ঢাকা ০৮:১০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
প্রতিবন্ধীদের সুরক্ষায় জামালপুর ডিসির অঙ্গীকার খাতেমুন মঈন মহিলা ডিগ্রি কলেজ : সভাপতি এম. রশিদুজ্জামান মিল্লাত, বিদ্যোৎসাহী কাফি ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজে নেই শান্ত-মুশফিক-হৃদয়, এক বছর পর দলে ফিরলেন আফিফ ব্রিকসকে কড়া হুঁশিয়ারি ট্রাম্পের বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন একটি ‘অপপ্রচার’ : কূটনীতিকদের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা ভারতীয় মিডিয়ার অপপ্রচারের বিপরীতে সত্য তুলে ধরুন : সাংবাদিকদের প্রতি স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বকশীগঞ্জে উপজেলা যুবদলের আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ নকলায় শহিদ বুদ্ধিজীবী ও বিজয় দিবস উদযাপনের প্রস্তুতিমূলক সভা অনুষ্ঠিত মেলান্দহে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেল তাঁতীলীগনেতার রশিদপুরে আ.লীগনেতা সাত্তার ও তার স্ত্রী হাফেজার ‘জিনের বাদশা’ কার্যক্রমে নিঃস্ব বহু মানুষ

জামালপুরে যৌতুকলোভী স্বামী দ্বারা স্ত্রীর ওপর পাশবিক নির্যাতন

স্বামী নুরুল ইসলাম এবং নির্যাতনের শিকার স্ত্রী সানজিদা আক্তার

স্বামী নুরুল ইসলাম এবং নির্যাতনের শিকার স্ত্রী সানজিদা আক্তার

নিজস্ব প্রতিবেদক, জামালপুর
বাংলারচিঠিডটকম

নারীর ক্ষমতায়ন, নারী অধিকার প্রতিষ্ঠাসহ নারীর ওপর সকল প্রকার সহিংসতার বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কঠোর পদক্ষেপের পাশাপাশি নানামুখী কার্যক্রম বাস্তবায়নে কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ করছে। অপরদিকে তৃণমূল পর্যায়ে নারীর ওপর সহিংসতার মাত্রা আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। জামালপুরে যৌতুকলোভী এক পাষন্ড স্বামী স্ত্রীর ওপর ভয়াবহ নির্যাতন তার একটি জীবন্ত উদাহরণ।

জামালপুরে স্বামী নুরুল ইসলাম দ্বারা স্ত্রী সানজিদা আক্তারের ওপর যৌতুকের দাবিতে অমানসিক নির্যাতনের ঘটনায় বিবেকবান মানুষের মাঝে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। আর কোনো উপায় না দেখে ১৩ অক্টোবর সানজিদা স্বামীর বিরুদ্ধে জামালপুর জজ আদালতে যৌতুকের মামলা দায়ের করেন। ওইদিন আদালত নুরুল ইসলামের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। ২১ অক্টোবর পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে নুরুল ইসলাম মামলা থেকে জামিন নেন। জামিনের পর আসামি (নুরুল ইসলাম) মামলা উঠিয়ে নেয়ার জন্য সানজিদাকে হত্যা, গুম ও অপহরণের হুমকি প্রদান করতে থাকে। ২৩ অক্টোবর সানজিদা জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে জামালপুর সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন।

নুরুল ইসলাম ২৮ অক্টোবর শহরের বকুলতলায় সানজিদার ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান সুতার দোকানে যান। সেখানে গিয়ে সানজিদাকে অশ্লীল ভাষা প্রয়োগ এবং ভয়ভীতি প্রদর্শন করেন বলে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা ও সানজিদা এই প্রতিনিধিকে জানান। জিডি করার পরও সানজিদা বর্তমানে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে তিনি আরো জানান।

মামলার বিবরণ এবং নির্যাতনের শিকার স্ত্রী সানজিদার সাথে কথা বলে বিভিন্ন লোমহর্ষক ঘটনার বিবরণ জানা যায়। ২০১৭ সালের ২২ ডিসেম্বর টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার চামুরিয়া গ্রামের আহম্মদ আলীর ছেলে এবং জামালপুর নার্সিং ইনস্টিটিউটের কম্পিউটার অপারেটর নুরুল ইসলাম জামালপুর পৌরসভার হাটচন্দ্রা গ্রামের জামাল উদ্দিনের মেয়ে সানজিদাকে বিয়ে করেন।

