জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, জামালপুর
বাংলারচিঠিডটকম
নার্সদের শ্রান্তি বিনোদন ভাতার বিল পাশ করে দেওয়া নামে ৩৬ হাজার টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জামালপুর জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালকের কার্যালয়ের অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক কাজী গোলাম মোস্তফা খোকনকে হাতেনাতে আটক করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক।
১৬ অক্টোবর সকালে দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় টাঙ্গাইলের উপ-পরিচালক মো. মোস্তাফিজুর রহমান ও সহকারী পরিচালক মো. আতিকুল আলমের নেতৃত্বে একটি আভিযানিক দল এ অভিযান চালান। ওই অফিস সহকারীর কাছ থেকে ঘুষের নগদ ৩৬ হাজার টাকা এবং অজ্ঞাত হিসাব বহির্ভূত নগদ আরো ৯৭ হাজার ৩২ টাকা জব্দ করেছে দুদুক।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, অভিযোগ ছিল হাসপাতালের সহকারী পরিচালকের কার্যালয়ের অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক কাজী গোলাম মোস্তফা খোকন স্টাফ নার্সদের শ্রান্তি বিনোদন ভাতার বিল পাশ করে দিতে গড়িমসি ও হয়রানি করে আসছিলেন। এক পর্যায়ে এই বিল পাস করার জন্য অফিস সহকারী কাজী গোলাম মোস্তফা ২৯ জন স্টাফ নার্সের কাছে জনপ্রতি ২ হাজার টাকা করে ঘুষ দাবি করেন। পরবর্তীতে নার্সরা নিরুপায় হয়ে এক হাজার ৫০০ টাকা করে মোট ৪৩ হাজার ৫০০ টাকা ঘুষ দেওয়ার জন্য রাজি হন। তারা দাবিকৃত ঘুষের ৩৬ হাজার টাকা নগদ এবং শ্রান্তি বিনোদন ভাতার বিল পাওয়ার পর অবশিষ্ট আরো ৭ হাজার ৫০০ টাকা দিতে রাজি হন।
অভিযোগের ভিত্তিতে দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় টাঙ্গাইলের উপ-পরিচালক মো. মোস্তাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে সাত সদস্যের একটি আভিযানিক দল ১৬ অক্টোবর সকালে অফিস সহকারী কাজী গোলাম মোস্তফাকে ঘুষের টাকাসহ ধরতে ফাঁদ পাতেন। সকাল ১০টার দিকে হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. প্রফুল্ল কুমার সাহার উপস্থিতিতেই দুদকের দল নার্সদের দেওয়া সেই ঘুষের ৩৬ হাজার টাকাসহ অফিস সহকারী কাজী গোলাম মোস্তফাকে আটক করেন। এ সময় দুদকের প্রতিনিধিরা ওই অফিস সহকারীর প্যান্টের এক পকেট থেকে নার্সদের কাছ থেকে নেওয়া ঘুষের ৩৬ হাজার টাকা ও প্যান্টের অন্য পকেট থেকে নগদ আরো ২৭ হাজার ৩২ টাকা এবং তল্লাশি চালিয়ে অফিসের আলমিরা থেকে নগদ আরো ৭০ হাজার টাকা জব্দ করেন।
দুদকের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে শ্রান্তি বিনোদনের ভাতার বিল পাস করে দেওয়ার কথা বলে হাসপাতালের নার্সদের কাছ থেকে ৩৬ হাজার টাকা ঘুষ নেওয়ার কথা স্বীকার করলেও তার কাছ থেকে জব্দ করা অতিরিক্ত নগদ ৯৭ হাজার ৩২ টাকার বিষয়ে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি অফিস সহকারী কাজী গোলাম মোস্তফা। পরে অভিযানে অংশ নেওয়া দুদকের উপ-সহকারী পরিচালক রাজু মো. সারওয়ার হোসেন বাদী হয়ে আটক অফিস সহকারীর বিরুদ্ধে নগদ ঘুষ গ্রহণ করে দন্ডবিধি ১৬১ ধারা লঙ্ঘন এবং সরকারী কর্মচারী হিসেবে ক্ষমতার অপব্যবহার, অপরাধজনক বিশ্বাসভঙ্গ ও অসদাচরণের দায়ে ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ ২ নম্বর আইনের ৫(২) ধারায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পর ১৬ অক্টোবর দুপুরে জেলা জজ আদালতের মাধ্যমে তাকে জামালপুর জেলহাজতে পাঠিয়েছে দুদক।
দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় টাঙ্গাইলের উপ-পরিচালক মো. মোস্তাফিজুর রহমান বাংলারচিঠিডটকমকে বলেন, , ‘সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতেই অফিস সহকারী কাজী গোলাম মোস্তফা খোকনকে আটক করে দুদক আইনের মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। নার্সদের কাছ থেকে নগদ ৩৬ হাজার টাকা ঘুষ নেওয়ার কথা স্বীকার করলেও তার কাছ থেকে জব্দ করা অতিরিক্ত ৯৭ হাজার ৩২ টাকার বিষয়ে কোনো সদুত্তর দেননি ওই অফিস সহকারী। এই ঘুষের টাকার ভাগ অফিসের অন্য কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারী পেতেন কিনা, তার কাছে থাকা অতিরিক্ত টাকাগুলোর উৎস কি- এসব বিষয়ে নিয়ে আমরা তদন্ত করে দেখছি। কিছু পাওয়া গেলে পরবর্তীতে জানানো হবে।’