জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
বাংলারচিঠিডটকম
জামালপুরের কৃতী সন্তান বরেণ্য সাংবাদিক, বাংলা একাডেমির সাহিত্য পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখক ও মুক্তিযোদ্ধা হারুন হাবীবকে সংবর্ধনা দিয়েছে জামালপুরের ভাষা ও মুক্তিসংগ্রাম গবেষণা কেন্দ্র। ১১ জানুয়ারি এ উপলক্ষে জামালপুর পাবলিক লাইব্রেরিতে দিনব্যাপী সাংবাদিক হারুন হাবীবের তোলা মুক্তিযুদ্ধের আলোকচিত্র ও তাঁর লেখা গ্রন্থ প্রদর্শন এবং তাকে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী চিকিৎসক মো. মুরাদ হাসান।
এতে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন জামালপুর সদর আসনের সংসদ সদস্য প্রকৌশলী মো. মোজাফফর হোসেন, সংবর্ধিত অতিথি মুক্তিযোদ্ধা হারুন হাবীব, স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ কবীর উদ্দিন, জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খন্দকার আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আইনজীবী মুহাম্মদ বাকী বিল্লাহ, সহ-সভাপতি সৈয়দ আতিকুর রহমান ছানা, মুক্তিযোদ্ধা সুজায়েত আলী ফকির, মুক্তিযোদ্ধা হায়দার আলী, শিক্ষক মো. আমীর উদ্দিন প্রমুখ।
এর আগে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন জামালপুরের ভাষা ও মুক্তিসংগ্রাম গবেষণা কেন্দ্রের সদস্য জাহাঙ্গীর সেলিম এবং সাংবাদিক হারুন হাবীবের জীবনবৃত্তান্ত পাঠ করেন কবি ফারজানা ইসলাম। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন কবি সাযযাদ আনসারী। অনুষ্ঠানের শুরুতেই উদীচী শিল্পীরা জাতীয় সংগীত, মুক্তিযুদ্ধ ও দেশের গান পরিবেশন করেন।
সাংবাদিক হারুন হাবীবের ক্যামেরায় তোলা মুক্তিযুদ্ধের ১১ নম্বর সেক্টরের বেশ কিছু দুর্লভ আলোকচিত্রসহ যুদ্ধকালীন বিভিন্ন স্থানের অর্ধশত আলোকচিত্র নিয়ে পাবলিক লাইবেরি প্রাঙ্গণে দিনব্যাপী আয়োজন করা হয় আলোকচিত্র প্রদর্শনীর। প্রদর্শনীর একটি স্টলে সাংবাদিক হারুন হাবীবের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক লেখা ১৫টি গ্রন্থসহ তার লেখা ছোটগল্প, উপন্যাস, নাটক ও শিশুতোষ গ্রন্থ প্রদর্শন করা হয়।
বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত উন্মুক্ত এ আলোকচিত্র প্রদর্শনীতে মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষক, স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রী থেকে শুরু করে বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার বিপুল সংখ্যক মানুষ মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক আলোকচিত্রগুলো দেখতে ভিড় করেন। তরুণ প্রজন্মের দর্শনার্থীদের সাথে মিশে হারুন হাবীব তাঁর যুদ্ধকালীন আলোকচিত্রগুলোর স্থান, কাল ও গুরুত্ব প্রসঙ্গে ধারণা দেন।
পরে সন্ধ্যায় জামালপুর পাবলিক লাইব্রেরি মিলনায়তনে জামালপুরের ভাষা ও মুক্তিসংগ্রাম গবেষণা কেন্দ্রের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আলী ইমাম দুলালের সভাপতিত্বে মুক্তিযোদ্ধা হারুন হাবীবকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি তথ্য প্রতিমন্ত্রী চিকিৎসক মো. মুরাদ হাসান বলেন, হারুন হাবীব একজন জীবন্ত কিংবদন্তী। তাকে সংবর্ধনা দিতে পেরে আমরা নিজেরাই সংবর্ধিত হয়েছি। এই গুণি মানুষটি শুধু জামালপুরের কৃতি সন্তান নয় গোটা বাংলাদেশের অহংকার এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের বিশাল এক অংশ হয়ে আছেন। তিনি প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবীত করার জন্য মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আরো অনেক বেশি কাজ করার অনুরোধ জানান। ভবিষ্যতে আরো বৃহত্তর পরিসরে হারুন হাবীবের আলোকচিত্র, সকল প্রকাশনার প্রদর্শনী করা হবে।
সংবর্ধিত অতিথি মুক্তিযোদ্ধা হারুন হাবীব বলেন, আমি এই মাটির সন্তান হয়ে সংবর্ধনা আমার প্রত্যাশার বিষয় নয়। আমার মূল উদ্দেশ্য নতুন প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধকালীন আলোকচিত্র তুলে ধরে তাদের চেতনাকে শাণিত করা। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু এবং জয়বাংলা শ্লোগানবিরোধী ব্যক্তি ও গোষ্ঠী বাংলাদেশবিরোধী চেতনাকেই লালন করে থাকে। যেকেউ বা যেকোনো দল যেকোনো সরকারের সমালোচনা করতেই পারে কিন্তু বাংলাদেশের অস্তিত্বের সাথে মিশে থাকা ওই তিনটি শব্দকে অস্বীকার করার অধিকার কারো নেই।
জামালপুর সদর আসনের সংসদ সদস্য প্রকৌশলী মো. মোজাফফর হোসেন বলেন, হারুন হাবীবের মত ত্রিমুখী এক যোদ্ধাকে আমরা সম্মান জানাতে পেরে আমাদের দায়বোধ থেকে কিছুটা হলেও মুক্তি পেয়েছি। তিনি জামালপুরের সর্বত্র হারুন হাবীবের বই ও মুক্তিযুদ্ধকালীন ছবি ছড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানান।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আইনজীবী মুহাম্মদ বাকী বিল্লাহ বলেন, চেতনাই ভাস্বর লেখক, গবেষক, সাংবাদিক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা হারুন হাবীবের অদম্য সাহসীকতা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের এক বিরল ঘটনা। নিভৃতচারী এই মানুষটাকে আমরা আরো বেশি উদ্ভাসিত করতে চাই। তার আলোয় আলোকিত হবে আমাদের প্রজন্ম।
আলোচনা সভা শেষে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি তথ্য প্রতিমন্ত্রী চিকিৎসক মুরাদ হাসান ও অন্যান্য অতিথিবৃন্দ মুক্তিযোদ্ধা ও সাংবাদিক হারুন হাবীবকে উত্তরীয় পরিয়ে দেন এবং সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদান করেন।