নিজস্ব প্রতিবেদক, জামালপুর॥
নবম শ্রেণির এক ছাত্রের পকেটে ইয়াবা দিয়ে তাকেসহ চারজনকে মাদকাসক্ত হিসেবে হাতকড়া পরিয়ে আটক করায় গ্রামবাসীর রোষানল থেকে পালিয়ে রক্ষা পেয়েছেন সরিষাবাড়ী থানার দুই এসআইসহ চারজন পুলিশ। ২৫ আগস্ট রাত সাড়ে আটটার দিকে জামালপুরের সরিষাবাড়ী পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কোনাবাড়ী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার প্রতিবাদে ওই গ্রামের বিক্ষুব্ধ তিন শতাধিক মানুষ রাত সাড়ে নয়টার দিকে বিক্ষোভ মিছিল করে ওই ঘটনার সাথে জড়িত সরিষাবাড়ী থানার দুই এসআইয়ের শাস্তির দাবি জানিয়েছে।
গ্রামবাসী সূত্রে জানা গেছে, সরিষাবাড়ী থানার এসআই আমিনুর রহমান ও এসআই আবু সামাসহ আরো দুজন কনস্টবল ২৫ আগস্ট রাত সাড়ে আটটার দিকে সরিষাবাড়ী পৌরসভার কোনাবাড়ী গ্রামে মাদকবিরোধী অভিযানে যায়। তারা সিভিল পোশাকে দুটি মোটরসাইকেলে কোনাবাড়ী গ্রামের হাবুর মোড়ে মোস্তফার মুদির দোকানে গিয়ে মামুন মিয়া নামের নবম শ্রেণির এক ছাত্রের পকেটে কয়েকটি ইয়াবা দেয়। তাকে হাতকড়া পরিয়ে আটক করা হলে বাবলু মিয়া ও মো. বাবলু নামের আরো দুই ছাত্র এবং মুদি দোকানি মো. মোস্তফা তাকে ছেড়ে দিতে বলেন। পুলিশ ওই তিনজনকেও হাতকড়া পরিয়ে সেখান থেকে নিয়ে আসার চেষ্টা করে। এ সময় স্থানীয় লোকজন নবম শ্রেণির ছাত্র মামুন মিয়া মাদকাসক্ত নয় বলে চ্যালেঞ্জ করলে পুলিশের সাথে স্থানীয়দের তর্কবিতর্ক হয়। এক পর্যায়ে সেখানে শত শত গ্রামবাসী জড়ো হতে থাকলে পুলিশ হাতকড়া খুলে দিয়ে দ্রুত মোটরসাইকেল চালিয়ে সেখান থেকে কেটে পড়েন।
পুলিশের হয়রানির শিকার নবম শ্রেণির ছাত্র মামুন মিয়া জানায়, সে মাদকাসক্ত নয়। সে স্থানীয় মোস্তফার মুদির দোকানে চা খেয়ে বাড়িতে যাওয়ার সময় পুলিশ তাকে ধরে পকেটে ইয়াবা তুলে দেয়। এক পর্যায়ে তাকে হাতকড়া পরিয়ে দেয়। মুদি দোকানি ও বাবলু নামের দুই ছাত্র এ ঘটনা দেখে ফেলায় পুলিশ তাদেরকেও আটক করে হাতকড়া পরায়।
এদিকে বিনা কারণে নবম শ্রেণির এক ছাত্রের পকেটে ইয়াবা তুলে দিয়ে তাকে আটক করার ঘটনায় বিক্ষুব্ধ তিন শতাধিক গ্রামবাসী রাত সাড়ে নয়টার দিকে ঘটনাস্থল কোনাবাড়ী গ্রাম থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলে নেতৃত্ব দেন স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোহাম্মদ আলী। মিছিলটি সরিষাবাড়ী থানা গেটের সামনে দিয়ে প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এ সময় তারা ওই দুই এসআইয়ের শাস্তির দাবিতে বিভিন্ন শ্লোগান দেয়।
বিক্ষুব্ধ গ্রামবাসী মিছিল নিয়ে সরিষাবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক উপাধ্যক্ষ মো. হারুন অর রশিদের স্থানীয় ধানাটার বাসভবনে গিয়ে তার কাছে বিচার প্রার্থনা করেন। এ সময় উপাধ্যক্ষ মো. হারুন অর রশিদ রাত ১০টার দিকে সরিষাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাজেদুর রহমান ও ওসি (তদন্ত) মোহাম্মদ মোহাব্বত কবীরকে বিষয়টি জানান। বিষয়টি জানতে পেরে থানার দুই ওসি ওই আওয়ামী লীগ নেতার বাসায় গিয়ে স্কুলছাত্র মামুনসহ চারজনের বক্তব্য শুনেন। প্রায় ঘন্টাখানেক ধরে বৈঠকের পর ওসি মো. মাজেদুর রহমান ঘটনাটি ভুল বোঝাবুঝির কারণে এমন হয়েছে বলে দাবি করেন। ভবিষ্যতে যাতে নিরিহ লোকজন আর হয়রানির শিকার না হয় সে বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করা হবে বলে ওসি গ্রামবাসীদের আশ্বস্ত করলে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
সরিষাবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক উপাধ্যক্ষ মো. হারুন অর রশিদ বাংলার চিঠি ডটকমকে বলেন, ‘বৈঠকে পুলিশের পক্ষ থেকে কোনাবাড়ীর ঘটনাটি ভুল হয়েছে বলে শিকার করা হয়েছে। ভবিষ্যতে যাতে এমন ঘটনা না ঘটে সে ব্যাপারে থানা পুলিশ সতর্কতার সাথে কাজ করবে বলে ওসি মো. মাজেদুর রহমান গ্রামবাসীদের আশ্বস্ত করেছেন। এরপর গ্রামবাসী এলাকায় ফিরে গেছে।’
সরিষাবাড়ী থানার (ওসি) মো. মাজেদুর রহমান বাংলার চিঠি ডটকমকে বলেন, ‘ভুল ইনফরমেশনের ভিত্তিতে মাদকাসক্তদের ধরতে গিয়ে কোনাবাড়ী গ্রামবাসীর সাথে একটু সমস্যা হয়েছিল। বিষয়টি গ্রামবাসীদের বোঝানোর পর তারা এলাকায় ফিরে গেছে। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে।’