ঢাকা ০৫:১৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ২১ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় আঞ্চলিক সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছেন পরিবেশ উপদেষ্টা বকশীগঞ্জ পৌর বিএনপির মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় বিপর্যস্ত নকলা : জেলায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৭ টাকা হাওলাত দিতে অস্বীকার করায় সরিষাবাড়ীতে দুলাভাইকে পিটিয়েছে দুই শ্যালকে শেরপুরের বন্যায় ৫ জনের মৃত্যু, নৌযানের অভাবে উদ্ধার কাজ ব্যাহত জামালপুর-৫ (সদর) আসনের সাবেক এমপি আবুল কালাম আজাদ ঢাকায় গ্রেপ্তার মেলান্দহে কৃষক সুরুজ্জামানের জমি দখলের চেষ্টার অভিযোগ কলেজশিক্ষক সুরুজ্জামানের বিরুদ্ধে জামালপুরে বিশ্ব শিক্ষক দিবস উদযাপিত ভারতে মহানবী (সা.)-কে অবমাননার প্রতিবাদে ইসলামপুরে বিক্ষোভ মিছিল ভারতে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-কে কটূক্তির প্রতিবাদে মাদারগঞ্জে বিক্ষোভ

অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকারের মধ্য দিয়ে মহান বিজয় দিবস উদযাপিত

বাংলারচিঠিডটকম ডেস্ক: অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকারের মধ্য দিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস উদযাপিত হয়েছে।

নয় মাসব্যাপী রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিশ্ব মানচিত্রে বাংলাদেশ নামে একটি নতুন রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটে। সেই বিজয়ের ৪৮তম বার্ষিকী ১৬ ডিসেম্বর রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে এবং বিদেশে বাংলাদেশের বিভিন্ন দূতাবাসের উদযাপিত হয়েছে।

সকালে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে কৃতজ্ঞ জাতি শ্রেষ্ঠ সন্তানদের বিনম্র শ্রদ্ধা জানানোর জন্য সমবেত হয়। শোক আর রক্তের ঋণ শোধ করার গর্ব নিয়ে উজ্জীবিত জাতি দিবসটি উদযাপন করে অন্য রকম অনুভূতি নিয়ে।

শীতের কুয়াশা ও ঠান্ডা বাতাস উপেক্ষা করে সর্বস্তরের মানুষ ভোর থেকেই সাভারে স্মৃতিসৌধের বাইরে ও আশপাশের মহাসড়ক এলাকা এবং ধানমন্ডিস্থ বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে সমবেত হতে থাকে।

ভোরের সূর্য ওঠার আগেই ফুল, মাথায় বিজয় দিবস লেখা ব্যান্ড, জাতীয় পতাকা নিয়ে স্মৃতিসৌধে নেমেছিল জনতার এই ঢল। বিনম্র চিত্তে সমগ্র জাতি ত্রিশ লাখ শহীদকে আরো একবার জানিয়ে দিল ‘আমরা তোমাদের ভুলবো না।’

দিবসটি উপলক্ষে সরকারি-বেসরকারিভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে ভোরে ৩১ বার তোপধ্বনির মধ্য দিয়ে বিজয় দিবসের কর্মসূচি শুরু হয়।

ভোর ৬টা ৩৪ মিনিটে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে স্মৃতিস্তম্ভের বেদিতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্যদিয়ে শুরু হয় শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন। এ সময় শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। বিউগলে বেজে ওঠে করুণ সুর। পরে শেখ হাসিনা দলীয় প্রধান হিসেবে দলের নেতা-কর্মীদের নিয়ে স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমন্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, ড. আব্দুর রাজ্জাক ও আব্দুল মতিন খসরু, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জমান খান কামাল, তথ্যমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, এডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আব্দুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, আ ফ ম বাহা উদ্দিন নাছিম, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ও বিএম মোজাম্মেল হক, দপ্তর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক আফজাল হোসেন, সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক আসীম কুমার উকিল, উপদপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া।

রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী স্মৃতিসৌধস্থল ত্যাগ করার পর সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য খুলে দিলে সাধারণ মানুষের ঢল নামে।

