বাংলারচিঠি ডটকম ডেস্ক॥
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টের প্রথম দিনই জোড়া সেঞ্চুরি করেছেন বাংলাদেশের দুই নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান মোমিনুল হক ও মুশফিকুর রহিম। ১১ নভেম্বর মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের ম্যাচে মোমিনুল ১৬১ ও মুশফিক অপরাজিত ১১১ রানের ইনিংস খেলেন। ফলে প্রথম দিন শেষে ৯০ ওভারে ৫ উইকেটে ৩০৩ রান করেছে বাংলাদেশ।
তিনটি পরিবর্তন নিয়ে ঢাকা টেস্টের একাদশে সাজায় বাংলাদেশ। সিলেটের অভিষেক টেস্টে পরাজিত হওয়া একাদশ থেকে বাদ পড়েন নাজমুল হোসেন শান্ত, আবু জায়েদ ও নাজমুল ইসলাম। তাদের পরিবর্তে একাদশে সুযোগ পান মোহাম্মদ মিথুন, খালেদ আহমেদ ও মুস্তাফিজুর রহমান। এ ম্যাচ দিয়ে টেস্ট অভিষেক ঘটে ব্যাটসম্যান মিথুন ও পেসার খালেদের।
প্রথম টেস্টে জিততে না পারলেও সিরিজ হার এড়ানোর ম্যাচে খেলতে নেমে টস প্রথমে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশের অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। ম্যাচের আগের দিনই সংবাদ সম্মেলনে টস জয়ের ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন রিয়াদ। ইচ্ছা পূরণ হওয়ায় প্রথমে ব্যাটিংকে বেছে নেন রিয়াদ।
কিন্তু সকালের উইকেট থেকে ফায়দা লুটেছেন জিম্বাবুয়ের পেসাররা। ১৬ রানের ব্যবধানে বাংলাদেশের দুই ওপেনারকে প্যাভিলিয়নের টিকিট ধরিয়ে দেন জিম্বাবুয়ের পেস আক্রমণের সবচেয়ে ভরসার প্রতীক কাইল জার্ভিস। প্রথমে ইমরুলকে শুন্য হাতে ও পরে লিটনকে ৯ রানে থামেন জার্ভিস।
শুরুর ধাক্কটা ড্রেসিংরুমে বসেই দেখেছিলেন অভিষেক ম্যাচ খেলতে নামা মিথুন। কিন্তু দলের হাল ধরতে পারেননি তিনি। রানের খাতা খোলার আগেই জিম্বাবুয়ের ডান-হাতি পেসার ডোনাল্ড ত্রিরিপানোর বলে আউট হন মিথুন।
দলীয় ২৬ রানে মিথুনের বিদায়ে ভয়ংকর কঠিন পরিস্থিতির মুখে পড়েন তিন নম্বরে নামা মোমিনুল হক ও উইকেটরক্ষক মুশফিকুর রহিম। সিরিজ হার এড়ানোর ম্যাচের শুরু যদি এমন হয়, তবে পরিস্থিতি কি হতে পারে!! ভয়ংকর না হয়ে উপায় কই!
তবে এই ভয়ংকর পরিস্থিতিকে ঠান্ডা মাথায় গ্রহন করেছেন মোমিনুল ও মুশফিক। উইকেটের সাথে দ্রুত মানিয়ে নিয়ে জিম্বাবুয়ের বোলারদের লাইন-লেন্থ বুঝে খেলতে থাকেন তারা। ফলে ধীরলয়ে এগিয়ে মধ্যাহ্ন-বিরতির আগে আর কোন উইকেটের পতন হতে দেননি মোমিনুল ও মুশফিক। ২৬ ওভারে ৩ উইকেটে ৫৬ রান নিয়ে মধ্যাহ্ন-বিরতিতে যায় বাংলাদেশ।
দ্বিতীয় সেশনেও কোন উইকেটের পতন হতে দেননি মোমিনুল ও মুশফিক। জিম্বাবুয়ের বোলারদের উপর পুরো সেশনেই চাপ সৃষ্টি করে গেছেন তারা। ফলে চা-বিরতির ঠিক আগ মূর্হুতে নিজের ১৫০তম বলে বাউন্ডারির সহায়তায় টেস্ট ক্যারিয়ারের সপ্তম ও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দ্বিতীয় সেঞ্চুরির দেখা পান মোমিনুল। চলতি বছর তৃতীয় সেঞ্চুরির দেখা পান এ বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যান। বছরের শুরুতে চট্টগ্রামে শ্রীলংকার বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টের দুই ইনিংসে ১৭৬ ও ১০৫ রান করেছিলেন মোমিনুল। তাই মোমিনুলের সেঞ্চুরির সাথে মুশফিকের হাফ-সেঞ্চুরিতে চা-বিরতির পর্যন্ত ৫৮ ওভারে ৩ উইকেটে ২০৭ করে টাইগাররা। মোমিনুল ১১৫ ও মুশফিক ৭১ রানে অপরাজিত থাকেন। এই সেশনে ৩২ ওভারে ১৫১ রান যোগ করেন মোমিনুল ও মুশফিক।
