
শফিউল আলম লাভলু, নকলা (শেরপুর) প্রতিনিধি
বাংলারচিঠিডটকম
শেরপুরের নকলা উপজেলায় প্রতি বছরই শত শত কৃষি পরিবারের হাজার হাজার কৃষক বোরো আবাদ করে থাকেন। এবারের চলতি মৌসুমেও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। রাবার ড্যামের সুফলতায় নদীর পানি ব্যবহারে এবং পাওয়ার পাম্পের (সেচ পাম্প) মাধ্যমে পানি সেচ দেওয়ার সুবিধা নিয়ে উপজেলায় লক্ষ্যমাত্রার ১৩ হাজার ২৪৭ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করা প্রায় শেষ পর্যায়ে। এর মধ্যে বেশ কিছু জমিতে ন্যাশনাল এগ্রিকালচার টেকনোলজি প্রোগ্রাম ফেজ (এনএটিপি-২) প্রকল্পের আওতায় ‘পর্যায়ক্রমে ভিজানো এবং শুকানো সেচ পদ্ধতি তথা সেচ সাশ্রয়ী (এডব্লিউডি)’ নামে নতুন এক প্রযুক্তি পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহারে সুফল পাওয়ায় সব কৃষকের নজর ও মন কেড়েছে। যারা দেখেছেন বা জেনেছেন এমন সব কৃষক ওই প্রযুক্তি ব্যবহারে আগ্রহী হয়েছেন।
পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের যৌথ উদ্যোগে এবং বগুড়ার পল্লী উন্নয়ন একাডেমির সেচ ও পানি ব্যবস্থাপনা কেন্দ্র তা বাস্তবায়নে কাজ করছে। পানি সাশ্রয়ী আধুনিক প্রযুক্তির সম্প্রসারণ ও বিস্তার এবং ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি শীর্ষক প্রায়োগিক গবেষণা প্রকল্প পানি সাশ্রয়ী প্রযুক্তি প্রদর্শনীর মাধ্যমে ওই এডব্লিউডি প্রযুক্তিটি সব কৃষকের মাঝে ছড়িয়ে দিতে চেষ্টা চালানো হচ্ছে।
জমির ওপর থেকে ২০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত চারদিকেই ছিদ্রযুক্ত প্রযুক্তির রাবারের পাইপ পুঁতে রেখে এবং পাইপের মাধ্যমে জমিতে পানির উপস্থিতি দেখে সেচের ব্যবস্থা করেন কৃষকরা। আজ পর্যন্ত কৃষকের মধ্যে এই প্রযুক্তির ব্যবহার ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব হয়নি, তাই অনেক কৃষক সেচ সাশ্রয়ী এডব্লিউডি প্রযুক্তি সম্পর্কে অবগত নন। তবে কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় এবং কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে যেসব কৃষক তাদের বোরো আবাদে এডব্লিউডি প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে সেচ দিচ্ছেন, তাদের প্রায় শতকরা ৩০ ভাগ সেচ সাশ্রয় হচ্ছে বলে জানান স্থানীয় কৃষক ও কৃষি কর্মকর্তাগণ। ফলে বোরো আবাদে সেচ কম লাগায় কৃষকরা আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন।

ভূরদী কৃষিপণ্য উৎপাদক কল্যাণ সংস্থার সভাপতি ছাইদুল হকসহ বিভিন্ন এলাকার অনেক কৃষক এডব্লিউডি প্রযুক্তি ব্যবহারে সেচ দেওয়ার বিষয়ে বা ওই প্রযুক্তির খোঁজ দেওয়ায় কৃষি বিভাগের প্রতি তারা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আশরাফুল আলম বলেন, এনএটিপি-২ প্রকল্পের মাধ্যমে এখানের বোরো ধানে পানির সমস্যা সমাধানে এডব্লিউডি প্রযুক্তিতে অভাবনীয় সফলতা এসেছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ পরেশ চন্দ্র দাস বলেন, বোরো ধান চাষসহ যেকোনো সেচযোগ্য জমিতে এই পদ্ধতিতে সেচ দেওয়া দরকার, তাতে সেচ ব্যয় কমবে এবং পানির সদ্বব্যবহার হবে। এই প্রযুক্তি কৃষি উন্নয়নে আরও গতি নিয়ে আসবে। এতে কৃষক অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবেন। তিনি আরো বলেন, দেশের সব কৃষকদের সেচের ক্ষেত্রে এডব্লিউডি পদ্ধতি গ্রহণ করা উচিত। এতে করে পানির ব্যবহার ও সেচ ব্যয় কমবে, কিন্তু কৃষি উন্নয়ন ঠিকই অব্যহত থাকবে।