এ সময়ে স্পিকার, প্রধান বিচারপতি, কূটনীতিক, রাজনীতিবিদ, শিল্পী-বুদ্ধিজীবী, মুক্তিযোদ্ধা, পেশাজীবী, শ্রমিক আর শিক্ষার্থীদের স্বতঃষ্ফুর্ত শ্রদ্ধায় ফুলে ফুলে ভরে উঠে স্মৃতিসৌধের বেদী।

শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা ও বিজয় উল্লাসে জাতীয় স্মৃতিসৌধ চত্বর মুখর ছিলো বিভিন্ন বয়সী মানুষের পদচারণায়। স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির ধ্বংসাত্মক, নৈরাজ্যকর কর্মকান্ড প্রতিহত করতে নানা স্লোগান, দেশাত্মবোধক গান, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ বেজে চলছিল বিরামহীনভাবে। জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানাতে আসা জনতার এই ঢল অব্যাহত থাকে বেলা ১ টা পর্যন্ত।

একে একে বেদীতে শ্রদ্ধা জানায় কেন্দ্রীয় ১৪ দল, শহীদ পরিবারের সন্তান ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা। বিএনপি, গণফোরাম, যুক্তফ্রন্ট, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবি জাতীয় স্মৃতিসৌধে শহীদদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানায়।

এ ছাড়া আওয়ামী যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগ, কৃষক লীগ, যুব মহিলা লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, তাঁতিলীগ, জাতীয় পার্টি (জেপি), ছাত্র ইউনিয়ন, যুব ইউনিয়ন, উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী, বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলা একাডেমি, শিল্পকলা একাডেমি, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম-মুক্তিযুদ্ধ-’৭১, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু পরিষদ, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, জাকের পার্টি, মুক্তিযোদ্ধা সংহতি পরিষদসহ বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও বিভিন্ন হলের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাও স্মৃতিসৌধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানায়।

পরে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ধানমন্ডিন্থ ৩২ নম্বরের বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে রক্ষিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপর দলীয় নেতাদের নিয়ে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে তিনি জাতির পিতার প্রতি শ্রদ্ধা জানান। দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা এ সময় বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

এ ছাড়াও গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য কর্ণেল (অব.) ফারুক খানের নেতৃত্বে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধীতে দলের পক্ষ্য থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।

মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।

এদিকে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে সকালে রাজারবাগ স্মৃতিসৌধে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বীর পুলিশ সদস্যদের প্রতি ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ। এতে অন্যান্যের মধ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদ্জ্জুামান খান, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. জাভেদ পাটোয়ারি উপস্থিত ছিলেন। এ সময় ডিএমপি’র একটি চৌকস দল গার্ড অব অনার প্রদান করে শহীদদের সম্মান জানায়।

দিবসটি উপলক্ষে সকল সরকারি-আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপনায় আলোকসজ্জার ব্যবস্থা হয়েছে। রাজধানী ঢাকা ও দেশের বিভিন্ন শহরের প্রধান সড়ক ও সড়ক দ্বীপগুলো জাতীয় পতাকা ও রঙ-বেরঙের পতাকায় সাজানো হয়।

শহীদদের আত্মার শান্তি, জাতির শান্তি, সমৃদ্ধি ও অগ্রতি কামনা করে মসজিদ, মন্দির, গির্জা, প্যাগোডাসহ সব ধর্মের উপাসনালয়ে বিশেষ মোনাজাত ও প্রার্থনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। হাসপাতাল, জেলখানা, বৃদ্ধাশ্রম, এতিমখানা, শিশু পরিবার ও ভবঘুরে প্রতিষ্ঠানগুলোতে উন্নতমানের খাবার সরবরাহ করা হয়।

মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদে পবিত্র কোরআনখানি, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় মহান মুক্তিযুদ্ধে শাহাদাত বরণকারী সকল শহিদ এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রূহের মাগফেরাত কামনা করে দোয়া করা হয়। এদিকে সাংস্কৃতিক শক্তিতে সারাদেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করার প্রত্যয় নিয়ে বিজয় শোভাযাত্রা করেছে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট। ‘বিজয়ের অঙ্গীকার, সাংস্কৃতিক অধিকার’ স্লোগান নিয়ে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের এই বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রায় অংশ নেন দেশের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের সদস্যরা।

সকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বর্ণিল এই শোভাযাত্রার উদ্বোধন করেন নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার। শোভাযাত্রাটি শহীদ মিনার থেকে শুরু হয়ে ফুলার রোড হয়ে টিএসসিতে গিয়ে শেষ হয়।সূত্র:বাসস।

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় আঞ্চলিক সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছেন পরিবেশ উপদেষ্টা

অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকারের মধ্য দিয়ে মহান বিজয় দিবস উদযাপিত

আপডেট সময় ০৯:৩৯:৩১ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০১৯

বাংলারচিঠিডটকম ডেস্ক: অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকারের মধ্য দিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস উদযাপিত হয়েছে।

নয় মাসব্যাপী রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিশ্ব মানচিত্রে বাংলাদেশ নামে একটি নতুন রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটে। সেই বিজয়ের ৪৮তম বার্ষিকী ১৬ ডিসেম্বর রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে এবং বিদেশে বাংলাদেশের বিভিন্ন দূতাবাসের উদযাপিত হয়েছে।

সকালে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে কৃতজ্ঞ জাতি শ্রেষ্ঠ সন্তানদের বিনম্র শ্রদ্ধা জানানোর জন্য সমবেত হয়। শোক আর রক্তের ঋণ শোধ করার গর্ব নিয়ে উজ্জীবিত জাতি দিবসটি উদযাপন করে অন্য রকম অনুভূতি নিয়ে।

শীতের কুয়াশা ও ঠান্ডা বাতাস উপেক্ষা করে সর্বস্তরের মানুষ ভোর থেকেই সাভারে স্মৃতিসৌধের বাইরে ও আশপাশের মহাসড়ক এলাকা এবং ধানমন্ডিস্থ বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে সমবেত হতে থাকে।

ভোরের সূর্য ওঠার আগেই ফুল, মাথায় বিজয় দিবস লেখা ব্যান্ড, জাতীয় পতাকা নিয়ে স্মৃতিসৌধে নেমেছিল জনতার এই ঢল। বিনম্র চিত্তে সমগ্র জাতি ত্রিশ লাখ শহীদকে আরো একবার জানিয়ে দিল ‘আমরা তোমাদের ভুলবো না।’

দিবসটি উপলক্ষে সরকারি-বেসরকারিভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে ভোরে ৩১ বার তোপধ্বনির মধ্য দিয়ে বিজয় দিবসের কর্মসূচি শুরু হয়।

ভোর ৬টা ৩৪ মিনিটে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে স্মৃতিস্তম্ভের বেদিতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্যদিয়ে শুরু হয় শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন। এ সময় শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। বিউগলে বেজে ওঠে করুণ সুর। পরে শেখ হাসিনা দলীয় প্রধান হিসেবে দলের নেতা-কর্মীদের নিয়ে স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমন্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, ড. আব্দুর রাজ্জাক ও আব্দুল মতিন খসরু, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জমান খান কামাল, তথ্যমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, এডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আব্দুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, আ ফ ম বাহা উদ্দিন নাছিম, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ও বিএম মোজাম্মেল হক, দপ্তর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক আফজাল হোসেন, সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক আসীম কুমার উকিল, উপদপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া।

রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী স্মৃতিসৌধস্থল ত্যাগ করার পর সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য খুলে দিলে সাধারণ মানুষের ঢল নামে।

এ সময়ে স্পিকার, প্রধান বিচারপতি, কূটনীতিক, রাজনীতিবিদ, শিল্পী-বুদ্ধিজীবী, মুক্তিযোদ্ধা, পেশাজীবী, শ্রমিক আর শিক্ষার্থীদের স্বতঃষ্ফুর্ত শ্রদ্ধায় ফুলে ফুলে ভরে উঠে স্মৃতিসৌধের বেদী।

শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা ও বিজয় উল্লাসে জাতীয় স্মৃতিসৌধ চত্বর মুখর ছিলো বিভিন্ন বয়সী মানুষের পদচারণায়। স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির ধ্বংসাত্মক, নৈরাজ্যকর কর্মকান্ড প্রতিহত করতে নানা স্লোগান, দেশাত্মবোধক গান, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ বেজে চলছিল বিরামহীনভাবে। জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানাতে আসা জনতার এই ঢল অব্যাহত থাকে বেলা ১ টা পর্যন্ত।

একে একে বেদীতে শ্রদ্ধা জানায় কেন্দ্রীয় ১৪ দল, শহীদ পরিবারের সন্তান ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা। বিএনপি, গণফোরাম, যুক্তফ্রন্ট, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবি জাতীয় স্মৃতিসৌধে শহীদদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানায়।

এ ছাড়া আওয়ামী যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগ, কৃষক লীগ, যুব মহিলা লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, তাঁতিলীগ, জাতীয় পার্টি (জেপি), ছাত্র ইউনিয়ন, যুব ইউনিয়ন, উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী, বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলা একাডেমি, শিল্পকলা একাডেমি, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম-মুক্তিযুদ্ধ-’৭১, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু পরিষদ, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, জাকের পার্টি, মুক্তিযোদ্ধা সংহতি পরিষদসহ বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও বিভিন্ন হলের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাও স্মৃতিসৌধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানায়।

পরে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ধানমন্ডিন্থ ৩২ নম্বরের বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে রক্ষিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপর দলীয় নেতাদের নিয়ে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে তিনি জাতির পিতার প্রতি শ্রদ্ধা জানান। দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা এ সময় বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

এ ছাড়াও গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য কর্ণেল (অব.) ফারুক খানের নেতৃত্বে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধীতে দলের পক্ষ্য থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।

মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।

এদিকে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে সকালে রাজারবাগ স্মৃতিসৌধে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বীর পুলিশ সদস্যদের প্রতি ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ। এতে অন্যান্যের মধ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদ্জ্জুামান খান, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. জাভেদ পাটোয়ারি উপস্থিত ছিলেন। এ সময় ডিএমপি’র একটি চৌকস দল গার্ড অব অনার প্রদান করে শহীদদের সম্মান জানায়।

দিবসটি উপলক্ষে সকল সরকারি-আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপনায় আলোকসজ্জার ব্যবস্থা হয়েছে। রাজধানী ঢাকা ও দেশের বিভিন্ন শহরের প্রধান সড়ক ও সড়ক দ্বীপগুলো জাতীয় পতাকা ও রঙ-বেরঙের পতাকায় সাজানো হয়।

শহীদদের আত্মার শান্তি, জাতির শান্তি, সমৃদ্ধি ও অগ্রতি কামনা করে মসজিদ, মন্দির, গির্জা, প্যাগোডাসহ সব ধর্মের উপাসনালয়ে বিশেষ মোনাজাত ও প্রার্থনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। হাসপাতাল, জেলখানা, বৃদ্ধাশ্রম, এতিমখানা, শিশু পরিবার ও ভবঘুরে প্রতিষ্ঠানগুলোতে উন্নতমানের খাবার সরবরাহ করা হয়।

মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদে পবিত্র কোরআনখানি, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় মহান মুক্তিযুদ্ধে শাহাদাত বরণকারী সকল শহিদ এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রূহের মাগফেরাত কামনা করে দোয়া করা হয়। এদিকে সাংস্কৃতিক শক্তিতে সারাদেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করার প্রত্যয় নিয়ে বিজয় শোভাযাত্রা করেছে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট। ‘বিজয়ের অঙ্গীকার, সাংস্কৃতিক অধিকার’ স্লোগান নিয়ে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের এই বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রায় অংশ নেন দেশের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের সদস্যরা।

সকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বর্ণিল এই শোভাযাত্রার উদ্বোধন করেন নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার। শোভাযাত্রাটি শহীদ মিনার থেকে শুরু হয়ে ফুলার রোড হয়ে টিএসসিতে গিয়ে শেষ হয়।সূত্র:বাসস।