দিনের তৃতীয় ও শেষ সেশনে সেঞ্চুরির স্বাদ নেন মুশফিকও। নিজের ১৮৭তম বলে মিড-উইকেটে বল ঠেলে দিয়ে এক রান নিয়ে তিন অংকে পা দেন মুশি। প্রায় পৌনে দু’বছর পর বড় ফরম্যাটে সেঞ্চুরি পেলেন বাংলাদেশের সাবেক এ অধিনায়ক । ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে হায়দারাবাদে ভারতের বিপক্ষে ১২৭ রানের দর্শনীয় ইনিংস খেলেছিলেন মুশি।
সেঞ্চুরির পরও বাংলাদেশের রান চাকা অবলীলায় ঘুড়িয়েছেন মোমিনুল ও মুশফিক। তাই সেঞ্চুরির পর নিজের দেড়শও পূর্ণ করেন মোমিনুল। ক্যারিয়ারের তৃতীয়বারের মত দেড়শ রানের কোটা স্পর্শ করলেন মোমিনুল। দু’জনের ব্যাটিং দৃঢ়তায় বাংলাদেশের দলীয় স্কোর তিনশর কাছাকাছিও পৌঁছে যায়। এই জুটিকে দিয়েই দিন শেষ করার স্বপ্ন দেখছিলো টাইগাররা। কিন্তু ৮৬তম ওভারের চতুর্থ বলে দলীয় ২৯২ রানে বিদায় নেন মোমিনুল।
জিম্বাবুয়ের তেন্ডাই চাতারার বলে পয়েন্টে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন মোমিনুল। ততক্ষণে মিরপুরের এই ভেন্যুতে বাংলাদেশের পক্ষে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের মালিক হয়ে যান মোমিনুল। ১৯টি চারে ২৪৭ বলে ১৬১ রান করেন মোমিনুল। এটি তার ক্যারিয়ারের তৃতীয় সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রান। মুশফিকের সাথে চতুর্থ উইকেটে ৪৪৮ বলে ২৬৬ রান যোগ করেন মোমিনুল। বাংলাদেশের ইতিহাসে চতুর্থ উইকেট জুটিতে এটিই সর্বোচ্চ রান। আর সব মিলিয়ে চতুর্থ।
মোমিনুল ফিরে যাবার পর তাইজুল ইসলামকে দিনের বাকী সময় শেষ করার পথেই হাটছিলেন মুশফিক। কিন্তু ৮৯তম ওভারের শেষ বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন তাইজুল। জার্ভিসের তৃতীয় শিকার হবার আগে ৪ রান করেন তিনি। এরপর দিনের শেষ ছয় বল বিপদ ছাড়া পার করেন মুশফিক ও অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ। দিনের শেষ বলে বাই থেকে চার রান পাওয়ায় বাংলাদেশের দলীয় স্কোর ৩শ পেরিয়ে যায়। মুশফিক ৯টি চারে ২৩১ বলে ১১১ ও মাহমুদুল্লাহ শুন্য রানে অপরাজিত আছেন। জিম্বাবুয়ে জার্ভিস ৪৮ রানে ৩ উইকেট নেন।
স্কোর কার্ড :
বাংলাদেশ ইনিংস :
লিটন দাস ক মাভুতা ব জার্ভিস ৯
ইমরুল কায়েস ক চাকাবভা ব জার্ভিস ০
মোমিনুল হক ক চারি ব চাতারা ১৬১
মোহাম্মদ মিথুন ক টেইলর ব ত্রিরিপানো ০
মুশফিকুর রহিম অপরাজিত ১১১
তাইজুল ইসলাম ক চাকাবভা ব জার্ভিস ৪
মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ অপরাজিত ০
অতিরিক্ত (বা-৯, লে বা-৫, নো-৩, ও-১) ১৮
মোট (৫ উইকেট, ৯০ ওভার) ৩০৩
উইকেট পতন : ১/১৩ (ইমরুল), ২/১৬ (লিটন), ৩/২৬ (মিথুন), ৪/২৯২ (মোমিনুল), ৫/২৯৯ (তাইজুল)।
জিম্বাবুয়ে বোলিং :
কাইল জার্ভিস : ১৯-৫-৪৮-৩ (ও-১, নো-১),
তেন্ডাই চাতারা : ১৮-১০-২৮-১ (ও-১, নো-১),
ডোনাল্ড ত্রিরিপানো : ১৫-৩-৩৩-১ (নো-২),
সিকান্দার রাজা : ১২-১-৬৩-০,
সিন উইলিয়ামস : ৮-০-৩১-০,
ব্রান্ডন মাভুতা : ১৬-০-৭৯-০,
হ্যামিল্টন মাসাকাদজা : ২-০-৭-০।
সূত্র : বাসস