লিয়াকত হোসাইন লায়ন, ইসলামপুর (জামালপুর) প্রতিনিধি
বাংলারচিঠিডটকম
তীব্র শীতে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলার মানুষেরা। তাপমাত্রা হ্রাস পাওয়ায় শীতে কাবু হয়ে দুর্দশার মধ্যে পড়েছে সাধারণ মানুষেরা। তীব্র ঠান্ডায় স্বাভাবিক চলাফেরা বিঘ্ন ঘটছে।
যমুনা, ব্রহ্মপুত্র বিধৌত উপজেলাটি শীতের তীব্রতা তুলনামুলকভাবে বেশি। শৈত প্রবাহ, ঘন কুয়াশায় ঢেঁকে গেছে পুরো উপজেলা। যমুনা চরাঞ্চল বাসীর মানুষের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। চরাঞ্চলে শিশু ও বৃদ্ধদের ঠান্ডায় নানা সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। গত কয়েকদিন থেকে বয়ে যাওয়া হিমেল হাওয়া আর ঘন কুয়াশায় প্রচন্ড শীতে জামালপুরে ইসলামপুর জীবনযাত্রা বিপন্ন হয়ে পরেছে। শুষ্ক আবহাওয়া, বাতাসের মধ্যে আদ্রতা কমে যাওয়া, জেট বায়ু ভূপৃষ্ঠের কাছাকাছি চলে আসার কারণেই তাপমাত্রা এতো বেশি নিচে নেমেছে।
তীব্র শীতকে মোকাবিলার জন্য প্রয়োজনীয় গরম কাপড়ের অভাবে নির্ঘুম রাত কাটে চরাঞ্চল গ্রামের দরিদ্র মানুষের। কাঠ-খড়ের জ্বালানো আগুনের উত্তাপই তাদের ভরসা। অন্যান্য বছর শীতের শুরুতে দানশীল মানুষের কম্বল ও গরম কাপড় বিতরণের খবর পাওয়া গেলেও এবার এখনো তাদের দেখা মেলেনি। গেল বন্যায় আক্রান্ত যমুনার চরাঞ্চল মানুষগুলো পরিবার নিয়ে খুবই কষ্টে দিনগুলো অতিবাহিত করছে।
হিমেল হওয়ায় খেটে খাওয়া মানুষগুলো কর্মহীন হয়ে পড়েছে। শীতে কাবু হয়ে পড়েছে গৃহপালিত পশু-পাখিও। এদিকে ঘন কুয়াশায় বোরো ধানের বীজতলা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষকেরা। অনেকেই পলিথিন দিয়ে ঢেকে দিচ্ছেন বীজতলা। প্রচণ্ড শীতে শিশু ও বয়স্কদের দুর্ভোগ বেড়েছে। শিশুরা আক্রান্ত হচ্ছে ঠান্ডাজনিত রোগে।
সরেজমিনে গেলে, বেলগাছা ইউনিয়নের মন্নিয়া গ্রামের আব্দুস ছাত্তার বলেন, মেলাদিন পড়ে এবে শীত দেখলাম। বেরাহা ঠান্ডায় হাঁটাচলা করতে পাইতেছিনা। সারাদিন আগুন নিয়ে বসি থাহি।
মন্নিয়া গ্রামের শামসুন্নাহার বেগম বলেন, যে ঠান্ডা পড়ছে, আমরা নদীভাঙ্গা মানুষ। আংগরে কিছু আনবের গেলে নদী পাড় হওয়ন নাগে। তাই যাবের পাইনে, কোন কিছুই পাইনে।
চিনাডুলী ইউনিয়নের গিলাবাড়ী গ্রামের রজব আলী জানান, এবার বানে আংগরে বাড়িঘর বাসাইয়া নিয়া গেছে, খুব কষ্ট করে আছি। ঠান্ডায় বাইত থাহন যায়না। খুব কষ্ট আছি পোলাপান নিয়া।
পাথর্শী ইউনিয়নের মোরাদাবাদ গ্রামের যমুনা নদীর পাড়ের জাফর আলী বলেন, নদীর পাড়ে বাড়ি হওয়ায় নদীর ঠান্ডা বাতাসে অসুস্থ হয়ে পড়েছি। কর্ম করতে পারছিনা অনেক সমস্যা হচ্ছে।
কুলকান্দি ইউনিয়নের বেড়কুশা গ্রামের আলম মিয়া জানান, যমুনার পাড়ে বাড়ি হওয়ায় শীতে অনেক কস্টে দিনাতিপাত করছি।
এদিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মিজানুর রহমান ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মেহেদী হাসান জানান, উপজেলা প্রশাসন ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে শীর্তাত মানুষের মাঝে এ পর্যন্ত ৫ হাজার কম্বল বিতরণ করেছে।
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম জামাল আব্দুন নাসের বাবুল জানান, শীতের তীব্রতা বেড়েছে, এবারের তীব্র শীতে চাহিদা অনেক বেশী তবে বিতরণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। সাধারণ মানুষ যাতে শীতে কষ্ট না পায় সেদিকে লক্ষ্য রেখেই প্রতিনিয়তই গ্রামে গ্রামে গিয়ে কম্বল বিতরণ করছি।