ঢাকা ০৭:২৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৪ জুন ২০২৫, ৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
প্রস্তুতি সম্পন্ন হলে রমজান শুরুর আগের সপ্তাহে নির্বাচন হতে পারে : প্রধান উপদেষ্টা মাদারগঞ্জে ক্লাব ফুটবল টুর্নামেন্টে উত্তর চরবওলা স্পোর্টিং ক্লাব এ দল চ্যাম্পিয়ন দেওয়ানগঞ্জে ইসলামী সংস্কৃতি জোটের ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠিত বকশীগঞ্জে আওয়ামী লীগের বাধায় পণ্ড হওয়া ফুটবল খেলা সাত বছর অনুষ্ঠিত সরিষাবাড়ীর শাহানাজ আক্তার এখন তুহিন মিয়া ভারতের আহমেদাবাদে ২৪২ আরোহী নিয়ে লন্ডনগামী বিমান বিধ্বস্ত কেন্দুয়া স্পোর্টস একাডেমি চ্যাম্পিয়ন আলাইনদী থেকে আফসানা আক্তারের মরদেহ উদ্ধার দুর্যোগ মোকাবিলা, পরিবেশ সুরক্ষায় মাদারগঞ্জে দুই শতাধিক বৃক্ষরোপণ ৭৫ দিন নিখোঁজ থাকা নুহাশকে উদ্ধার করল সেনাবাহিনী

টুং টাং শব্দে মুখর ইসলামপুরের কামার পল্লী

কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে কামাররা ব্যস্ত বিভিন্ন সরঞ্জামাদী বানাতে। ছবি : বাংলারচিঠিডটকম

কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে কামাররা ব্যস্ত বিভিন্ন সরঞ্জামাদী বানাতে। ছবি : বাংলারচিঠিডটকম

লিয়াকত হোসাইন লায়ন, ইসলামপুর (জামালপুর) প্রতিনিধি
বাংলারচিঠিডটকম

১২ আগস্ট পবিত্র ঈদুল আজহা অর্থাৎ কোরবানির ঈদ। প্রতি বছর ঘুরে আসে কোরবানি ঈদ। ঈদকে ঘিরে চারিদিকে আনন্দ উৎসব ও চলছে কোরবানির পশু কেনার ধুম। মানুষ ছোটছেন বিভিন্ন সরঞ্জামাদী বানাতে কামারশালায়।

কোরবানির পশু কাটাকুটিতে চাই ধারালো দা, বটি, চাপাতি ও ছুরি। তাই কয়লার চুলায় দগদগে আগুনে গরম লোহার পিটাপিটিতে টুং টাং শব্দে মুখর হয়ে উঠেছে জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলার কামারশালাগুলো। আর সামনে আগুনের শিখায় তাপ দেওয়া, হাতুড়ি পেটানোর টুং টাং শব্দে তৈরি হচ্ছে দা-বটি, চাপাতি ও ছুরি। পশু কোরবানিতে এ সব অতিব প্রয়োজনীয়। তাই যেন দম ফেলারও সময় নেই কামারদের। নাওয়া-খাওয়া ভুলে কাজ করছেন কামাররা। কাক ডাকা ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত কাজ করে যাচ্ছেন তারা। সারা বছর তেমন কাজ না থাকলেও কুরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে কয়েকগুণ ব্যস্ততা বেড়ে যায় কামারদের।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, জামালপুরের ইসলামপুর পৌর শহরের ফকিরপাড়ার কামারপাড়ায়, চাড়িয়া পাড়া, রেলগেইট, মধ্যে দরিয়াবাদ, দিঘলকান্দি, চিনাডুলী ইউনিয়নের গুঠাইল বাজার, গংগাপাড়া, মহলগিরি বাজার, নাপিতের চর বাজারে দা, বটি, চাপাতি, ছুরি বানাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। কয়লার দগদগে আগুনে পুড়িয়ে পিটিয়ে তৈরি করছেন, দা, বটি, ছুরি, কুরাল, চাকুসহ ধারালো হাতিয়ার। অনেকেই আবার পুরাতন দা, ছুরিগুলো মেরামতের জন্য কামারের দোকানে দাড়িয়ে আছেন। ঈদের আরো কয়েকদিন বাকি থাকলেও জমে উঠেয়ে কামারীর দোকান।

