জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, জামালপুর
বাংলারচিঠি ডটকম
জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলায় ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খেয়ে সুহৃদ রায় নামের পনের মাস বয়সের এক ছেলেশিশুর মারা যাওয়ার খবরে অভিভাবকদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দেয় । ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়া শিশুদের নিয়ে অভিভাবকরা ছুটে আসেন সরিষাবাড়ী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক এবং নিয়ন্ত্রণে আনতে হিমশিম খেতে হয় স্থানীয় প্রশাসনকে। শিশুটি সরিষাবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উপসহকারী কমিউনিটি মেডিক্যাল অফিসার (সাকমো) সুরজিৎ রায়ের ছেলে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শফিকুর রহমান বাংলারচিঠি ডটকমকে জানান, শিশুটিকে ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ানোর পর বমি হওয়ার সময় শ্বাসনালীতে খাদ্যকণা ঢুকে যায়। এ অবস্থায় শিশুটিকে ৩টা ৩০ মিনিটে সরিষাবাড়ী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করানো হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৪টা ৩০ মিনিটে শিশুটি মারা যায়। তিনি বলেন, শত শত শিশুর হাসপাতালে ভর্তির খবরটি গুজব। হাসপাতালে কোনো শিশু ভর্তি নেই।
ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ার পর আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কায় প্রায় পাঁচ শতাধিক শিশুদের নিয়ে তাদের অভিভাবকরা সরিষাবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পরার্মশের জন্য যায় বলে স্বাস্থ্য বিভাগ ও স্থানীয় একাধিক সূত্র নিশ্চিত করে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশব্যাপী ক্যাম্পেইনের অংশ হিসেবে ৯ ফেব্রুয়ারি বেলা ১২টার দিকে সরিষাবাড়ী পৌরসভার গণময়দান এলাকায় অস্থায়ী ক্যাম্পে অন্যান্য শিশুদের সাথে ডাক্তার সুরজিত রায়ের পনের মাস বয়সী শিশু সুহৃদ রায়কে ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ানো হয়। বাসায় যাওয়ার পর থেকেই শিশুটি থেমে থেমে বমি করতে থাকে। বেলা সাড়ে ৩টার দিকে শিশুটিকে দ্রুত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। সেখানে ভর্তি করার কিছুক্ষণের মধ্যে অর্থাৎ বেলা ৪টা ৩০ মিনিটে শিশু সুহৃদ রায় মারা যায়। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডাক্তার ও কর্মচারীরা প্রথমে বিষয়টি গোপন রাখার চেষ্টা করেন। এক পর্যায়ে ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ার পর শিশু মারা যাওয়ার বিষয়টি ছড়িয়ে পড়লে তোলপাড় শুরু হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, এ প্রতিবেদন লেখার সময় ৯ ফেব্রুয়ারি রাত ৯টা পর্যন্ত আক্রান্ত শিশুদের ভিড় বাড়ছিলো। তবে জেলার স্বাস্থ্যবিভাগ ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ার পর এক শিশু মারা যাওয়ার সত্যতা স্বীকার করলেও আতঙ্কগ্রস্ত অন্যান্য শিশুদের অভিভাবকদের কাউন্সেলিং চলছে বলে জানিয়েছে। সর্বশেষ রাত সাড়ে ১০টায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বাংলারচিঠি ডটকমকে জানান, কোনো শিশু এবং তাদের অভিভাবকরা এখন আর হাসপাতালে নেই। কর্তৃপক্ষ বলেন, সরাসরি এবং মাইকিংয়ের মাধ্যমে মানুষকে এই গুজবে কান না দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানানো হলে সবাই হাসপাতাল ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন।
জামালপুরের সিভিল সার্জন ডাক্তার গৌতম রায় ৯ ফেব্রুয়ারি রাত পৌনে ৯টার দিকে বাংলারচিঠি ডটকমকে বলেন, শিশু সুহৃদ রায় ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ার পরই তার বমি শুরু হয়। শিশুটি আমাদেরই এক স্টাফের সন্তান। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে তাকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। কিন্তু শিশুটির অবস্থা খুবই আশঙ্কাজনক হওয়ায় এক পর্যায়ে সে মারা যায়। আর কোনো শিশু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি নেই। তবে অনেক শিশুই ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ার পর অসুস্থ হওয়ার আশঙ্কায় অভিভাবকরা হাসপাতালে আসছেন।