বিয়ের আগে সানজিদার অসুস্থ মাকে জামালপুর হাসপাতালে ভর্তি করার সময় পরিচয় হয় নুরুল ইসলামের সাথে। মায়ের চিকিৎসার সময় নুরুল ইসলামের সহায়তা এবং পরবর্তীতে তাদের বাড়িতে যাতায়াত থেকে দুজনের মাঝে একটা সম্পর্ক তৈরি হয়। নুরুল ইসলাম অবিবাহিত বলে সানজিদাকে বিয়ের প্রস্তাব দিলে বাবা মায়ের সম্মতিতে তাদের বিয়ে হয়। বিয়ের কিছুদিন যেতে না যেতেই নুরুল ইসলাম যৌতুকের জন্য চাপ দিতে থাকেন।

মেয়ের সুখের কথা ভেবে সানজিদার বাবা নুরুল ইসলামকে তিন লাখ টাকা নগদ এবং আসবাবপত্র যৌতুক হিসেবে দেন। যৌতুক প্রদানের যন্ত্রণা কাটতে না কাটতেই সানজিদা জানতে পারেন নুরুল ইসলামের স্ত্রী ও দুই সন্তান আছে। এসব শোনে আকাশ ভেঙে পড়ে সানজিদার পরিবারের ওপর। তিনি নিয়তি মেনে নিয়ে স্বামীর সাথেই জীবন কাটিয়ে দেওয়ার কথা ভেবে সংসার শুরু করেন। কিছুদিনের মধ্যেই সানজিদার গর্ভে সন্তান আসে। এ কথা শোনার পর থেকে সানজিদার ওপর শুরু হয় অমানসিক নির্যাতন। গর্ভপাত করার জন্য চাপ দিতে থাকেন তার স্বামী। শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনে অসুস্থ হয়ে পড়েন সানজিদা। নুরুল ইসলাম চিকিৎসার নাম করে ২০১৮ সালের এপ্রিলের শেষে তাকে নিয়ে যান স্থানীয় মাতৃসদনে। শুক্রবার সরকারি ছুটির কারণে মাতৃসদনে স্বাভাবিক কাজকর্ম বন্ধ থাকলেও আগে থেকে নুরুল ইসলামের ঠিক করে রাখা মাতৃসদনের অসাধু দুইজন নারীকর্মীর সহায়তায় সানজিদার সন্তান নষ্ট করা হয়।

সানজিদা হাউমাউ করে কেঁদে বলেন, আমাকে আমার হাত পা বেঁধে দুই উরুতে ইনজেকশন দেওয়া হয়। সেদিন আমার চিৎকার কেউ শুনেনি। বলপ্রয়োগে গর্ভপাত ঘটানোর ফলে ক্ষতবিক্ষত হয়ে যায় তার জরায়ু। দীর্ঘ ছয় মাস রক্ষক্ষরণ হয়।

মুমূর্ষু অবস্থা থেকে সুস্থ হতে না হতেই যৌতুকের দাবিতে সানজিদার ওপর শুরু হয় চরম নির্যাতন। আরো পাঁচ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেন স্বামী নুরুল ইসলাম। দাবি পূরণ করতে না পারায় প্রতিদিন তার ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চলতে থাকে। উপায় না দেখে সানজিদা জামালপুর জজ আদালতে মামলা দায়ের করেন।

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

প্রতিবন্ধীদের সুরক্ষায় জামালপুর ডিসির অঙ্গীকার

জামালপুরে যৌতুকলোভী স্বামী দ্বারা স্ত্রীর ওপর পাশবিক নির্যাতন

আপডেট সময় ০৮:৪২:১৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৮ অক্টোবর ২০১৯
স্বামী নুরুল ইসলাম এবং নির্যাতনের শিকার স্ত্রী সানজিদা আক্তার

নিজস্ব প্রতিবেদক, জামালপুর
বাংলারচিঠিডটকম

নারীর ক্ষমতায়ন, নারী অধিকার প্রতিষ্ঠাসহ নারীর ওপর সকল প্রকার সহিংসতার বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কঠোর পদক্ষেপের পাশাপাশি নানামুখী কার্যক্রম বাস্তবায়নে কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ করছে। অপরদিকে তৃণমূল পর্যায়ে নারীর ওপর সহিংসতার মাত্রা আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। জামালপুরে যৌতুকলোভী এক পাষন্ড স্বামী স্ত্রীর ওপর ভয়াবহ নির্যাতন তার একটি জীবন্ত উদাহরণ।

জামালপুরে স্বামী নুরুল ইসলাম দ্বারা স্ত্রী সানজিদা আক্তারের ওপর যৌতুকের দাবিতে অমানসিক নির্যাতনের ঘটনায় বিবেকবান মানুষের মাঝে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। আর কোনো উপায় না দেখে ১৩ অক্টোবর সানজিদা স্বামীর বিরুদ্ধে জামালপুর জজ আদালতে যৌতুকের মামলা দায়ের করেন। ওইদিন আদালত নুরুল ইসলামের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। ২১ অক্টোবর পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে নুরুল ইসলাম মামলা থেকে জামিন নেন। জামিনের পর আসামি (নুরুল ইসলাম) মামলা উঠিয়ে নেয়ার জন্য সানজিদাকে হত্যা, গুম ও অপহরণের হুমকি প্রদান করতে থাকে। ২৩ অক্টোবর সানজিদা জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে জামালপুর সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন।