কয়েকজন কামারের সাথে আলাপ করে জানা যায়, পশুর চামড়া ছাড়ানো ছুরি ২০০ থেকে ৩০০, দা ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা, বটি ৩০০ থেকে ৫০০, পশু জবাইয়ের ছুরি ৪০০ থেকে ১ হাজার টাকা, চাপাতি ৬০০ থেকে ৮০০ টাকায় বিক্রি করছে।

ঈদের সময় যতই ঘনিয়ে আসছে, টুং টাং শব্দ ততই বেড়ে চলেছে। দিনরাত পরিশ্রম করে তৈরি করছে হরেক রকমের দা, ছুরিসহ বিভিন্ন সরঞ্জামাদি। ক্রেতা সাধারণদের ভীড়ে মুখরিত হয়ে উঠেছে কামারদের দোকানগুলো। কামারশিল্পীদের দম ফেলার ফুসরত নেই।

পৌর শহরের ফকিরপাড়া কামারপাড়া ও চাড়িয়াপাড়া কামারপাড়া এলাকায় কামার শিল্পীরা সকলেই হিন্দু সম্প্রাদায়ের। তাদের সকলেরই পত্তিক সুত্রে পাওয়া এ পেশা।

ফকির পাড়া কামার শিল্পী সুদিন ও প্রদীপ কর্মকার বলেন, আগের মত আর তেমন কাজ নেই। এখন আমাদের এ পেশায় নুন আনতে পান্তা ফুরায়। সারা বছর কাজ না থাকায় মুসলমানদের ধর্মীয় এ উৎসবে অপেক্ষায় থাকি। তাতে কিছুটা হলেও পুষিয়ে উঠা যায়। বাপদাদার পেশা এ পেশাই জীবন বাচাঁই, ছাড়তেও পারিনা। তার পরেও কয়লা দাম একটু বেশি হওয়ায় দামে আমাদের হিমশিম খেতে হয়।

রঞ্জিত কর্মকার বলেন, কোরবানি ঈদ যত ঘনিয়ে আসছে আমাদের ব্যবসা তত বাড়ছে। তবে আমাদের জ্বালানি কয়লা, লোহা দাম বাড়ছে। কিন্তু জিনিষের দাম বাড়েনি। সারা বছর কাজ না থাকায় অলস সময় কাটাতে হয়। ফলে ওই সময় কোন উপার্জন না থাকায় ছেলে মেয়ে নিয়ে খবই কষ্টে দিন কাটাতে হয়।

সাধু কর্মকার বলেন, বাপ দাদার পৈত্তিক পেশা করে জীবন বাচানো খুবই কঠিন হয়ে পড়েছে আমাদের। আমাদের জন্য ডিজিটাল কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি সরকার। তাই পেটের দায়ে পৈত্তিক পেশা ছেড়ে বাধ্য হয়ে আমাদের অনেকেই এখন অন্য পেশায় ঝুঁকছেন।

চাড়িয়াপাড়া কামারবাড়ির বিপ্লব কর্মকার বলেন, আগের তুলনায় এখন কয়লা পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। কয়লা পাওয়া গেলেও দাম অনেক চড়া। আমরা আমাদের ব্যবসায় কোনো ঋণ পাইনা। কয়লা পরিবর্তে গ্যাস দিয়ে কাজ করলে ভাল হইতো। এই সামর্থ আমাদের নাই। তারপরেও ঈদের সামনে কষ্ট করে কাজ করতেছি বেশি কামানোর আশায়।

