জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
বাংলারচিঠিডটকম
বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় কমিটির সভাপতি ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম বলেছেন, ‘ইতিহাস ঘাটতে ঘাটতেই দেখা যাবে বাংলাদেশ মানেই বঙ্গবন্ধু। বঙ্গবন্ধু মানেই বাংলাদেশ। বাংলাদেশ মানেই আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ মানেই মুক্তিযুদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধ মানেই আজকের এই উন্নয়নশীল বাংলাদেশের পথচলা। তাই শুধু জামালপুরের ইতিহাসই নয়, সঠিকভাবে বাংলাদেশের ইতিহাস নিয়ে গবেষণা করতে হবে। নতুন প্রজন্মকে বাংলাদেশের সঠিক ইতিহাস জানাতে হবে।’
তিনি ৬ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় জামালপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত জামালপুরের ইতিহাস-ঐতিহ্য, সংস্কৃতি সংরক্ষণ ও উন্নয়ন বিষয়ক সেমিনার, গুণীজন সংবর্ধনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ হেরিটেজ স্টাডি এন্ড ডেভলপমেন্ট ফাউন্ডেশন এবং জামালপুরের ভাষা ও স্বাধীনতা সংগ্রামী মতি মিয়া ফাউন্ডেশন এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে জামালপুর একটি গৌরবের জেলা উল্লেখ করে মির্জা আজম বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সময় সারাদেশের মধ্যে ৪ ডিসেম্বর জামালপুরের ধানুয়া কামালপুরের পাকহানাদারদের হটিয়ে দিয়েছিল মুক্তিযোদ্ধারা। জামালপুরের মাদারগঞ্জ ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের অভয়ারণ্য। মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাস সেখানে পাকবাহিনী ঢুকতেই পারেনি। তাই মাদারগঞ্জে মুক্ত দিবস নাই। সবাইকে এই ইতিহাসও জানতে হবে।’
জামালপুরের ইতিহাস ঐহিত্য ও উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে মির্জা আজম বলেন, ‘জামালপুরের ব্র্যাণ্ডিং নকশী কাঁথা শিল্পকে কেন্দ্র করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জামালপুরবাসীর জন্য অনেক বড় একটা প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছেন। পাঁচ হাজার ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে জামালপুরের ঝিনাই নদীর পাড় ঘেঁষে ৩০০ একর জমিতে গড়ে তোলা হবে শেখ হাসিনা নকশী পল্লী। এখানে শুধু জামালপুর জেলার নকশী কাঁথাই নয়, সারা বাংলাদেশের সব ধরনের হস্তশিল্পজাত পণ্যের কারখানা, শো-রুম ও আমদানি-রপ্তানির ব্যবস্থা থাকবে এই প্রকল্পে। জামালপুরে গড়ে তোলা হচ্ছে শেখ হাসিনা সাংস্কৃতিক পল্লী। এই সাংস্কৃতিক পল্লীকে কেন্দ্র করে জামালপুরের ইতিহাস-ঐতিহ্য নিয়ে গবেষণা ও কর্ম পরিকল্পনা গ্রহণের ব্যাপক সুযোগ সৃষ্টি হবে।’
বাংলাদেশ হেরিটেজ স্টাডি অ্যান্ড ফাউন্ডেশনের সভাপতি ইশতিয়াক হোসেন দিদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন জামালপুর সদর আসনের সংসদ সদস্য প্রকৌশলী মো. মোজাফফর হোসেন, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মো. মোস্তাফিজুর রহমান, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ এনামুল হক, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুক আহাম্মেদ চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আইনজীবী মুহাম্মদ বাকী বিল্লাহ প্রমুখ। এর আগে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ভাষা ও স্বাধীনতা সংগ্রামী মতি মিয়া ফাউন্ডেশনের সভাপতি আলী জহির খালিকুজ্জামান এবং শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ হেরিটেজ স্টাডি এন্ড ডেভলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. খাইরুল ইসলাম।
সেমিনারের শুরুতেই মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনা করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. এমরান জাহান এবং ভাষা ও স্বাধীনতা সংগ্রামী মতি মিয়া ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুজ্জামান স্বাধীন। পরে মূল বিষয়ের ওপর আলোচনায় অংশ নেন বাংলাদেশ হেরিটেজ স্টাডি এন্ড ডেভলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের প্রধান উপদেষ্টা এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-প্রধান মো. জাকির হোসেন।
সেমিনারের আলোচনা পর্ব শেষে ভাষা ও স্বাধীনতা সংগ্রামে অবদানের জন্য কয়েস উদ্দিন, জামালপুরের ইতিহাস গবেষণায় অবদানের জন্য মু. আজিজুর রহমান, জামালপুরের লোকসংস্কৃতি গবেষণায় অবদানের জন্য আবু জাইদ লতা এবং সমাজসেবায় অবদানের জন্য মো. মোজাফফর হোসেন বড় মিয়াকে সম্মাননা সনদ ও ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। এ অনুষ্ঠানে কবি আবু জাইদ লতার ‘উৎসবে সার্জনের হাত’ নামের কবিতার বইয়ের মোড়ক উম্মোচন করা হয়।
এর আগে অনুষ্ঠানের শুরুতেই অধ্যাপক প্রদীপ কান্তি মজুমদার রচিত জামালপুরের ইতিহাস ও ঐতিহ্যনির্ভর জারিগান পরিবেশন করে উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী। এছাড়াও অনুষ্ঠানে জামালপুরের ইতিহাস ও ঐতিহ্য এবং বাংলাদেশ হেরিটেজ এন্ড ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম সম্পর্কে পৃথক দুটি ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়।