দেওয়ানগঞ্জে ফসলি জমির মাটি কাটার মহোৎসব

দেওয়ানগঞ্জে ডাংধরা ইউনিয়নের চেংটিমারী সরকারপাড়া এলাকায় এভাবেই ফসলি জমি থেকে ভেকু দিয়ে মাটি কাটা হচ্ছে। ছবি: বাংলারচিঠিডটকম

বিল্লাল হোসেন মন্ডল
নিজস্ব প্রতিবেদক, দেওয়ানগঞ্জ, বাংলারচিঠিডটকম

জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জে অবৈধভাবে কৃষিজমির মাটি কেটে বিক্রির মহোৎসব চলছে। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ভেকু দিয়ে জমির উর্বর মাটি কেটে বসত বাড়ির ভিটা উচুকরণ, মার্কেট তৈরি, গর্ত ভরাট কাজে বিক্রি করছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। উপজেলা প্রশাসনের কোনো তদারকি না থাকায় মাটি ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানান এলাকাবাসী।

জানা গেছে, এ উপজেলার অধিকাংশ কৃষি তিন ফসলি জমি। এখানে সোনালি আঁশ খ্যাত পাট, পেঁয়াজ ও আমন ধান আবাদ করা হয়। কিন্তু প্রতি বছর এ উপজেলায় বিপুল পরিমাণ জমির মাটি কাটা হচ্ছে। এ কারণে দিন দিন আবাদি জমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে। কৃষকদের থেকে মাটি কিনে তা বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করে রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলা গাছে পরিণত হচ্ছেন মাটি ব্যবসায়ীরা।

স্থানীয়দের অভিযোগ, উপজেলায় কয়েকটি শক্তিশালী মাটি ব্যবসায়ী চক্র গড়ে উঠেছে। এরা দরিদ্র কৃষককে নানা প্রলোভন দেখিয়ে জমির মাটি কিনে নিচ্ছে। আবার কেউ কেউ প্রয়োজনের তাগিদে নগদ অর্থ পেতে ফসলি জমির মাটি বিক্রি করে দিচ্ছেন। ৮-১০ ফুট গভীর করে মাটি কাটার ফলে অনেক জমি ডোবায় পরিণত হয়েছে। এসব জমিতে ফসল বা মাছ চাষ করা সম্ভব হচ্ছে না। এ ছাড়া কৃষি জমি থেকে কেটে নেওয়া মাটি বিভিন্ন স্থানে সরবরাহের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে ট্রলি গাড়ি। এসব ট্রলির কারণে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত গ্রামীণ রাস্তা ঘাটে খানাখন্দ তৈরি হয়ে দ্রুত ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। এ ছাড়া ট্রলি চলাচলের কারণে আবাদি জমিও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

৪ জুন মঙ্গলবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ডাংধরা, চর আমখাওয়া, পাররামরামপুর, হাতীভাঙ্গা, বাহাদুরাবাদসহ চারটি ইউনিয়নের প্রায় ১০টি স্থান থেকে ভেকু দিয়ে ফসলি জমির মাটি কাটার হিড়িক চলছে। পাথরের চর চেংটিমারী সরকারপাড়া আজিবর রহমান, চর আমখাওয়া ইউনিয়নের লংকার চর সাবেক ইউপি সদস্য মতিউর রহমান, পাররামরামপুর ইউনিয়নের চেংটিমারী এলাকার মিলন মিয়া নামে মাটি ব্যবসায়ীরা ভেকু দিয়ে ফসলি জমির মাটি কাটছেন। কেটে নেওয়া মাটি ট্রলিতে করে বিভিন্ন বাড়ি, মার্কেটে পাঠানো হচ্ছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আলমগীর আজাদ জানান, ফসলি জমি থেকে টপ সয়েল কেটে নেয়ায় জমির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে। এ বিষয়ে আমার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ জাহিদ হাসান প্রিন্স জানান, ফসলি জমি থেকে অবৈধভাবে মাটি কেটে নেয়া চক্রের বিরুদ্ধে প্রশাসনের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।