দোকানে আসা ক্রেতা মকবুল মেম্বার বললেন, গরু কোরবানির জন্য একটা ছুরি অর্ডার দিয়েছি। ঈদ ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে কামাররা তাদের মজুরি, ছুরি, দা, চাপাতির দামও বাড়িয়ে দিয়েছে। দাম এক হাজার ২০০ টাকা, তবুও অপেক্ষা করতে হচ্ছে। কোরবানির পশু কেনার যে সময় লাগে এখন তার চেয়ে বেশি সময় সরঞ্জামাদী বানাতে ব্যয় হয়। এতক্ষণ অপেক্ষায় থেকে টুং টাং শব্দে আমরা অস্থির আর উপার্জনে কামাররা ব্যস্ত।

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

প্রস্তুতি সম্পন্ন হলে রমজান শুরুর আগের সপ্তাহে নির্বাচন হতে পারে : প্রধান উপদেষ্টা

টুং টাং শব্দে মুখর ইসলামপুরের কামার পল্লী

আপডেট সময় ০৭:১৩:৫২ অপরাহ্ন, রবিবার, ১১ অগাস্ট ২০১৯
কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে কামাররা ব্যস্ত বিভিন্ন সরঞ্জামাদী বানাতে। ছবি : বাংলারচিঠিডটকম

লিয়াকত হোসাইন লায়ন, ইসলামপুর (জামালপুর) প্রতিনিধি
বাংলারচিঠিডটকম

১২ আগস্ট পবিত্র ঈদুল আজহা অর্থাৎ কোরবানির ঈদ। প্রতি বছর ঘুরে আসে কোরবানি ঈদ। ঈদকে ঘিরে চারিদিকে আনন্দ উৎসব ও চলছে কোরবানির পশু কেনার ধুম। মানুষ ছোটছেন বিভিন্ন সরঞ্জামাদী বানাতে কামারশালায়।

কোরবানির পশু কাটাকুটিতে চাই ধারালো দা, বটি, চাপাতি ও ছুরি। তাই কয়লার চুলায় দগদগে আগুনে গরম লোহার পিটাপিটিতে টুং টাং শব্দে মুখর হয়ে উঠেছে জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলার কামারশালাগুলো। আর সামনে আগুনের শিখায় তাপ দেওয়া, হাতুড়ি পেটানোর টুং টাং শব্দে তৈরি হচ্ছে দা-বটি, চাপাতি ও ছুরি। পশু কোরবানিতে এ সব অতিব প্রয়োজনীয়। তাই যেন দম ফেলারও সময় নেই কামারদের। নাওয়া-খাওয়া ভুলে কাজ করছেন কামাররা। কাক ডাকা ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত কাজ করে যাচ্ছেন তারা। সারা বছর তেমন কাজ না থাকলেও কুরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে কয়েকগুণ ব্যস্ততা বেড়ে যায় কামারদের।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, জামালপুরের ইসলামপুর পৌর শহরের ফকিরপাড়ার কামারপাড়ায়, চাড়িয়া পাড়া, রেলগেইট, মধ্যে দরিয়াবাদ, দিঘলকান্দি, চিনাডুলী ইউনিয়নের গুঠাইল বাজার, গংগাপাড়া, মহলগিরি বাজার, নাপিতের চর বাজারে দা, বটি, চাপাতি, ছুরি বানাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। কয়লার দগদগে আগুনে পুড়িয়ে পিটিয়ে তৈরি করছেন, দা, বটি, ছুরি, কুরাল, চাকুসহ ধারালো হাতিয়ার। অনেকেই আবার পুরাতন দা, ছুরিগুলো মেরামতের জন্য কামারের দোকানে দাড়িয়ে আছেন। ঈদের আরো কয়েকদিন বাকি থাকলেও জমে উঠেয়ে কামারীর দোকান।

কয়েকজন কামারের সাথে আলাপ করে জানা যায়, পশুর চামড়া ছাড়ানো ছুরি ২০০ থেকে ৩০০, দা ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা, বটি ৩০০ থেকে ৫০০, পশু জবাইয়ের ছুরি ৪০০ থেকে ১ হাজার টাকা, চাপাতি ৬০০ থেকে ৮০০ টাকায় বিক্রি করছে।

