছেন তিনি। একবার হাত চেপেও ধরেছিলেন ম্যাশ। কিন্তু শাদাবকে স্ট্রাইক দেয়ার চেষ্টা করেছেন মাশরাফি। স্ট্রাইক পেরে ১৯তম ওভারে চট্টগ্রামের পেসার মেহেদি হাসানকে ২টি চার ও ১টি ছক্কা মারেন শাদাব। ঐ ওভার থেকে ১৬ রান পায় ঢাকা।
শেষ ওভারে জিয়াউর রহমানের প্রথম দুই ডেলিভারিতে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ৩৬ বলে হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন শাদাব। চতুর্থ ডেলিভারিতে নো-বলে ছক্কাও মারেন শাদাব। আর শেষ তিন বলে ২করে ৬ রান নেন শাদাব। ফলে শেষ ওভারে ২৩ রান তুলে সম্মানজনক স্কোর দাঁড় করাতে পারে ঢাকা। ৫টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৪১ বলে অপরাজিত ৬৪ রান করেন শাদাব। চট্টগ্রামের এমরিত ৩টি, রুবেল-নাসুম ২টি করে উইকেট নেন।
জয়ের জন্য ১৪৫ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে চট্টগ্রামের ইনিংস শুরু করেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিস গেইল ও জিয়াউর রহমান। মাশরাফির করা প্রথম ওভার থেকে মাত্র ১ রান নেন গেইল। স্পিনার মেহেদির পরের ওভার থেকেই ১ রানের বেশি পায়নি চট্টগ্রাম। তবে মাশরাফির করা ইনিংসের তৃতীয় ওভারে মারমুখী হয়ে উঠেন জিয়াউর। দু’টি চার ও একটি ছক্কায় ১৫ রান তুলেন জিয়াউর। জিয়াউরের মারমুখী মেজাজের ব্যাটিং-দেখে হাত খোলেন গেইলও। পরের ওভারে মেহেদিকে দু’টি ছক্কা মারেন তিনি।
এরপর আরও একটি চার ও ছক্কা মেরে ঢাকার মেহেদির বলেই আউট হন জিয়াউর। ১২ বলে ৩টি চার ও ২টি ছক্কায় ২৫ রান করেন জিয়াউর। তার আউটের পর গেইলকে নিয়ে দলের রানের চাকা ঘুড়িয়েছেন ইনফর্ম ইমরুল কায়েস। দেখেশুনে খেলে ৪৩ বলে ৪৯ রান যোগ করে চট্টগ্রামের জয়ের পথ সহজ করে তোলেন গেইল ও ইমরুল। ১৩তম ওভারে প্রথমবারের মত আক্রমনে এসেই গেইল-ইমরুল জুটিতে ভাঙ্গন ধরান শাদাব। ২২ বলে ১টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৩২ রান করা ইমরুল বিদায় নেন।
নিজের দ্বিতীয় ওভারে গেইলকে বিদায় দেন শাদাব। স্লগ সুইপ করতে শর্ট ফাইন লেগে ক্যাচ দেন গেইল। জায়গায় দাঁড়িয়েই এক হাতে ধরেন মাশরাফি। বাঁ-হাতে সেলাই থাকায় ডান-হাতে ক্যাচটি নিয়ে ক্রিকেটপ্রেমিদের চমকে দেন ম্যাশ। ৪৯ বলে ১টি চার ও ২টি ছক্কায় ৩৮ রান করেন গেইল।
গেইলের আউটের পর ৩২ বলে ৪৩ রান দরকার ছিলো চট্টগ্রামের। দলের বাকী কাজটুকু সাড়েন অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের চাঁদউইক ওয়ালটন। শাদাবের করা ১৮তম ওভারের তৃতীয় ও চতুর্থ বলে ছক্কা হাঁকিয়ে চট্টগ্রামকে জয়ের বন্দরে নিয়ে যান মাহমুদুল্লাহ। ৪টি ছক্কায় ১৪ বলে অপরাজিত ৩৪ রান করেন মাহমুদুল্লাহ। ১০ বলে ১২ রান নিয়ে অপরাজিত থাকেন ওয়ালটন। ঢাকা শাদাব ৩২ রানে ২ উইকেট নেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
ঢাকা প্লাটুন : ১৪৪/৮, ২০ ওভার (শাদাব ৬৪*, মোমিনুল ৩১, এমরিত ৩/২৩)।
চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স : ১৪৭/৩, ১৭.৪ ওভার (গেইল ৩৮, মাহমুদুল্লাহ ৩৪*, শাদাব ২/৩২)।
ফল : চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স ৭ উইকেটে জয়ী।
ম্যাচ সেরা : রায়াদ এমরিত (চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স)।সূত্র:বাসস।