নুরুল ইসলাম ২৮ অক্টোবর শহরের বকুলতলায় সানজিদার ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান সুতার দোকানে যান। সেখানে গিয়ে সানজিদাকে অশ্লীল ভাষা প্রয়োগ এবং ভয়ভীতি প্রদর্শন করেন বলে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা ও সানজিদা এই প্রতিনিধিকে জানান। জিডি করার পরও সানজিদা বর্তমানে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে তিনি আরো জানান।

মামলার বিবরণ এবং নির্যাতনের শিকার স্ত্রী সানজিদার সাথে কথা বলে বিভিন্ন লোমহর্ষক ঘটনার বিবরণ জানা যায়। ২০১৭ সালের ২২ ডিসেম্বর টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার চামুরিয়া গ্রামের আহম্মদ আলীর ছেলে এবং জামালপুর নার্সিং ইনস্টিটিউটের কম্পিউটার অপারেটর নুরুল ইসলাম জামালপুর পৌরসভার হাটচন্দ্রা গ্রামের জামাল উদ্দিনের মেয়ে সানজিদাকে বিয়ে করেন।

বিয়ের আগে সানজিদার অসুস্থ মাকে জামালপুর হাসপাতালে ভর্তি করার সময় পরিচয় হয় নুরুল ইসলামের সাথে। মায়ের চিকিৎসার সময় নুরুল ইসলামের সহায়তা এবং পরবর্তীতে তাদের বাড়িতে যাতায়াত থেকে দুজনের মাঝে একটা সম্পর্ক তৈরি হয়। নুরুল ইসলাম অবিবাহিত বলে সানজিদাকে বিয়ের প্রস্তাব দিলে বাবা মায়ের সম্মতিতে তাদের বিয়ে হয়। বিয়ের কিছুদিন যেতে না যেতেই নুরুল ইসলাম যৌতুকের জন্য চাপ দিতে থাকেন।

মেয়ের সুখের কথা ভেবে সানজিদার বাবা নুরুল ইসলামকে তিন লাখ টাকা নগদ এবং আসবাবপত্র যৌতুক হিসেবে দেন। যৌতুক প্রদানের যন্ত্রণা কাটতে না কাটতেই সানজিদা জানতে পারেন নুরুল ইসলামের স্ত্রী ও দুই সন্তান আছে। এসব শোনে আকাশ ভেঙে পড়ে সানজিদার পরিবারের ওপর। তিনি নিয়তি মেনে নিয়ে স্বামীর সাথেই জীবন কাটিয়ে দেওয়ার কথা ভেবে সংসার শুরু করেন। কিছুদিনের মধ্যেই সানজিদার গর্ভে সন্তান আসে। এ কথা শোনার পর থেকে সানজিদার ওপর শুরু হয় অমানসিক নির্যাতন। গর্ভপাত করার জন্য চাপ দিতে থাকেন তার স্বামী। শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনে অসুস্থ হয়ে পড়েন সানজিদা। নুরুল ইসলাম চিকিৎসার নাম করে ২০১৮ সালের এপ্রিলের শেষে তাকে নিয়ে যান স্থানীয় মাতৃসদনে। শুক্রবার সরকারি ছুটির কারণে মাতৃসদনে স্বাভাবিক কাজকর্ম বন্ধ থাকলেও আগে থেকে নুরুল ইসলামের ঠিক করে রাখা মাতৃসদনের অসাধু দুইজন নারীকর্মীর সহায়তায় সানজিদার সন্তান নষ্ট করা হয়।

সানজিদা হাউমাউ করে কেঁদে বলেন, আমাকে আমার হাত পা বেঁধে দুই উরুতে ইনজেকশন দেওয়া হয়। সেদিন আমার চিৎকার কেউ শুনেনি। বলপ্রয়োগে গর্ভপাত ঘটানোর ফলে ক্ষতবিক্ষত হয়ে যায় তার জরায়ু। দীর্ঘ ছয় মাস রক্ষক্ষরণ হয়।

মুমূর্ষু অবস্থা থেকে সুস্থ হতে না হতেই যৌতুকের দাবিতে সানজিদার ওপর শুরু হয় চরম নির্যাতন। আরো পাঁচ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেন স্বামী নুরুল ইসলাম। দাবি পূরণ করতে না পারায় প্রতিদিন তার ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চলতে থাকে। উপায় না দেখে সানজিদা জামালপুর জজ আদালতে মামলা দায়ের করেন।