ঈদের সময় যতই ঘনিয়ে আসছে, টুং টাং শব্দ ততই বেড়ে চলেছে। দিনরাত পরিশ্রম করে তৈরি করছে হরেক রকমের দা, ছুরিসহ বিভিন্ন সরঞ্জামাদি। ক্রেতা সাধারণদের ভীড়ে মুখরিত হয়ে উঠেছে কামারদের দোকানগুলো। কামারশিল্পীদের দম ফেলার ফুসরত নেই।

পৌর শহরের ফকিরপাড়া কামারপাড়া ও চাড়িয়াপাড়া কামারপাড়া এলাকায় কামার শিল্পীরা সকলেই হিন্দু সম্প্রাদায়ের। তাদের সকলেরই পত্তিক সুত্রে পাওয়া এ পেশা।

ফকির পাড়া কামার শিল্পী সুদিন ও প্রদীপ কর্মকার বলেন, আগের মত আর তেমন কাজ নেই। এখন আমাদের এ পেশায় নুন আনতে পান্তা ফুরায়। সারা বছর কাজ না থাকায় মুসলমানদের ধর্মীয় এ উৎসবে অপেক্ষায় থাকি। তাতে কিছুটা হলেও পুষিয়ে উঠা যায়। বাপদাদার পেশা এ পেশাই জীবন বাচাঁই, ছাড়তেও পারিনা। তার পরেও কয়লা দাম একটু বেশি হওয়ায় দামে আমাদের হিমশিম খেতে হয়।

রঞ্জিত কর্মকার বলেন, কোরবানি ঈদ যত ঘনিয়ে আসছে আমাদের ব্যবসা তত বাড়ছে। তবে আমাদের জ্বালানি কয়লা, লোহা দাম বাড়ছে। কিন্তু জিনিষের দাম বাড়েনি। সারা বছর কাজ না থাকায় অলস সময় কাটাতে হয়। ফলে ওই সময় কোন উপার্জন না থাকায় ছেলে মেয়ে নিয়ে খবই কষ্টে দিন কাটাতে হয়।

সাধু কর্মকার বলেন, বাপ দাদার পৈত্তিক পেশা করে জীবন বাচানো খুবই কঠিন হয়ে পড়েছে আমাদের। আমাদের জন্য ডিজিটাল কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি সরকার। তাই পেটের দায়ে পৈত্তিক পেশা ছেড়ে বাধ্য হয়ে আমাদের অনেকেই এখন অন্য পেশায় ঝুঁকছেন।

চাড়িয়াপাড়া কামারবাড়ির বিপ্লব কর্মকার বলেন, আগের তুলনায় এখন কয়লা পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। কয়লা পাওয়া গেলেও দাম অনেক চড়া। আমরা আমাদের ব্যবসায় কোনো ঋণ পাইনা। কয়লা পরিবর্তে গ্যাস দিয়ে কাজ করলে ভাল হইতো। এই সামর্থ আমাদের নাই। তারপরেও ঈদের সামনে কষ্ট করে কাজ করতেছি বেশি কামানোর আশায়।

দোকানে আসা ক্রেতা মকবুল মেম্বার বললেন, গরু কোরবানির জন্য একটা ছুরি অর্ডার দিয়েছি। ঈদ ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে কামাররা তাদের মজুরি, ছুরি, দা, চাপাতির দামও বাড়িয়ে দিয়েছে। দাম এক হাজার ২০০ টাকা, তবুও অপেক্ষা করতে হচ্ছে। কোরবানির পশু কেনার যে সময় লাগে এখন তার চেয়ে বেশি সময় সরঞ্জামাদী বানাতে ব্যয় হয়। এতক্ষণ অপেক্ষায় থেকে টুং টাং শব্দে আমরা অস্থির আর উপার্জনে কামাররা ব্যস্ত।